বিকৃতভাবে কোরআনের আয়াতকে উপস্থাপন করে বই লিখে তা প্রচার করার অভিযোগে প্রথম আলোর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আনিসুল হককে লিগ্যাল নোটিশ। সেইসঙ্গে আগামী ১০ দিনের মধ্যে বাজার থেকে সেই বই তুলে নিয়ে প্রকাশ্য গণমাধ্যমের সামনে এসে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
মো. সাখাওয়াত হোসেনের আইনজীবী লিগ্যাল সলিউসন চ্যাম্বার (এলএসসি) এর স্বত্ত্বাধিকারী বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আল মামুন রাসেলের মাধ্যমে এই নোটিশ পাঠানো হয়।
নোটিশে ভবিষ্যতে এমন কোনো বই লিখে তা প্রকাশ করা এবং সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রচার ও প্রকাশ করা থেকে সম্পূর্ণরূপে বিরত থাকার জন্য তাকে বলা হয়েছে।
নোটিশে উল্লেখ করা হয় যে, লেখক আনিসুল হক তার লিখিত “গদ্যকার্টুন” নামক বইতে “ছহি রাজাকারনামা” একটি অধ্যায় রাখেন। বাংলাদেশের ৯০ শতাংশ মুসলিমের ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআন আর বিভিন্ন সুরার আয়াতের অর্থ সরাসরি বিদ্রুপাত্মক করেছেন উক্ত লেখক এবং উক্ত রচনায় পবিত্র কোরআনের আয়াতের অর্থ বিকৃত করে ব্যঙ্গাত্মক অর্থ দিয়েছেন যেমন, পবিত্র কুরআনের প্রথম সুরার প্রথম আয়াতে বলা হয়েছে -‘সমস্ত প্রশংসা জগতের প্রতিপালক আল্লাহর’। লেখক উক্ত রচনায় লিখেছেন, ‘সমস্ত প্রশংসা রাজাকারগণের’। সুরা ফাতেহার আরেকটি আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমরা কেবল তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই কাছে সাহায্য চাই।’ আনিসুল হক উক্ত আয়াতকে ব্যঙ্গ ও বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তোমরা রাজাকারের প্রশংসা করো, আর রাজাকারদের সাহায্য প্রার্থনা করো।’ পবিত্র কুরআনের সুরা দুহার ৪ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নিঃসন্দেহে তোমাদের জন্য পরবর্তী যুগ পূর্ববর্তী যুগের চেয়ে ভালো।’ আনিসুল হক উক্ত আয়াতকে বিদ্রূপ করে লিখেছেন, ‘নিশ্চয়ই রাজাকারগণের জন্য অতীতের চাইতে ভবিষ্যেতক উত্তম করিয়া সৃজন করা হইয়াছে।’ পবিত্র কুরআনের সুরা নিসার ৩ নং আয়াতে বলা হয়, ‘আর তোমরা ভয় কর যে, ইয়াতিম মেয়েদের হক যথাযথভাবে পূর্ণ করতে পারবে না; তবে সেসব মেয়েদের মধ্য থেকে যাদের ভালো লাগে বিয়ে করে নাও দুই, তিন বা চারটি পর্যন্ত। আর যদি এরূপ আশঙ্কা কর যে, তাদের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত আচরণ বজায় রাখতে পারবে না, তবে একজনকেই (বিবাহ কর), অথবা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসীদের (বিবাহ কর)।’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিপরীতে মুসলিম জাতিকে হেয় করে ও পবিত্র গ্রন্থকে ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, ‘সেই ব্যক্তিই উত্তম রাজাকার, যে বিবাহ করিবে, একটি, দুইটি, তিনটি, চারটি, যেরূপ সে ইচ্ছে করে আর তাহার জন্য বৈধ করা হইয়াছে ডান হাতের অধিকারভুক্ত দাসীদের, আর তাহারা ভোগ করিতে পারিবে বাঙালি রমণীগণকে, অপিচ তাহাদের সহিত আদল করিবার দরকার হইবে না। স্মরণ রাখিও, মালেগণিমতগণের সহিত মিলিত হইবার পথে কোনোরূপ বাধা থাকিলো না।’ পবিত্র কুরআনের সুরা মুরসালাতের ১৬ নম্বর আয়াতে বলা হয়, ‘আমি কি আগের লোকদের (অবিশ্বাসী জালেম) ধ্বংস করিনি?’ আনিসুল হক এ আয়াত ব্যঙ্গ করে লিখছেন যে, ‘গ্যালিলিও নামের এক পাপিষ্ঠ অতীতে সত্য অস্বীকার করিয়াছিল এবং সে কি প্রাপ্ত হয় নাই চরম শাস্তি।’ পবিত্র কুরআনের সুরা নাবার ৩১-৩৪ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘অপরদিকে পরহেজগার লোকদের জন্য রয়েছে চরম সাফল্য। (তা হচ্ছে) বাগবাগিচা, আঙ্গুর (ফলের সমারোহ), (আরো আছে) পূর্ণ যৌবনা সমবয়সী সুন্দরী তরুণী।’ আনিসুল হক এ আয়াতের বিকৃত করে লিখেছেন, ‘আর তাহাদের জন্য সুসংবাদ। তাহাদের জন্য অপেক্ষা করিতেছে রাষ্ট্রের শীর্ষপদ আর অনন্ত যৌবনা নারী আর অনন্ত যৌবন তরুণ। কে আছে, যে উত্তম সন্দেশ, মসৃণ তলদেশ ও তৈলাক্ত গুহ্যদেশ পছন্দ করে না।’ এভাবেই কুরআনের আয়াতকে বিকৃত করে আনিসুল হক আরও লিখেছেন যে, ‘তোমরা তোমাদের প্রভু পাকিস্তানের প্রশংসা কর। নিশ্চয় তোমাদের প্রভু পাকিস্তানীরা ক্ষমতাশীল।’ আনিসুল হক তার ‘ছহি রাজাকারনামা’ রচনাটির প্রতিটি বাক্যেই পবিত্র কুরআনের বাকভঙ্গি ও কুরআনের বাংলা অনুবাদের ক্লাসিক ভাষা ব্যবহার করে কুরআনের আয়াতকে ব্যঙ্গ ও বিকৃত করেছেন বলে লিগ্যাল নোটিশে উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে আরও বলা হয়, দেশের ৯০ শতাংশ মুসলিমদের হেয় প্রতিপন্ন করার মানসে মুসলিম জাতির ও বিশ্বের শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ পবিত্র কোরআনের আয়াত নিয়ে ব্যঙ্গ করে আয়াতের অর্থকে বিকৃত করে আনিসুল হকের রচিত ও প্রকাশিত গদ্যকার্টুন বইয়ের ‘ছহি রাজাকারনামা‘ রচনায় মুসলিম জাতিকে কটুক্তি করে পবিত্র কোরআনকে অবমাননা করে গোটা মুসলিম জাতির অনুভূতিতে কঠোর আঘাত করা হয়েছে। যেখানে লেখক এবং প্রকাশক উক্ত রচনায় পবিত্র কোরআনের আয়াতগুলোকে বিকৃত না করে ভিন্নভাবে উপস্থাপন করতে পারতো, কিন্তু লেখক এবং প্রকাশক তা না করে, দেশের বৃহত্তর গোষ্ঠীকে হেয় করে পবিত্র গ্রন্থকে অবমাননা করে গোটা জাতির অনুভূতিতে আঘাত হানার জন্য উক্তভাবে রচিত ও প্রকাশিত বইটি প্রচার ও প্রসার করেছে।
লিগ্যাল নোটিশে উক্ত বইটির প্রচার-প্রসারকে বাংলাদেশ দণ্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯৫, ২৯৫ক ও ৫০০ ধারার অধীন শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে উল্লেখ করেছেন সুপ্রীম কোর্টের এ আইনজীবী।
মহাগ্রন্থ আল কোরআন অসংখ্য মুসলিমের আবেগের জায়গা। সেই আবেগের প্রতি আনিসুল হক এবং তার প্রকাশক খুব একটা যত্নশীল হননি বরং তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্নভাবে ব্যঙ্গাত্মকভাবে বিকৃতি ঘটিয়ে চলেছেন বলে নোটিশে উল্লেখ করা হয়।