জাতীয়

রমজানের আগেই অস্থির নিত্যপণ্যের বাজার, নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ সরকার

পবিত্র মাহে রমজান শুরু হতে এক মাসের বেশি সময়ও বাকি। তার আগেই অনেকটা লাগামহীন নিত্যপন্যের বাজার। নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও নাগাল পাচ্ছেন না নিত্যপণ্যের। এক বছর আগেও এক কেজি গরুর মাংস পাওয়া যেত ৬০০ টাকায় থেকে ৬৫০ টাকায়। বর্তমানে সেই মাংস কিনতে গুনতে হচ্ছে ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা। অপরদিকে ব্রয়লার মুরগীর দাম বাড়তে বাড়তে এখন ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। যার কেজি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা ছিলো। দেশের বেশির ভাগ মানুষের প্রতিদিনের আয় এর চেয়ে কম। ফলে সাধারণ মানুষের পক্ষে আর গরুর মাংস কেনা সম্ভব নয়। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম কেজিতে বেড়েছে ৩० থেকে ৫০ টাকা। অন্যদিকে উর্ধ্বমূখী আকাশ ছোয়া মুরগীর মাংসের মূল্যে সাধারণ মানুষের তালিকা থেকে এটিও গরুর মাংসের মত বাদ পড়ার তালিকা ছুই ছুই।
রমজানকে টার্গেট করে তেল-চিনির দাম আগেই বেড়েছে, এখন বাড়ছে ছোলা-ডালের দাম। বাজারে দীর্ঘদিন ধরে তেল, চিনির দাম বাড়তি। গত সপ্তাহে চিনির দাম আরেক দফা কেজিতে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকেই প্রতি কেজি পরিশোধিত চিনির দাম (খোলা) পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ১০৭ এবং পরিশোধিত চিনির (প্যাকেটজাত) দাম চার টাকা বাড়িয়ে ১১২ টাকা করা হয়েছে। যদিও বাজারে সেই দামেও চিনি মিলছে না। কিনতে হচ্ছে ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা কেজিতে।
শুক্রবার নারায়ণগঞ্জ শহর, সিদ্ধিরগঞ্জ ও ফতুল্লার বিভিন্ন বাজারে ঘুরে দেখা যায় প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি আবারও ৪০ টাকা বেড়ে ১৮০ থেকে ২২০ টাকা হয়েছে। আর সোনালি মুরগির দাম প্রতি কেজি প্রতি ৩৫ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায়।
আর ডিমের ডজন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা। যা আগে ছিল ১২৫ টাকা। আর বাজার ভেদে হাঁসের ডিমের হালি ৭৫ থেকে ৮০ টাকা। হুট করে ব্রয়লার ও ডিমের এ দামবৃদ্ধি বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছে। দোকানে দোকানে দাম নিয়ে চলছে ক্রেতা-বিক্রেতার বাগবিতন্ডা।
এদিকে সবজির দামও চওড়া হয়ে যাচ্ছে। প্রতি পিস ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, আর বড়গুলো ৪০ টাকায়, বাঁধাকপি প্রতি পিস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, পেঁপে প্রতি কেজি ৩০ টাকা আর গাঁজর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
একইভাবে নতুন আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকায়, মিস্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৩০ টাকা, ব্রুকলি প্রতি পিস ৩০ টাকা, সিম প্রতি কেজি ৫০ টাকা যা কিছুদিন আগেও ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে।
