ঢাকা
ঢাকা কলেজের সামনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী হামলায় যুবক নিহত

রাজধানীর ঢাকা কলেজের সামনে সংঘর্ষে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসী হামলায় এক যুবক নিহত হয়েছেন। তাঁর পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পুলিশ বলছে, যুবকের বয়স আনুমানিক ২৫ বছর।
মঙ্গলবার বিকেল সোয়া ৫ টার দিকে গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করে এক পথচারী ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (ঢামেক) জরুরি বিভাগে নিয়ে আসে। পরে পরীক্ষা নিরীক্ষা শেষে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন, ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া। তিনি বলেন, ‘গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তাঁর কানের নিচে মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই পথচারীরা তাঁর নাম পরিচয় বলতে পারেননি।’
অজ্ঞাত ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসা পথচারী আকাশ মাহমুদ বলেন, ‘গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা কলেজের বিপরীত পাশে পেট্রোল পাম্পের সামনে পড়ে থাকতে দেখি। পরে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসলে চিকিৎসক জানায় তিনি আর বেঁচে নেই। তাঁর ঘাড়ে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।’
এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে মঙ্গলবার সকাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও ঢাকা কলেজ এলাকায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত প্রায় ৮৫ আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসার জন্য এসেছেন।
এদের মধ্যে অন্তত ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গুলিবিদ্ধ শিক্ষার্থীরা হলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শুভ, রাতুল, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী সাফিন এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাসিম,অনিক ফেরদৌস।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের এলাকায় কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেলে মোট ৮৫ জন আহত হয়ে ঢামেক হাসপাতালে এসেছে। এদের মধ্যে ৬ জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
এর আগে চট্টগ্রামের মুরাদপুরে গুলিবিদ্ধ হয়ে ফারুক নামের এক পথচারী ও ওয়াসিম নামের এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। তবে এর মধ্যে পথচারী নিহতের খবরটি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) কমিশনার সাইফুল ইসলাম।
সিএমপি কমিশনার সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘মুরাদপুরে একজনের মৃত্যুর খবর পেয়েছি। আমরা ডিটেইলস নিচ্ছি। পথচারী। তার শরীরে আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। আমাদের অফিসার গেছে দেখতে। একজন পথচারী আহত আছে। এটা এখনো কনফার্ম না। আঘাতে মারা গেছে এমন কিছু না। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তার শরীরের আঘাতের কোনো চিহ্ন নেই। কোথাকার ঘটনা এটা এখনো জানতে পারিনি।’
শিক্ষার্থী ওয়াসিমের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে তিনি বলেন, নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন নেই।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই কোটা সংস্কারের দাবি ও আন্দোলনরতদের ওপর হামলার প্রতিবাদে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে অবস্থান নিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে রাজধানীর সায়েন্সল্যাব ও বাড্ডায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়েছে। অন্যদিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের একটি দল মহাখালির রেললাইন অবরোধ করলে সেখানে পুলিশের সঙ্গে তাদের ধাওয়া পাল্টা–ধাওয়া হয়।
সোমবারও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এতে অন্তত ৩০০ জন আহত হন। সোমবার মধ্য রাতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে।
এর মধ্যে রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) এক শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরাও এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, নিহত ওই শিক্ষার্থীর নাম আবু সাঈদ। তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী।