আড়াইহাজারনারায়ণগঞ্জনারায়ণগঞ্জ সদরনির্বাচনী হালচালফতুল্লাবন্দররাজনীতিরুপগঞ্জসিদ্ধিরগঞ্জসোনারগাঁও
হলফনামায় নারায়ণগঞ্জের হেভিওয়েট প্রার্থীদের সম্পদের তালিকা
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের ৫টি সংসদীয় আসনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মোট ৪৫ জন প্রার্থী। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে এসকল মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পর চূড়ান্ত প্রার্থীদের তালিকা ঘোষণা করবে নির্বাচন কমিশন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ৫টি আসনে ৪৫ জন মনোনয়ন সংগ্রহ করলেও হেভিওয়েট প্রার্থীদের হাড্ডা-হাড্ডি লড়াই হবে তিনটি আসনেই (রূপগঞ্জ, আড়াইহাজার, সোনারগাঁ)। অন্য দুইটি আসনে ওসমান ভাতৃদ্বয়ের (শামীম ওসমার ও সেলিম ওসমান) বিপক্ষে শক্ত কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নেই বললেই চলে।
নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে ত্রিমুখী লড়াইয়ের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে শুরু থেকেই। এই আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী গোলাম দস্তগীর গাজীর বিপক্ষে মাঠে রয়েছেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব তৈমুর আলম খন্দকার ও স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহজাহান ভূইয়া। নারায়ণগঞ্জ-২ (আড়াইহাজার) আসনে আওয়ামী লীগ মনোননীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুর বিপক্ষে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে মাঠে রয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আলমগীর সিকদার লোটন। এছাড়া নারায়ণগঞ্জ-৩ (সেfনারগাঁ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাতের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন টানা দুইবারের সংসদ সদস্য ও জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য লিয়াকত হোসেন খোকা।
এদিকে, নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় পাওয়া গেছে তাদের দেওয়া বিভিন্ন সম্পদের তথ্য। এগুলো বিশ্লেষন করে হেভিওয়েট প্রার্থীদের সম্পদের পরিমান নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
নারায়ণগঞ্জ-১
গোলাম দস্তগীর গাজী– হলফনামায় বাড়ি ও অন্যান্য ভাড়া থেকে বাৎসরিক আয় ১ লাখ ২৬ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৮২ কোটি ৩ লাখ ৬২ হাজার ৬০০টাকা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক আমানত আছে ৯১ লাখ ৪২ হাজার ৩৭৫ টাকা। সংসদ সদস্য হিসেবে প্রাপ্ত ভাতা বাৎসরিক ৩২ লাখ ৯৪হাজার ৩৪৮টাকা। তার কাছে নগদ টাকা আছে ৯ কোটি ৬২লাখ ৪৬ হাজার ৬৯৬ টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নামে জমা আছে ৬১ লাখ ৪৩হাজার ১২৯টাকা। পরিবহন খাতে তার সম্পত্তির পরিমাণ ১ কোটি ৯৩ লাখ ১৩ হাজার ৫৫৭ টাকা। তার অন্যান্য সম্পত্তির পরিমাণ ১৩০৪ কোটি ৩১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৭২ হাজার টাকা বলে তিনি আর হলফনামায় উল্লেখ করেন। এছাড়া তার নামে জমি রয়েছে ৭৮ কোটি ৬৬ লাখ ৭৯ হাজার ৪৪৭ টাকা মূল্যের। তার নামে দালানকোঠা রয়েছে ২৮ কোটি ৬৮ লাখ ৫০ হাজার ১৯১ টাকা মূল্যের। তার নামে বিভিন্ন ব্যাংক ও অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ঋণের পরিমাণ ৯৩৫ কোটি ৩২ লাখ ৫ হাজার ২০৭টাকা।
