জাতীয়
নিম্নচাপ মোড় নিয়েছে ভারতে, কাল থেকে কমতে পারে বৃষ্টি
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্মচাপটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে চলে গেছে। কিন্তু এর প্রভাব এখনো বাংলাদেশের ওপরে থাকায় রাজধানী ঢাকাসহ বেশ কয়েকটি স্থানে বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা কমতে পারে। এদিকে ভারী বর্ষণের কারণে ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নদ-নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, চলতি মাস জুড়েই এমন বৃষ্টিপাত থাকতে পারে। তবে নিম্নচাপ সৃষ্টি না হলে বৃষ্টির প্রবণতা কম থাকবে।
আবহাওয়ার সবশেষ বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্মচাপটি স্থল নিম্মচাপে পরিণত হয়ে যশোর ও খুলনা অঞ্চলে অবস্থান করে শনিবার থেকেই। এটি বর্তমানে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দিকে চলে যাচ্ছে।
সংস্থাটি বলছে, নিম্মচাপটি ধীরে ধীরে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে চলে গেছে। তবে এর গতি ধীর হওয়ায় এর প্রভাবে এখনো বাংলাদেশে বৃষ্টি হচ্ছে। রোববারও (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানী ঢাকা, বরিশাল, খুলনা ও রাজশাহী বিভাগে সবচেয়ে বেশী বৃষ্টিপাত হয়েছে। কোথাও কোথাও অস্থায়ী জলাবদ্ধতারও সৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে রোববার (১৫ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা পর্যন্ত সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয় পটুয়াখালীতে ২২৩ মিলিমিটার। আর এ সময় রাজধানী ঢাকায় রেকর্ড করা হয় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টি।
আবহাওয়াবিদ ড.মু.আবুল কালাম মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপের সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে এটি সুস্পষ্ট লঘুচাপ এবং নিম্মচাপে পরিণত হয়ে আস্তে আস্তে সে ভোলা বরিশাল, যশোর সাতক্ষীরা হয়ে গাঙ্গীয় পশ্চিমবঙ্গ বরাবর অবস্থান করছিলো। এর প্রভাবে ঢাকাসহ উপকূলীয় জেলাগুলোতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হয়েছে।
তিনি বলেন, স্থল নিম্নচাপ তৈরি হয় যদি তাহলে প্রচুর পরিমাণ মেঘমালা তৈরি হয়। এমন পরিস্থিতিতে তিন থেকে পাচ দিন পর্যন্ত বৃষ্টিপাত দীর্ঘায়িত হয়। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) থেকে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা কমে যাবে। বৃষ্টি থাকবে তবে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়তো হবে না।
তিনি আরো বলেন নিম্নচাপটি পশ্চিমবঙ্গে চলে গেলেও এর প্রভাব কিন্তু খুলনা, বরিশাল ঢাকা, রাজশাহীতে ব্যাপক বৃষ্টিপাত হচ্ছে। ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে কিন্তু বৃষ্টিপাতের পরিমান কমে গেছে। এটি মধ্যপ্রদেশ পর্যন্ত যাবে। তখন বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কমবে।
এদিকে, ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের উপকূলীয়/জোয়ার-ভাটা প্রবণ নদীসমূহের পানি সমতল বাড়ছে বলে জানিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। প্রতিষ্ঠানটির দৈনিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি গভীর স্থল নিম্নচাপ অবস্থান করছে এবং আগামী ২৪ ঘণ্টায় উপকূলীয় অঞ্চল ও দেশের মধ্যাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের (৪৪ থেকে ৮৮ মিলিমিটার ) পূর্বাভাস রয়েছে।
এর ফলে এই সময় ঢাকা, বরিশাল ও খুলনা বিভাগের নণীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে। তবে চট্টগ্রাম বিভাগের ফেনী, সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে অপরদিকে মুহরী, হালদা ও গোমতী নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান আবহাওয়া সংস্থাসমূহের পূর্বাভাসের তথ্য তুলে ধরে জানিয়েছেন, দেশে এবং উজানে ভারী বৃষ্টিপাতের প্রবণতার কমে আসায়, আগামী ৩ দিন চট্টগ্রাম বিভাগের নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
এছাড়া ব্রহ্মপুত্র নদের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে যমুনা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী পাঁচ দিন পর্যন্ত ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদ-নদীর পানি সমতল ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে। অন্যদিকে গঙ্গা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল আছে, অপরদিকে পদ্মা নদীর পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী দুই দিন পর্যন্ত গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি সমতল স্থিতিশীল থাকতে পারে ও পরবর্তি তিন দিন পানি সমতল বৃদ্ধি পেতে পারে, তবে বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে। আর রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন পর্যন্ত এসকল নদীসমূহের পানি সমতল ধীর গতিতে হ্রাস পেতে পারে।
এছাড়া সিলেট বিভাগের সুরমা ও কুশিয়ারা নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পাচ্ছে এবং অন্যান্য প্রধান নদীসমূহ মনু ও খোয়াই ইত্যাদির পানি সমতল স্থিতিশীল আছে এবং বিপদসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী তিন দিন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের প্রধান নদীসমূহের পানি সমতল হ্রাস পেতে পারে।
উল্লেখ্য, গত ২০ আগস্ট থেকে দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ব্যাপক বৃষ্টি হয়। এরসঙ্গে ছিলো উজানের পাহাড়ি ঢল। এই দুইয়ের প্রভাবে ওইসকল অঞ্চলের ১১ জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়।