
সারওয়ার্দীকে আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই তাকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।
মঙ্গলবার বিকালে সাভার মডেল টাউন থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয় বলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান।
আরেফীর বিরুদ্ধে দুদিন আগে পল্টন থানায় যে মামলা করা হয়েছে, অবসরপ্রাপ্ত লেফটেন্যান্ট জেনারেল হাসান সারওয়ার্দীও সে মামলার আসামি।
মহিউদ্দিন শিকদার নামের এক সাবেক ছাত্রলীগ নেতার করা ওই মামলায় বলা হয়েছে, শনিবার সংঘর্ষের পর আরেফীকে বিএনপি অফিসে নিয়ে গিয়েছিলেন হাসান সারওয়ার্দী এবং বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন।
সারওয়ার্দীকে আটকের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই সংবাদ সম্মেলন শেষ হওয়ার পরপরই সারওয়ার্দীকে গ্রেপ্তারের খবর আসে।
উত্তরে সরকারপ্রধান বলেন, “তাকে ছাড়া হবে না। হচ্ছেও না। তার খোঁজ করা হচ্ছে। তাকে ধরা হবে। জিজ্ঞেস করা হবে কেন প্রতারণা করল। আমি নির্দেশ দিয়েছি। উনি সাজায় গোছায়ে নিয়ে আসছে। তাকে ধরা হবে। ব্যবস্থা নেব। বলে দিয়েছি।”
শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে ঘিরে সংঘর্ষের পর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিতে সংবাদ সম্মেলন করেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক আরেফী। তিনি নিজের পরিচয় দেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ‘উপদেষ্টা’ হিসেবে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওতে দেখা যায়, মিঞা আরেফী ইংরেজিতে বক্তব্য দিচ্ছেন, তার হাতের ডানদিকে বসে আছেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা ইশরাক হোসেন।
আরেফীর সংবাদ সম্মেলনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় আলোচনা। ঢাকায় মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে তখন বলা হয়, ওই ব্যক্তি যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কেউ নন। যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে কারও যাওয়ার তথ্য পুরোপুরি ‘মিথ্যা’।
রোববার দুপুরের পর দেশের বাইরে যাওয়ার সময় ইমিগ্রেশন পুলিশ আরেফীকে আটক করে গোয়েন্দা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
পরে ওই দিনই আরেফী, হাসান সারওয়ার্দী ও ইশরাকের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা পরিচয় দিয়ে বিশ্বাসভঙ্গের’ মামলা করেন মহিউদ্দিন শিকদার। মামলায় আরেফীর গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় লেখা হয়।
সোমবার আরেফীকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।
মামলার বিবরণ অনুযায়ী, শনিবার বিএনপি কার্যালয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনে আরাফী দাবি করেন, মার্কিন প্রেসিডেন্টের সাথে তার দিনে ১০-১৫ বার যোগাযোগ হয় এবং মার্কিন সরকারের সবাই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন ও বিচার বিভাগের ওপরও নিষেধাজ্ঞা দিতে যাচ্ছে বলে দাবি করেন আরেফী।
অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার হারুন অর রশিদ জানান, আরেফী তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে ১৯৮৪ সালে আমেরিকা চলে যান। ১৯৮৬ সালে আবার দেশে আসেন। পরে ২০২২ সালে দেশে এসে খুলনার এক নারীকে বিয়ে করেন। ছয় মাস বারিধারায় তিনি বসবাস করেছেন।
“ওই সময় হাঁটাচলা করতে গিয়ে সারওয়ার্দীর সাথে পরিচয় হয়। তারপর তাদের মধ্যে কথাবার্তা এবং একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে।”
হারুন বলেন, “আরেফী আমেরিকা চলে গেলে সোহরাওয়ার্দী তাকে বলেন, ২৮ অক্টোবর বিএনপির একটি সমাবেশ আছে, আপনি একটু আগে আসেন। তিনি (আরেফী) এক মাস আগে বাংলাদেশে আসেন। আবার চলে যান এবং ২৬ অক্টোবর আবার দেশে আসেন। “তাকে বিএনপি’র বড় র্যালি আছে এটা বলে নিয়ে যায় পার্টি অফিসে।”
আরেফীকে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন বলেন, “উনি বলেছেন, সারওয়ার্দী ও বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট বেলাল ও ইশরাক উনাকে যেভাবে উপস্থাপন করেছেন, এটা সত্য না। তারা মিথ্যাভাবে উপস্থাপন করেছেন।
“জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানিয়েছেন বাসা থেকে আনার সময় উনারা তাকে শিখিয়েছেন যে, ‘র্যাব স্যাংশান দিতে সহায়তা করেছি, এখন পুলিশ আর আনসারকে দিব। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীকেও দিব। এই কথাগুলি বললে দেখবেন যে, বাংলাদেশের পুলিশও মানুষ ডি-মোরালাইজড হবে’।”