তৈমুর আলম খন্দকার– বাড়ি এপার্টম্যান্টের ভাড়া থেকে তার বাৎসরিক আয় ৭ লাখ ৭২ হাজার ৮৩৯টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্রের মুল্য ৪৬ হাজার ৪০৯ টাকা। পেশাগত বা কাজ করে তার উপার্জন ৪ লাখ টাকা। তার নিকট নগদ অর্থ রয়েছে ৬ লাখ ৫১ হাজার ৫০২টাকা। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমান ৩৬ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৮ টাকা। রাজউক প্লটে রয়েছে তার ৫ কাঠা জমি। এছাড়া তার রয়েছে একটি বাড়ি।
শাহজাহান ভূইয়া– হলফনামা অনুযায়ী বাড়ি/দোকান ভাড়া থেকে বছরে তার আয় ১২ লাখ ২৪ হাজার ৬২৮। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ২৬ লাখ ৪০ হাজার টাকা। শেয়ার/সঞ্চয়পত্র থেকে বছরে তার আয় ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা। অন্যান্য সম্পদের পরিমান ৭০ হাজার টাকা। আবাসিক/বানিজ্যিক দালানের অর্জনকালীন সময়ে অর্থিক মুল্য ১ কোটি ৯৬ লাখ ১৭ হাজার ৬৩০ টাকা। বাড়ি এপার্টম্যান্ট ২৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। ব্যাংকের কাছে তার ঋনের পরিমান ৭ লাখ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-২
নজরুল ইসলাম বাবু– হলফনামা অনুযায়ী তার শিক্ষাগত যোগত্যা এম.এস.এস কৃষিখাতে তার আয় ১২,০০০ টাকা, বাড়ি বা এপার্টমেন্ট ভাড়া ৫৭,৬৮,০০০ টাকা। ব্যাংক আমানত ৩,৩১,১১৯। সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ৬,৬০,০০০। করমুক্ত সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা ১৬,৪০,০০৫ টাকা। অস্থাবর সম্পত্তি : নগদ টাকা ৬,২২,১৩৫ টাকা। ব্যাংক জমা ২,০৭,৪৯.৩৩২ টাকা। শেয়ার ক্রয় ১,৫০,৩৯৫। স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ (সঞ্চয়পত্র ৫ নছর মেয়াদী) ১,২০,০০০ টাকা। গাড়ি টয়োটা ল্যান্ড ক্রজার স্টেশন ওয়াগন জীপ ১ টি যার মূল্য ১ কোটি ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা। স্বর্ন ৩৫ ভরি এবং ৩২ বোর পিস্তল ও ১২ বোর শর্টগান যার মূল্য ৬ লাখ ১২ হাজার ১৮৬ টাকা। ইলেক্টনিক সামগ্রী ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আসবাবপত্র ৪ লাখ ১১ হাজার টাকা। সূচনা ডাইং এন্ড প্রিন্টিং লি ১২৫০০ টি শেয়ার যার মূল্য ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং গ্রীণ ল্যান্ড টাউন ডেভেলপমেন্ট লি ১৩০০০ টি শেয়ার ১৩ লাখ টাকা স্থাবর সম্পত্তি কৃষি জমি ৩৩.১৩ শতাংশ। অকৃষি জমি ৩৬১.৭৯৫ শতাংশ যার মূল্য ২ কোটি ৫ লাখ ৫৫ হাজার টাকা। দালান ২.২৫ শতাংশ ১ লাখ ৫৭ হাজার ৫০০ টাকা। বাড়ি ৩২৩৮বর্গফুটের ফ্লাট যার মূল্য ৮১ লাখ টাকা। প্লট ১০ কাটা ৪ ছটাক যার মূল্য ৪১ লাখ
আলমগীর শিকদার লোটন– হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৪ লাখ ৬০০ হাজার টাকা। শেয়র/সঞ্চয়পত্র থেকে তার আয় ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা। তার নগদ টাকার পরিমান ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংকে জমাকৃত অর্থের পরিমান ১৬ হাজার ৯১৫ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৩
আব্দুল্লাহ আল কায়সার হাসনাত– তার বাড়ি, এপার্টমেন্ট ও দোকান থেকে বাৎসরিক আয় ৩৪,৩৯,৮০৮ টাকা। শেয়ার, সঞ্চয় বা ব্যাংকে আমানত হিসেবে রয়েছে ৫৮,৭৪৫ টাকা। তার অস্থাবর সম্পদ হিসেবে রয়েছে ২ টি মটর যান যার মূল্য ৮১,৭১,০০৭ টাকা; স্বর্ণ ও মূলবান ধাতু নির্মিত অলঙ্কারাদি রয়েছে ২০ তোলা, যার মূল্য ৫২,০০০ টাকা; আসবাব পত্র রয়েছে ৩২,৯০০ টাকা। তার স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে- পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ১৭৬ শতাংশ কৃষি জমি ও ৮৯.১০ শতাংশ অকৃষি জমি। এছাড়াও রয়েছে ১০.৮৩ শতাংশের জমিতে ৭ তলা দালান যার অর্জনকালীন সময়ে মূল্য ২,০০,০০০ টাকা। সেই সাথে তার রয়েছে পূর্বাচলে ১১ কাঠা ৪ ছটাক ৪ বর্গফুটের প্লট যার মূল্য ৪৬,৬১,৮০০ টাকা।
