জাতীয়

কক্সবাজারে ধর্ষণঃলিশের তদন্তে তাঁর আস্থা নেই ওই নারীর

ঢাকায় ফিরে ওই নারী ও তাঁর স্বামী বললেন, শেখানো বুলি বলেছেন আদালতে

ভুক্তভোগী নারী বলেন, ২৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় কক্সবাজার থানার সামনে তাঁর স্বামীকে হাতে লেখা একটি চিঠি ধরিয়ে দেন অপরিচিত কয়েকজন যুবক। তখন বলা হয়েছিল এভাবেই (চিঠিতে লেখা কথা অনুযায়ী) কথা বলতে হবে। নয়তো কারও প্রাণ থাকবে না।

ওই নারীর স্বামী বলেন, রোববার রাতে তাঁরা তিনজন শীতাতপনিয়ন্ত্রিত গ্রিনলাইন পরিবহনে চড়ে ঢাকায় পৌঁছান। টিকিট করে দিয়েছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। কক্সবাজার থানায় মামলা করার পর ২৩ ডিসেম্বর থেকে টানা চার দিন তাঁরা ট্যুরিস্ট পুলিশের হেফাজতে ‘বন্দী’ ছিলেন। এ সময় কারও সঙ্গে তাঁদের কথা বলতে দেওয়া হয়নি। খাবারদাবার ঠিকমতো দেওয়া হলেও এই চার দিনে কারও একবার গোসল হয়নি। তাই তাঁরা যেভাবে হোক কথাবার্তা বলে কক্সবাজার ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। এখন ঢাকায় পৌঁছেছেন, সবকিছু প্রকাশ করবেন। তিনি বলেন, প্রকৃত ঘটনা থানার দায়ের করা মামলাতেই লিপিবদ্ধ আছে। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে কল দেওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একবার নয়, তিন দফায় তিনি ৯৯৯-এ কল দিলেও সহযোগিতা পাননি। পরে তিনি র‍্যাবকে কল দেন। র‍্যাবই ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাঁদের উদ্ধার করে।

২৩ ডিসেম্বর রাতে ধর্ষণের শিকার নারীর স্বামী বাদী হয়ে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় সন্ত্রাসী মো. আশিক (২৮), মো. বাবু (২৫), ইসরাফিল হুদা ওরফে জয় (২৮), রিয়াজ উদ্দিন ওরফে ছোটন (৩০) এবং অজ্ঞাতনামা আরও তিনজনসহ সাতজনের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, ২২ ডিসেম্বর বিকেলে স্বামী ও ৮ মাসের শিশুসন্তানকে নিয়ে সৈকতের লাবণী পয়েন্টে নামেন ওই নারী। বালুচর দিয়ে হেঁটে পানির দিকে নামার সময় তাঁর স্বামীর সঙ্গে সামান্য ধাক্কা লাগে আশিকের। এর জের ধরে সন্ধ্যায় পর্যটন গলফ মাঠ এলাকা থেকে ওই নারীকে তুলে নিয়ে প্রথমে ঝুপড়ির একটি চায়ের দোকানে এবং পরে কলাতলীর একটি হোটেলে নিয়ে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেন আশিকের নেতৃত্বে কয়েকজন।

গতকাল রাতে মাদারীপুর থেকে র‍্যাব মামলার প্রধান আসামি আশিককে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁর বাড়ি কক্সবাজার শহরের মধ্যম বাহারছড়া এলাকায়। এ প্রসঙ্গে র‌্যাব-১৫ কক্সবাজার ক্যাম্প অধিনায়ক মেজর মেহেদী হাসান প্রথম আলোকে বলেন, আশিককে ঢাকা থেকে কক্সবাজার আনা হচ্ছে। পরে আশিককে ট্যুরিস্ট পুলিশের মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, আজ বেলা আড়াইটা পর্যন্ত সময়ে র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার আশিককে ট্যুরিস্ট পুলিশের হাতে হস্তান্তর করা হয়নি। মামলার বাদী ও ধর্ষণের শিকার নারী রোববার রাতের বাসে ঢাকায় ফিরে গেছেন। গতকাল এই দলবদ্ধ ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার তিনজনকে আজ দুপুরে কক্সবাজার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে পাঁচ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করা হবে। মামলার অন্য আসামিদের গ্রেপ্তারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

ধর্ষণের শিকার নারী ও মামলার বাদীর বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবির প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বলেন, ‘এটা তাঁরা চাইতে পারেন। আমরা নিয়মতান্ত্রিকভাবে তদন্তের কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের তদন্তের বিন্দুমাত্র ভুল থাকবে না।’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close