আন্তর্জাতিক
ভারতের বুকে নতুন ‘খ্রিস্টান’ রাষ্ট্রের পরিকল্পনা !
গত ১৮ মাস ধরে চলছে ভারতের কুকি ও মেইতি নৃগোষ্ঠীর মধ্যে সহিংসতা। জটিল হচ্ছে ভারতের মণিপুর ও মিজোরামের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী জাতিগত ও রাজনৈতিক বিতর্ক। আর এর মাঝেই উঠে আসল ‘কুকি, চিন ও জো নৃগোষ্ঠীকে নিয়ে বৃহত্তর ‘খ্রিষ্টান রাষ্ট্র’ গঠনের নতুন এক তত্ত্ব। ফলে প্রশ্ন উঠছে, ভারতের বুকেই কি এবার জন্ম হবে নতুন খ্রিস্টান রাষ্ট্রের?
জো-চিন এবং কুকি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী লালদুহোমা। গত ৪ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ইন্ডিয়ানাপোলিস শহরে প্রবাসী ভারতীয়দের এক অনুষ্ঠানে লালদুহোমা চিন-কুকি-জো জনগোষ্ঠীকে নিয়ে বলেন, বিশ্বাসের দিক দিয়ে তারা ঘনিষ্ঠ, একই সম্প্রদায়ভুক্ত। কিন্তু আন্তর্জাতিক সীমানার কারণে তারা বিভক্ত। তিনি বলেন, আমি চাই আমাদের সেই বিশ্বাস আর আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠুক যে, একদিন আমরা এক নেতৃত্বের অধীনে আমাদের জাতীয়সত্তা গঠনের লক্ষ্যে উঠে দাঁড়াব।
তিনি জোর দিয়েছেন, রাজনৈতিক সীমানার মাধ্যমে বিভক্ত হলেও চিন-কুকি-জো জাতিগোষ্ঠীর ঐতিহাসিকভাবে এক হওয়ার দাবি অনেক পুরনো। ফলে তার বিরুদ্ধে আলাদা কুকি-জো জাতিগোষ্ঠীর ধারণাকে সমর্থন দেওয়ার অভিযোগ তুলছেন অনেকেই। এই বক্তব্য দেওয়ার দুদিন আগে মেরিল্যান্ডে ‘মিজো ডে’ উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানে লালদুহোমা আরও বিশদ বক্তব্য দেন। ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে ছড়িয়ে থাকা এই জাতিগুলো ভারতের মধ্যেই একত্র হতে পারে কি না, সেটিও ভেবে দেখেছেন বলে জানান লালদুহোমা। এছারা সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারেও বহুল আলোচিত ‘গ্রেটার মিজোরাম’ ধারণাকে সামনে আনেন তিনি।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের সূত্রে জানা গেছে, কুকি-চিন-মিজো অঞ্চলের লোকেরা লোকেরা, সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, নিজেদেরকে সম্মিলিতভাবে ‘জো’ সম্প্রদায়ের মানুষ হিসাবে পরিচয় দিতে শুরু করেছে। এই তিন জাতির লোকেরা মায়ানমারের চিন রাজ্য, ভারতের মিজোরাম রাজ্য, মণিপুরের কুকি অধ্যুষিত এলাকা এবং বাংলাদেশের বান্দরবান জেলার বিভিন্ন স্থানে বসবাস করছে।
সাধারণ জাতিসত্তা দাবি করা এই জনসংখ্যার অধিকাংশই খ্রিস্টান ধর্মালম্বী। খ্রিস্টান মিশনারিরা ব্রিটিশ শাসনামলে তাদের ধর্মান্তরিত করা শুরু করে এবং ব্রিটিশরা উপমহাদেশ ত্যাগ করার পরেও তা অব্যাহত রাখে। জানা যায়, এই জনগোষ্ঠীর একটি অংশ নিজেদের বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া এক ইহুদি গোত্রের বংশধর মনে করে। গুঞ্জন রয়েছে, অনেকদিন ধরেই এখানে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদ। ফলে প্রাকৃতিক সম্পদে পরিপূর্ণ এই অঞ্চলে বৃহত্তর খ্রিস্টান রাষ্ট্র গঠনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইলের স্বার্থ জড়িয়ে আছে বলেও মনে করছেন অনেকে।
ধারনা করা হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি এই প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে মিজোরাম ভিত্তিক সংগঠন জো রিইউনিফিকেশন অর্গানাইজেশন (জেডআরও)। এই সংঠনটির সদস্যরা বাংলাদেশ, ভারত ও মায়ানমারের বিভিন্ন স্থানে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। গত ৫ আগস্ট, হাসিনা সরকারের পতনের দিন মিজোরামে মিটিং -এ বসে সংগঠনটির শীর্ষ নেতারা। বিশ্লেষকদের মতে, চলমান এই ইস্যু প্রতিবেশী তিন রাষ্ট্রের মধ্যে তৈরি করতে পারে নতুন এক সংকট।