জাতীয়
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে খেলাফত মজলিসের ৩৬ দিনের কর্মসূচি

এমদাদুল্লাহ্, বজ্রধ্বনি:
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উপলক্ষে ১ জুলাই থেকে খেলাফত মজলিসের ৩৬ দিনব্যাপী কর্মসূচি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার (১ জুলাই) কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় এক প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে কর্মসূচি ঘোষণা করেন খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।
এ সময়ে উপস্থিত ছিলেন নায়েবে মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক আবদুল জলিল, কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ সম্পাদক জহিরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক প্রকৌশলী আবদুল হাফিজ খসরু, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণ সভাপতি অধ্যাপক মাওলানা আজিজুল হক, মহানগরী উত্তর সভাপতি মাওলানা সাইফুদ্দিন আহমদ খন্দকার, আবুল হোসেন, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম প্রমুখ নেতৃবৃন্দ।
প্রেস ব্রিফিংয়ের লিখিত বক্তব্যে ড. আহমদ আবদুল কাদের বলেন, বিগত ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার এক অভূতপূর্ব অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে জাতির ঘাড়ে চেপে বসা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন এক পর্যায়ে ফ্যাসিবাদ বিরোধী প্রচণ্ড গণআন্দোলনে রূপ নেয়। পতিত শেখ হাসিনা সরকারের পুলিশ বাহিনী ও আওয়ামী যুবলীগ-ছাত্রলীগ ক্যাডারদের ন্যাক্কারজনক হামলা, গুলিতে আন্দোলনকারী নিরস্ত্র সাধারণ ছাত্র-জনতার রক্ত ঝরতে শুরু করে। ১৬ জুলাই রংপুরে শহীদ আবু সাঈদের উপর পুলিশের গুলির দৃশ্য বিবেকবান মানুষকে প্রচন্ডভাবে ব্যথিত করে। আন্দোলন আরো তীব্র আকার ধারণ করে। সারাদেশে শহীদ ও আহতের সংখ্যাও দ্রুত বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে ৫ আগস্ট আহুত মার্চ ফর ঢাকা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে পতন ঘটে স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের।
লাখো ছাত্র- জনতার সাথে একটি জনপ্রতিনিধিত্বশীল সংগঠন হিসেবে খেলাফত মজলিস ও এর সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস, ইসলামী যুব মজলিস, শ্রমিক মজলিসও শুরু থেকেই এ আন্দোলনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। আন্দোলনে প্রায় ২ হাজার আন্দোলনকারী শহীদ হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। শহীদ ও আহতদের তালিকায় রয়েছে স্কুল, কলেজ, মাদরাসার ছাত্র, ছাত্রী, শিক্ষক, নারী, শিশু, শ্রমিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ অসংখ্য সাধারণ মানুষ। আমরা সকল শহীদদের মাগফিরাত ও আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।
প্রকৃতপক্ষে ১লা জুলাই থেকে শুরু হওয়া এ আন্দোলন ৩৬ দিনের মাথায় ৫ আগস্ট তথা ৩৬ জুলাই স্বৈরাচারী হাসিনা ও তার দোসরদের পলায়নের মাধ্যমে সফলতায় পৌঁছে। এ দিনটি বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। ফ্যাসিবাদ বিরোধী এ অভ্যুত্থানের ঐক্যের চেতনাকে অটুট রাখতে এ আন্দোলন। আন্দোলনে ছাত্র- জনতার ত্যাগ ও কুরবানিকে স্মরণীয় রাখতে যথাযোগ্য মর্যাদায় জুলাই গণ অভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যেই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৫ আগস্ট সরকারি ছুটি ঘোষণা করেছে। খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে যথাযথ গুরুত্ব সহকারে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম বার্ষিকী উদযাপন-২০২৫ উপলক্ষে খেলাফত মজলিসের পক্ষ থেকে সারা দেশে ৩৬ দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এসব কর্মসূচি সফলে ইতোমধ্যেই সারাদেশের সকল জেলা- মহানগরী শাখাকে সার্কুলারের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রেরণ করা হয়েছে।
খেলাফত মজলিস ঘোষিত কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে:
১। মসজিদ- মাদরাসাসহ সকল প্রতিষ্ঠান ও দলীয় কার্যালয়ে জুলাই গণ অভ্যুত্থানের শহীদদের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মাহফিল আয়োজন করা।
২। শহীদদের কবর জিয়ারত, শহীদ পরিবারের সদস্যদের সাথে সাক্ষাৎ, আহতদের খোঁজখবর নেয়া ও সম্ভাব্য সহযোগিতা করা।
৩। ফ্যাসিবাদী খুনীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত ও কাঙ্খিত সংস্কার পূর্বক দ্রুত জুলাই সনদ ঘোষণা ও একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়ে সারাদেশে গণ জমায়েত, আলোচনা সভা, গণসংযোগ ও মতবিনিময় ও মিছিলের আয়োজন করা।
৪। শিশু-কিশোর-ছাত্র সমাবেশ করা। ২৪’র জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে কুইজ, চিত্রাঙ্কণ প্রতিযোগিতা, দেয়ালিকা প্রকাশ, আন্দোলনের ভিডিও প্রদর্শণী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা।
৫। ১৬ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ আবু সাঈদের শাহাদাৎ দিবসে দেশব্যাপী বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠান।
৬। বৃক্ষ রোপণ কর্মসূচি, পরিচ্ছন্নতা অভিযান, ব্লাড গ্রুপিং ও রক্তদান কর্মসূচি পালন করা।
৭। পোস্টার, লিফলেট, ব্যানার, ফেস্টুন প্রকাশ ও দেয়াল লিখন করা।
৮। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতন দিবসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে গণ সমাবেশ/ আলোচনা সভা/ র্যালীর আয়োজন করা।
১ জুলাই থেকে কর্মসূচি শুরু হলো। এসব কর্মসূচি ঐতিহাসিক জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ফ্যাসিবাদ বিরোধী চেতনাকে জাগ্রত রাখবে আশা করি। ঐক্যবদ্ধভাবে এসব কর্মসূচি সফলে সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানান খেলাফত মজলিস মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।