অন্যদিকে বেগুন প্রতি কেজি ৫০ টাকা, মূলা প্রতি কেজি ৩০ টাকা, প্রতি পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৮০ টাকায় আর শসা প্রতি কেজি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে করোলা আরও বাড়তি দামে প্রতি কেজি ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, বাজারে কাঁচা মরিচের কেজি চলছে ১২০ টাকা ১৬০ এবং ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ডিগু বাবুর বাজারে সাপ্তাহিক বাজার করতে আসা ঈসমাইল হোসন মিলন নামের এক ক্রেতা বলেন, শীত এখনও শেষ হয়নি, তবুও বাজারে সবজির দাম বাড়তি। কিছুদিন আগেও যে সবজিগুলো ৩০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে ছিলো, সেগুলোই ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যার দাম বাড়েনি।
চিটাগাংরোডে আহসান উল্লাহ বাজারের সবজি বিক্রেতা সাদ্দাম বলেন, মোকামেই বাড়তি দামে সবজি কিনতে হচ্ছে। যার প্রভাব খুচরা বাজারে পড়েছে। আসলে শীত কমে আসার সঙ্গে শীতের সবজিও কমে আসছে, পাশাপাশি উৎপাদন ও পরিবহন খরচও বাড়তির দিকে। এসব কারণে বেড়েছে সবজির দাম।
অন্যান্য বছরে এই সময় সবজির দাম কমই থাকতো তবে এ বছর উৎপাদন ও পরিবহন খরচ বেড়ে যাওয়ায় সবজির দাম বাড়তি যাচ্ছে।
কালির বাজারে ডিমের দরদাম করছিলেন পাঠানটুলির বাসিন্দা অপু রহমান। নির্দিষ্ট দোকান থেকে তিনি ব্রয়লার মুরগি ও ডিম কেনেন। এদিন ডিম কিনতে এসে তিনি জানতে পারেন দামবৃদ্ধির কথা। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগের ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকায় কিনেছি। এখন বলছে ২২০ টাকা। আশ্চর্য লাগছে। এভাবে আমাদের জীবন চালানো অসম্ভব।
অন্যদিকে পাড়া-মহল্লার মুদি দোকান থেকে ডিম কিনলে গুনতে হচ্ছে তার চেয়ে কয়েক টাকা বেশি। কোথাও কোথাও ডিম ৫০ টাকা হালি বিক্রি হতে দেখা গেছে। ফার্মের মুরগির সাদা ডিম একটু কমে, প্রতি হালি ৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
খুচরায় প্রতি কেজি মসুর ডাল এখনো ১৩০-১৪০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি আটার দাম ৭০ টাকা ও ময়দা ৭৫ টাকা।
সবজির মতো মাছের দামও বাড়তি বলে বিক্রেতারা জানিয়েছেন। প্রকারভেদে চাষের মাছ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে প্রায় ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত। অন্যদিকে ইলিশ-চিংড়ির পাশাপাশি দেশি (উন্মুক্ত জলাশয়ের) মাছের দাম বেড়েছে কেজিতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। আগে বাজারে প্রতি কেজি পাঙ্গাস মাছ বিক্রি হতো ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, যা এখন ১৭০-২০০ টাকায় ঠেকেছে। অন্যদিকে তেলাপিয়া মাছের কেজি হয়েছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। যা আগে ১৮০-২০০ টাকায় কেনা যেতো।
সিলভার কার্প ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, শিং মাছ আকার ভেদে ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা এবং চিংড়ি মাছ ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ইলিশ মাছ কেজি বড় আকাড়ে ১৫০০ থেকে ১৬০০ টাকা মাঝারি ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা ছোট ৪০০ থেকে ৬০০ টাকা।
বাজারে আসা রিকশাচালক কামাল বলেন, শুক্রবার দিনটিও যে ভালো-মন্দ খাবো সে উপায় নেই। নিরামিষ খেতে খেতে জীবন ঝালাপালা হয়ে যাচ্ছে। মাছ কিনতে যদি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি লাগে, তাহলে অন্য সদাই না কিনে ঘরে ফিরতে হয়।
মাছ বিক্রেতারা বলছেন, সবকিছুর দাম বাড়তি, মাছের দামও বাড়ছে। মাছের ফিডের (খাবার) এখন খুব চড়া দাম। খামারিরা এজন্য দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close