নারায়ণগঞ্জ

নারায়ণগঞ্জে চাষাড়া থেকে মিশনপাড়া পসরা জমেছেন হকার, বাড়ছে বিক্রি

ধীরে ধীরে নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে বসতে শুরু করেছে হকাররা। দিনের শুরুতেই এসে জায়গা খুজে সাজিয়ে বসেছেন নানা জিনিসের পসরা। বেলা বাড়ার সাথে সাথে বাড়ছে ক্রেতার সংখ্যাও, চলছে পছন্দের পণ্যে দর-কষাকষি। কদিন আগের দু-পক্ষের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর ধীরে ধীরেই হকার পূর্ণ হচ্ছে নবাব সলিমুল্লাহ সড়ক। সংঘর্ষের পর দু-পক্ষের আপোষ হওয়ায় স্বস্তিতেই বেচাকেনা করছেন হকাররা। পরিবারকে নিয়ে সেমাই-চিনি দিয়ে এবারের ঈদে করার আশা দেখছেন হকাররা।

শনিবার (১৬ মার্চ) নগরীর নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে চাষাড়ার মোড় থেকে মিশনপাড়া মোড়ে পর্যন্ত দেখা মেলে এমনই দৃশ্যের। বাহারি রংয়ের পাঞ্জাবি-পায়জামা ও জুতোর সাথে বসেছে ক্রোকারিজের দোকানও। ক্রেতার সাথে পন্য বিক্রি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন হকাররা। কিছু হকার পোশাকের দাম ২৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা হাকাচ্ছেন, কেউ আবার পণ্যের একদাম কাগজেই লিখে দোকানে ঝুলিয়ে রাখছেন।

বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়ে হকার তাহসিন আবদুল্লাহ বলেন, কার্ড বিতরণ করেছে ২০০-২৫০ টি। হকার আছে তো ৫ হাজারের মতো কিন্তু কার্ড বা টোকেন পাবে মাত্র ২২০০ টি। মূলত যারা নারায়ণগঞ্জের ভোটার তারাই কার্ড পাবে। যারা টোকেন পায় নাই তারা সুযোগ বুঝে এক-এক জায়গায় বসে আবার পুলিশ দাওয়া দিলে উঠি যাচ্ছে। ক্রেতাদের অনেকেই জানে না নবাব সলিমুল্লাহ সড়কে এখন হকার আছে, তারা ওই সড়ক খালি দেখে চলে যাচ্ছে। এটা নতুন জায়গা এখানে বেচা কেন কেমন হয় সেটা এখন বরা মুসকিল। ঈদের বাকি আর মাত্র ২৫ দিন। এই ২৫ দিন বলতে বলতে চলে যাবে, কিন্তু এখনো বসার জায়গা নিদিষ্ট হয় নি। এই সড়কে যে যার মতো বসছে। আমরা তো এখানে মাদক ব্যবসা বা চাদাবাজি করতে আসি না। আমরা আসছি এই সামান্য কিছু বিক্রি করে ২-৫ টাকা দিয়ে সংসার চালাতে। পরিবারে সাথে একটু সেমাই-চিনি দিয়ে এবারের ঈদ করতে পারলেই হবে। কিন্তু সেই সেমাই-চিনি টুকু কেনার সামর্থ্য হবে কিনা জানি না।

হকার আবদুল আলীম বলেন, আমাদের আজ প্রায় দেড় মাস পর সড়কে দোকান নিয়ে এসেছি। জণপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এখানে বসতে দিয়েছে এটাই অনেক আমাদের জন্য। আমি তাদের জন্য অনেক দোয়া করি। হকারদের মধ্যে ঝামেলার পর শুনেছি মিমাংশা হয়েছে। মিমাংশার কথা শুনে অনেকে হকাররাই আজ এখানে আসেছে দোকান খুলতে, তাই সাথে আমিও আসেছি। এখানে আসার পর এখন পর্যন্ত কেউ বাধা বা হুমকি দেয়নি। বঙ্গবন্ধু সড়কের তুলোনায় এখানে বেচা-কেনা কম হবে, কিন্তু ইনশাল্লাহ যা হবে ভালো হবে। অনেকে আসে পণ্যের দামাদামি করে চলে যায়। মোটামুটি কেনা-বেচা হচ্ছে বলা যায়।

আরেক হকার রফিক মিয়া বলেন, বেচা কেনা কালের তুলনায় আজ একটু ভালো। আসলে অনেকেই এই জায়গার হকারদের কথা যানে না, তারা আসে বঙ্গবন্ধু সড়ক ফাঁকা দেখে চলে যায়। এই কারণেই গতকাল ইফতারির পর অনেকে হকাররা বঙ্গবন্ধু সড়কে বসেছিলো। এখন চলে ৫ম রোজা, এখানে নতুন জায়গা হিসেবে তেমন কেনা-বেচা হচ্ছে না। এখানে ক্রেতাদের আসা যাওয়া অনেক কম। এই সড়কে আমাদের শুক্র ও শনিবার ২ দিন নবাব সলিমুল্লাহ সড়কের এক পাশের রাস্তা বন্ধ করে বসার অনুমতি দিয়েছে। এর পর তারা আবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আশা করছি কোন বাধা ছাড়া যদি এখানে বসতে পারি, ঈদের কাছাকাছি সময় বেচাকেনা আরও বাড়বে।

ক্রেতা নাসিমা বেগম বলেন, ঈদের বাজারের যেই জামা ফুটপাতে ৫৫০ টাকায় পাবো মার্কেটে সেটা ২০০০ টাকা চাইবে। তাই কম বেশি এখান থেকেই কেনাকাটা করা হয়। আমাদের গার্মেন্টসে গত মাসের বেতন দেয়েছে গত ৩-৪ দিন আগে। গতবছরের মতো এই ঈদের বেতন দিতেও হয়তো তারা দেরি কররে তাই এখনই ঈদের বাজার করা শুরু করেছি। মোটামোটি ১০ রোজার আগে বাজার সম্পর্ন করে ফেলতে পারলেই হয় কারণ ঈদ যতো কাছে, আসে সবকিছুর দাম ততো বাড়ে। আমি গতকাল ও দেখেছি এখানে সড়কের একপাশে হকার বসছে তার আজ দেখি কিছু কিনতে পারি কি না।

আরেকজন ক্রেতা মাজেদ ব্যপারী বলেন, ছেলে বলছে এবার ঈদে তারে একটা পাঞ্জাবি দিতে হবে। সে যেমন পাঞ্জাবির ডিজাইন দেখাইসে, সেই পাঞ্জাবি মার্কেটে দেখলাম ২৫০০ টাকা দাম চায়। এখানে ওমনই একটা পাঞ্জাবি পছন্দ হইসে। মালে তো বেশ কম হবেই, ২৫০০ টাকার পাঞ্জাবি আর ৭০০ টাকার পাঞ্জাবির মধ্যে একটু তো পার্থক্য থাকবে এটাই সাভাবিক। তবুও আরও কিছু দোকান ঘুঁড়ে দেখি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close