বিজ্ঞানমতামতস্বাস্থ্য বার্তা

ফেসবুকে স্লো-পয়জনিং-মেহেদী হাসান

ফেসবুকের যে ফিচার গুলোর যথেচ্ছ ব্যবহারে আমাদের ইমোশনে মারাত্মক প্রভাব পড়ছে সেগুলো নিয়ে আজ আমরা আলোচনা করবো।

প্রথমেই বলে রাখা দরকার, ফেসবুক ভাল নাকি মন্দ সে সব বিতর্কে যাবোনা, ফেসবুকের খারাপ দিকগুলো তুলেধরার উদ্দেশ্যেও কিছু বলবোনা, প্রসঙ্গটা শুধুমাত্র “ফেসবুকে আমরা কি এমন করি যার কারনে আমরা নিজেরাই নিজেদের মানসিক ক্ষতি করে ফেলছি”

১। #ইনফিনিটি_লুপঃ
=====================
আমরা যারা ফেসবুকের ভিডিও গুলো দেখা শুরু করি তখন সময় যে কিভাবে চলে যায় তা টেরি পাইনা, একের পর এক ভিডিও দেখতেই থাকি, এইটাই হচ্ছে ফেসবুকের ইনফিনিটি লুপ/ফাঁদ। আপনার আমার এই সাইকোলজিকে কাজে লাগিয়েই টিকটক/লাইকির মতন এপস বিজন্যাস মডেল বানিয়েছে।

কেন আমরা ভিডিও দেখা শুরু করলে দেখতেই থাকি?
=>
এর প্রধান কারন গুলো হলো আমাদের “লোনলিন্যাস” “অলসতা” “বেকার থাকা” “জীবনে বিনোদনের অভাব” “সময় কাটেনা” এর জন্য।

এতে ক্ষতি কি?
———————-
১। সময় অপচয় ও পরে বুঝতে পেরে হতাশা/উদ্বেগ।

২। নেশা তৈরি হওয়া, ফেসবুকে না আসলে অস্থির লাগা।

৩। বেশি কিছু ভিডিওতে একের পর এক টিকটকের ভিডিও গুলো সাজানো হয় এই টাইপের ভিডিও দেখলে কাজে “মনোযোগ” কমে যায়।

৪। “ফেইল ভিডিও” যেগুলোতে মানুষ পড়ে গেলে/ এক্সিডেন্ট করলে/ বিব্রতকর পরিস্থিতির ভিডিও সাজানো থাকে যেগুলো দেখে আমাদের হাসিপায়। যা খুব বাজে প্র্যাকটিস, অন্যের ব্যার্থতা দেখে হাসাটা ভুল আচরন।

৫। প্রডাক্টিভিটি কমে যায়, অলসতা বেড়ে যায়।

তাহলে কি করা উচিৎ?
=================
১। সময় কাটানোর জন্য/ বিনোদনের জন্য অন্য কোনো উপায় খুজে বের করুন। মুভি/ডকুমেন্টারি/ওয়েব-সিরিজ/বই/ট্যুর ইত্যাদি ইত্যাদি।

২। নিজেকে লোনলি মনে হলে এই পোষ্টটি পড়তে পারেনঃ

একাকিত্বকে দেখে নিন এক হাত-মেহেদী হাসান

৩। অলসতা থেকে বের হবার জন্য/ আরো প্রডাক্টিভ হবার জন্য এই পোষ্টের এলগরিদমটা ফলো করতে পারেনঃ

বয়েলিং ফ্রগ সিন্ড্রোম অতিরিক্ত সহ্য করার প্রবনতা-মেহেদী হাসান

২। #জেলাসি_হিংসাঃ
=========================
ফেসবুকে আমরা কমবেশি সবাই জীবনের নানান ধরনের মোমেন্ট শেয়ার করি, যার বেশিরভাগই হয় আমাদের সুখের/সাকসেস/ভাল দিক গুলোর। অন্যের হাসিখুশি/সাকসের দেখে আমাদের কারো কারো জেলাসি হতে পারে, একঅর্থে এটি খুবই খারাপ দিক।

