
রাফি তালুকদার ( ভৈরব, কিশোরগঞ্জ):
ভৈরবে পরকিয়ার জেরে বর্তমান স্বামী জাবেদ মিয়ার (৩৫) ছুরিকাঘাতে খুন হয়েছেন সাবেক স্বামী রুবেল মিয়া রবিন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘাতক জাবেদকে আটক করেছে। ঘটনাটি ঘটেছে শহরের কমলপুর নিউ টাউন এলাকায় সহকারি পুলিশ সুপার কার্যালয়ের ঠিক সামনের বাড়িতে।
পুলিশ, নিহতের পরিবার ও প্রতিবেশীরা জানায়, রবিন ও ঝুমুর পরিবারের অমতে ১৪ বছর আগে বিয়ে করেন। তাদের সংসারে সোহান (১৩) ও সোহানা (১১) নামে দুটি সন্তানের জন্ম হয়। সংসারের স্বচ্ছলতা ফেরাতে এক বছর আগে রবিন লিবিয়াতে পাড়ি জমান।
এই সুযোগে প্রতিবেশী চা দোকানি এক সন্তানের জনক জাবেদ মিয়ার সাথে প্রেমে জড়ান ঝুমুর। এই খবর পেয়ে রবিন দেশে ফিরে আসেন। শুরু হয় তাদের পারিবারিক দ্বন্দ্ব। প্রতিদিন চলে ঝগড়া-মারামারি। এক পর্যায়ে রবিন একদিন স্ত্রী ঝুমুরের মাথার চুল কেটে দেয়।
এই ঘটনায় ঝুমুর স্বামী রবিনের নামে নারী নির্যাতনের মামলা দায়ের করলে রবিন গ্রেপ্তার হয়ে জেল-হাজতে চলে যায়। প্রায় ৫ মাস আগে ঝুমুর রবিনকে তালাক দিয়ে জাবেদকে বিয়ে করে দুই সন্তানসহ তার বাড়িতে গিয়ে উঠেন।
রবিন জেল থেকে জামিনে এসে স্ত্রী ঝুমুরের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে। মুঠোফোনে কথা বলে। এই কথা জেনে ক্ষেপে যায় জাবেদ। এই নিয়ে জাবেদ-রবিনের মাঝে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। প্রায়ই একে অন্যকে মেরে ফেলার হুমকি-ধামকি দিতো।
গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে জাবেদ ও তার বোনের ছেলে সৌরভ রবিনদের বাড়িতে ঢুকে তার বৃদ্ধ বাবা মুসলিম মিয়াকে মারধর শুরু করে। এ সময় রবিন ছুটে এসে তাদের সাথে মারামারিতে লিপ্ত হয়ে। এক পর্যায়ে জাবেদ রবিনকে বুকে ছুরিকাঘাত করলে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
পরে তাকে উদ্ধার করে তার স্বজনরা প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসকরা বাজিতপুরের ভাগলপুর জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখান থেকে তাকে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। আজ শুক্রবার ভোর ৩টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়।
নিহত রবিনের বৃদ্ধ বাবা মুসলিম মিয়া বলেন, অবৈধ সম্পর্ক করে আমার ছেলের বউকে নিয়ে গেছে জাবেদ। সাথে আমার দুটি শিশু নাতী-নাতনী। এই কারণে আমি আমার নাতী-নাতনীদের মুখ দেখতে পাই না। এখন আমার তরতাজা ছেলেটাকে আমার চোখের সামনে খুন করে ফেললো। আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। খুনি জাবেদ ও তার ভাইগ্না সৌরভের ফাঁসি চাই।
এদিকে জাবেদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি। ঝুমুর তার দুই সন্তান নিয়ে পালিয়েছেন ঘটনার রাতেই। অনেক ডাকাডাকির পর সন্ধান মেলে জাবেদের প্রথমপক্ষের স্ত্রী নাদিরার সাথে। তিনি জানান, রবিন প্রায়ই তার স্বামী জাবেদকে হুমকি ধামকি দিতো। গতকাল রাতে কি বিষয়ে মারামারি হয়েছে, সেটি তিনি জানেন না।
ভৈরব থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) শাহ আলম মোল্লা জানান, খবর পেয়ে রাতেই অভিযুক্ত জাবেদকে আটক করা হয়েছে। রবিনের পরিবারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। তাদের অভিযোগ পাওয়ার পর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।