লিয়াকত হোসেন খোকা– হলফনামা অনুযায়ী তার পেশা ব্যবসা। তার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে কালীরবাজার চারারগোপে যাবতীয় কাঁচা পাকা ফলের আড়ত্ ও মোগড়াপাড়া চৌরাস্তা এলাকায় লাবিবা ট্রেড লিংক আইউব প্লাজা, লাবিবা ট্রেড লিঃ, ইশাখাঁ এগ্রো লিঃ। তার ব্যবসা থেকে বাৎসরিক আয় ৯ লাখ ৪১ হাজার ৭১১ টাকা। ব্যাংকে সুদ ও শেয়ার থেকে তিনি আয় করেন ১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৪১ টাকা। বাড়ি/দোকান ভাড়া ৪ লাখ ৯২ হাজার ৪৭৯ টাকা। এছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে তার বাৎসরিক আয় ২২ লাখ ৪৬ হাজার ৮০০ টাকা। তার নিকট নগদ অর্থ রয়েছে ৩৪ লক্ষ ৮০ হাজার ৯৭১ টাকা ও ব্যবসা বহির্ভূত সম্পত্তি ৩২ লক্ষ ৪০ হাজার ৯৯২ টাকা। তার নামে ব্যাংকে জমাকৃত অর্থ রয়েছে ৪ লাখ ৭৩ হাজার ৬০৬ টাকা। তার নামে শেয়ার রয়েছে ১৭ লাখ টাকার। লিয়াকত হোসেন খোকার নিজের একটি জীপ গাড়ি রয়েছে। স্বর্ণালংকার তার নিকট উপহার হিসেবে রয়েছে ৩০ ভরি। লিয়াকত হোসেন খোকার সৈয়দপুরে ৮ শতাংশ জমি রয়েছে যার মূল্য ২০ লাখ টাকা। তার নিজস্ব কোন বাড়ি নেই তবে তার স্ত্রীর শেয়ারে একটি ৩ তলা বাণিজ্যিক ভবন রয়েছে যার মূল্য ২০ লাখ ৭২ হাজার ৬৭৯ টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৪
শামীম ওসমান– হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তার ৪টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মেসার্স জেড এন কর্পোরেশন, জেড এন শিপিং লাইনস লিমিটেড, মাইশা এন্টারপ্রাইজ লিমিটেড, খান ব্রাদার্স ইনফোটেক লিঃ ও উইসডম নিটিং মিলস্ লিঃ। নিজের বাড়ি, দোকান ও অন্যান্য খাত থেকে বাৎসরিক আয় করেন ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ব্যবসা থেকে তার বাৎসরিক আয় ৩৬ লাখ ৭৫ হাজার ৯৯২ টাকা। শেয়ারের সঞ্চয়পত্র ও ব্যাংক থেকে জামানত সুদ থেকে তার বাৎসরিক আয় ১৫ লাখ ৭৯ হাজার ৫৪১ টাকা। জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী পান ২২ লাখ ২ হাজার টাকা। তার নিজ নামে নগদ অর্থ রয়েছে ১৭ লাখ ৮৭ হাজার ৫৯২ টাকা। তার বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৭৩ লাখ ৪ হাজার ৬৮৯ টাকা। তার কাছে থাকা লাইসেন্সকৃত রাইফেলের মুল্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ও পিস্তলের মুল্য ১ লাখ ৫ হাজার টাকা।
নারায়ণগঞ্জ-৫
সেলিম ওসমান– হলফনামায় তিনি নিজেকে একজন ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। ৫টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম উল্লেখ করেছেন- উইজডম এ্যাটায়ার্স, উইজডম ফ্যাবিক্স, উইজডম নিটিং মিলস্, ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ লিঃ ও ফাইভ স্টার ফার্ম হাউজ। কৃষিখাত থেকে সেলিম ওসমানের বাৎসরিক আয় ৩১ লাখ ৬১ হাজার ২৯৮ টাকা। বাড়ি, দোকান ভাড়া ও অন্যান্য খাতে বাৎসরিক আয় ১ লাখ ৮৩ হাজার ৫১০ টাকা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে বাৎসরিক আয় ৬০ লাখ, শেয়ার ও সঞ্চয়পত্রে প্রাপ্ত সুদ থেকে আয় ৫১ লাখ ৯৫ হাজার ৭৯৫ টাকা। এছাড়া জাতীয় সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ভাতা পান ২২ লাখ ২ হাজার টাকা।