কেন জেলাস হই?
————————–
আমাদের মস্তিষ্ক তুলনা (কম্পেয়ার) করার জন্য কমবেশি ট্রেইন হয়ে আছে। কারো কিছু দেখলেই সেটি অটোমেটিক নিজেদের সাথে তুলনা হয়ে যায়, আর এ থেকেই জেলাসি শুরু হয়।

কি ক্ষতি হয়?
——————
১। অন্যের প্রতি হিংসা আমাদের মধ্যে সম্পর্ক নষ্ট করে
২। হতাশার সৃষ্টি হয়।
৩। নিজেদেরকে তাদের চেয়ে সেরা প্রমাণ করতে আমরা ভুল পথে চালনা হই, যেমন নিজের ছবিকে “তার” চেয়ে বেশি লাইক পাওয়াতে উলটাপালটা পোজ/পোষাক/ফিল্টার ইউজ করি।

৪। ফেইক লাইফ লিড করার ইচ্ছে তৈরি হয়, অর্থাৎ নিজে যা নই তার চেয়ে বেশি ভালো দিক পাব্লিকলি শেয়ার করি যাতে “সেও” জেলাস হয়।

কি করা উচিৎ?
———————-
শুধু বুঝেনিন তারা তাদের বেস্টটুকু একটু ওভার এট্রাকটিভ করে পাবলিকলি শেয়ার করে, মুদ্রার অন্যপিঠ দেখায় না, কাজেই তাকে দেখে হিংসার কিছু নেই সেও আপনার মতই।

হিংসা না করে সাদুবাদ দিন, প্রশংসা করুন।

যারা ব্রেকাপের পর এক্সের ফেসবুক স্টক করেকরে হিংসেতে জ্বলে পুড়ে যাচ্ছেন তারা গ্রুপের এই পোষ্ট পরতে পারেন 😀
https://www.facebook.com/groups/psychological.mind.effect/permalink/3847410731945296

৩। #হাহা_রিয়েক্ট
===================
“হাহা” রিয়েক্ট আবার খারাপ হয় কি করে তাইনা? আসলে রিয়েক্টটা ভালো তবে আমরা এটি যেভাবে ব্যবহার করি সেটি অনেক খারাপ।

কিভাবে ব্যবহার করা খারাপ হলো?
“হাহা” রিয়েক্ট দিয়ে অন্যকে ছোটো করা অপমান করা কিংবা অন্যের বিশ্বাসকে ছোট করাটাই এর খারাপ ব্যবহার।

শুধু অপমানিত হবার ভয়ে দেশের ৮০% মানসিক কষ্টে থাকা মানুষ গুলো তাদের সমস্যার কথা জানাতে লজ্জা পায়।

কি করা উচিৎ?

১। আপনার হাসি পেলে হাসুন প্রান খুলে, যার সমস্যা সে দেখছে না,
“হাহা” রিয়েক্ট ও অপমানজনক কমেন্ট থেকে বিরত থাকুন।
২। দ্বিমত হলে আপনার যুক্তি তুলে ধরুন নয়ত ইগনোর করুন।

ফেসবুকে দেখলাম এক কলেজ স্টুডেন্ট বহুতল ভবন থেকে লাফ দিয়ে সুইসাইড করলো। সেখানেও “হাহা”?
মানছি সামাজিক বা ধর্মিয় কোনো দিক থেকেই সুইসাইড গ্রহনযোগ্য/প্রত্যাশীত নয়, তাই বলে আমাদের “হাহা” কতটা গ্রহন যোগ্য ?

সকলে ভালো থাকুন, অন্যকেও ভালো রাখুন 😊

© হাসান মুহাম্মাদ ©

সাইকোলজিক্যাল মাইন্ড এফেক্ট (Psychological Mind effect)

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close