অপরাধশ্রীমঙ্গল উপজেলা
শ্রীমঙ্গলে সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে লাখ টাকা আত্মসাৎ।

অন্তর মিয়া, শ্রীমঙ্গল থানা প্রতিনিধি :
শ্রীমঙ্গল সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে নগদ অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন মেম্বারের বিরুদ্ধে। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণের অধিকার, শেখ হাসিনার উপহার এই স্লোগানে মৌলভীবাজারসহ সারা দেশে ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে সরকার। সে সময় সরকারি ঘর দেওয়ার কথা বলে ভূমিহীন ১০টি হতদরিদ্র পরিবারের কাছ থেকে ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ৫ নং কালাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার মিরাশ মিয়ার বিরুদ্ধে। প্রায় চার বছর আগে ঘর দেওয়ার কথা বলে সাবেক এই মেম্বার তার ভাগিনা রিপনের মাধ্যমে এ টাকা নেন। এরপর বছরের পর বছর চলে গেলেও এদের কাউকেই তিনি সরকারি ঘর দিতে পারেননি। এখন ঘর দেওয়া দূরের কথা টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না। টাকা ফেরত চাইতে গেলে উল্টো টাকা নেয়ার বিষয়টি এখন অস্বীকার করে গালিগালাজ করেন মিরাশ মেম্বার, এমন অভিযোগ ভুক্তভোগী দশ ভূমিহীন হতদরিদ্র পরিবারের।
তাঁরা বলেন আমরা গরীব মানুষ কিস্তি নিয়ে তাকে টাকা দিয়েছি এখন অন্যের বাড়ি গৃহ কর্মীর কাজ করে সেই ঋণ পরিশোধ করছি।
ভূমিহীন ভুক্তভোগী মো: নাঈমুল হক বলেন মিরাশ মেম্বারকে ২০ হাজার টাকা দিলে ভূমিহীনের ঘর পাবেন, তাই আমরা যদি ২০ হাজার টাকা ঘুষ দিলে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষ্যে ঘর পাবো। আমাদের জানা মতে ১০ জন টাকা দিয়েছেন। কিন্তু প্রায় চার বছর অতিবাহিত হওয়ার পরও মিরাশ মেম্বার কাউকে ঘর দিতে পারেনি। এখন টাকা ফেরৎ দেওয়ার বিষয় টালবাহানা করছে।
ভূমিহীন ভুক্তভোগী মায়ারুন বিবি বলেন আমরা ভূমিহীন গরীব মানুষ। সরকারি ঘর দিবে বলে জিয়াউর রহমানকে আমি টাকা দিছি।আর জিয়াউর রহমান দিয়েছে মেম্বারের কাছে।এখন আমি ঘরও পাচ্ছি না,টাকাও পাচ্ছি না। আমার ঘর লাগবে না,টাকা টা যদি পেয়ে যেতাম তাহলে ভালো হতো।আমি গরিব মানুষ,কাজ করে খাই, আমার আল্লাহ ছাড়া কেউ নেই। ব্যাংক থেকে ক্ষুদ্র ঋন কৃস্তি নিয়ে টাকা দিয়েছি। অন্যের বাড়ি গৃহ কর্মীর কাজ করে ব্যাক ঋন শোধ করেছি।
ভূমিহীন ভুক্তভোগী জবা বেগম বলেন প্রকল্প ঘর যারা পেয়েছে তাদেরকে গিয়ে বললাম যে আমাদের তো ঘর পাওয়ার কথা ,তোমরা তো ঘর পেয়েছো আমরা তো পাইনি। তোমরা কি টাকা-পয়সা দিয়ে নিয়েছো।তখন তারা বলল যে,না সরকারি ঘরে কোনো টাকা লাগে না,এটা সরকারি, প্রধানমন্ত্রীর উপহার।তখন আমরা যাকে টাকা দিয়েছি জিয়াউর রহমান তাকে ধরলাম, জিয়াউর রহমান আবার যে মেম্বারকে সহ ধরে বললাম যে,” প্রকল্প ঘরে তো কোনো টাকা লাগে না,আপনারা তো ঘর দিবেন বলে আমাদের কাছ থেকে টাকা নিলেন ,এখন ঘর দিচ্ছেন না।ঘর না দিলে টাকা ফেরত দেন।”
জিয়া মিয়া বলেন, আমার নামে যে অভিযোগ তুলেছেন,যে আমি টাকা এনে মেম্বারের কাছে দিয়েছি।আমি ওদেরকে এনে সামনাসামনি একসাথে বসে মেম্বারের কাছে টাকা দিয়েছি। এক টেবিলে বসে তারা টাকা দিয়েছে আমার কাছে,আমি দিয়েছি মেম্বারের কাছে। পাঁচটি ঘরে বাইশ হাজার টাকা করে। সাবেক মেম্বারের কাছে মুজিব নগর ঘরের জন্য টাকা দিয়েছি। এক সময় ভোক্তভুগীরা মিরাশ মেম্বারের সাথে উত্তেজিত হয়ে তর্কবিতর্কে জড়িয়ে পড়ে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মিরাশ মেম্বার এর ভাগিনা রিপনের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
এব্যাপারে ৫ নং কালাপুর ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার মিরাশ বলেন, এ বিষয়ে মিরাশ মেম্বার এর সাথে কথা বলতে গেলে ঘর দেওয়ার কথা বলে তিনি টাকা নেননি তবে তার ভাগিনা রিপন টাকা নিয়েছে স্বিকার করে ক্যামেরার সামনেই ভুক্তভোগীদের ওপর চড়াও হন সাবেক এই মেম্বার। এক পর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি। আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের জন্য আমাকে কোন টাকা দেওয়া হয়নি এগুলো সম্পূর্ণ মিথ্যে।
মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক ড. উর্মি বিনতে সালাম বলেন শ্রীমঙ্গলে শ্রীমঙ্গলে মুজিব শতবর্ষ আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের কথা বলতেছেন আশ্রয়ন প্রকল্পের ঘরের জন্য টাকা নেওয়া হয়েছে। ঘর দেওয়ার নাম করে কেউ টাকা নেয়ার অভিযোগ পেলে সেটি তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।