অপরাধঢাকানারায়ণগঞ্জ

আইএমইআই নম্বর পাল্টে চোরাই ফোন বিক্রি, আটক ২০

হারিয়ে যাওয়া কিংবা চুরি হওয়া ফোন ফিরে পেতে আইএমইআই নম্বর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই মোবাইল কেনার সময় ক্রেতারা সবার আগে ফোনের এ আইএমইআই নম্বর ঠিক আছে কিনা তা খতিয়ে দেখেন। কিন্তু প্রযুক্তির মাধ্যমে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই সেই আইএমইআই নম্বর পাল্টে ফেলা যাচ্ছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বিভিন্ন চক্র আইএমইআই নম্বর পাল্টে হারানো, ছিনতাইকৃত ফোন নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় বিক্রি করে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় চোরাই ফোনের আইএমইআই নম্বর পাল্টে বিক্রি করা চক্রের ২০ সদস্যকে আটক করেছে র‌্যাব-৩। তারা নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁসহ ঢাকার গুলিস্তান, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এলাকায় দীর্ঘ ৫ বছর ধরে চোরাই মোবাইল বিক্রি করে আসছে ।

মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) দুপুরে ঢাকার কারওয়ানবাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি জানান, আসন্ন ঈদকে কেন্দ্র করে মোবাইল সিন্ডিকেট চক্রের অবৈধ মোবাইল ক্রয়-বিক্রয়ের তৎপরতা বেড়েছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে ২০ জনকে আটক করা হয়েছে। তারা দীর্ঘ ৫-৬ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মোবাইল চোরাকারবারির সঙ্গে জড়িত। তারা মোবাইল চুরি, ছিনতাই ও আইএমইআই পরিবর্তনের হোতা। সোমবার (১ এপ্রিল) অভিযান চালিয়ে ঢাকার গুলিস্তান, শনিরআখড়া, মোহাম্মদপুর, খিলগাঁও এবং নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকা থেকে চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়।

আটকরা হলেন- হাফিজুর রহমান (৩৫), রনি আহমেদ ইমন (২৯), জসিম উদ্দিন (৩৫), জামাল উদ্দিন (৫০), আবুল মাতুব্বর (৪২), আহম্মদ আলী (৩৫), কামাল (৪০), বাপ্পি (২৯), আবিদ হোসেন সনু (৩৮), রবিন ভূঁইয়া (২১), আরিফুল হোসেন (২২), ইব্রাহিম মিয়া (৪০), সুজন (২৯), দেলোয়ার (৩৩), আব্দুর রহমান (১৯), রাজু (২৭), জিহাদ হোসেন (২৪), মুনাইম (৩৮), রাজু (৪৫) ও রফিক (৩৮)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৫৪২টি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ৩৪১টি বাটন মোবাইল ফোন, বিপুল পরিমাণ ভুয়া আইএমইআই স্টিকার, একটি হিটগান, ইলেকট্রনিক সেন্সর ডিভাইস, আইএমইআই পরিবর্তনের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন টুলস, ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত ছয়টি চাকু, একটি ল্যাপটপ, একটি এলসিডি মনিটর ও নগদ ১১ হাজার ৬০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

চক্রটি চোরাইকৃত মোবাইল ফোনগুলো বিক্রির জন্য বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে কাজ করে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আটক আরিফুলের চক্র নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও, আবুল মাতুব্বরের চক্র মোহাম্মদপুর এলাকায় ও ইমনের চক্রটি খিলগাঁও এলাকায় সক্রিয়। আব্দুর রহমান, রবিন ও হাফিজুর রহমান মোবাইল ছিনতাই করে চক্রের মূলহোতা রাজু, সুজন ও আবুল মাতুব্বরসহ অন্যান্যদের কাছে স্বল্পমূল্যে বিক্রি করে দেন। তারা অন্যান্য ছিনতাইকারীর কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া মোবাইল স্বল্প মূল্যে কিনে নেন। দেলোয়ার এবং আবুল মাতুব্বর মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তনের অন্যতম কারিগর। তারা কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ছিনতাই হওয়া মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রির জন্য প্রস্তুত করেন। দেলোয়ারের চক্রটি গুলিস্তান এলাকায় সক্রিয়। তারা আইএমইআই পরিবর্তনের পাশাপাশি কখনো কখনো মোবাইলের কেসিন, ডিসপ্লেও পরিবর্তন করে ফেলেন। এ পর্যন্ত তারা ২০ হাজারের বেশি মোবাইলের আইএমইআই পরিবর্তন করে বিক্রি করেছেন।

তিনি আরও বলেন, ব্র্যান্ড এবং কোয়ালিটি ভেদে এসব মোবাইলে ফোন সেটের দাম ৫০০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ভালো মানের মোবাইলগুলো তারা মোবাইল মেরামত করার দোকানে বিক্রি করেন। আর অন্য মোবাইল বিভিন্ন মার্কেটের সামনে ভ্রাম্যমাণ ভাবে বিক্রয় করে আসছিলেন।

আটক দেলোয়ারের সহযোগী রাজু এবং জিহাদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। আরিফুলের বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থানায় মামলা রয়েছে। এছাড়া, মোনায়েম, রফিক ও আরিফুল আগেও র‌্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন। পরে তারা জেল থেকে বেরিয়ে আবারও এই চক্রে জড়িয়ে পড়েন। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান খন্দকার মঈন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close