নির্বাচনী হালচালরাজনীতিসারাদেশ
ফাঁকা মাঠে গোলের সুযোগ নেই, প্রার্থিতা ফিরবে আপিলে
নিজস্ব প্রতিবেদক দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীদের মধ্যে বিভিন্ন আসনে বেশ কয়েকজনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। কারো কারো ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে ‘সারবত্তাহীন ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতির’ কারণ দেখিয়ে। তবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে এই ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাতিল না করার কথা বলা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা বাতিল করলেও নির্বাচন কমিশনে আপিল করে প্রার্থিতা নিশ্চিত করা যাবে।
ফরিদপুর-১ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আরিফুর রহমান দোলনের মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার মো. কামরুল আহসান তালুকদার। মনোনয়নপত্রের একটি ছকে প্রার্থীর স্বাক্ষর না থাকার কারণ দেখিয়েছেন তিনি। যদিও এ ধরনের ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতি তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধনের সুযোগ রাখা হয়েছে আরপিওতে।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে ‘সারবত্তাহীন ত্রুটির জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল না করা’ শিরোনামে একটি চ্যাপ্টারও রয়েছে। সেখানে ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতির ক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়টি উল্লেখ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার অনীক আর হক বলেন, ‘ছোটখাটো ভুলের জন্য মনোনয়নপত্র বাতিল না করার বিষয়ে বলা আছে। এরপরও কোনো রিটার্নিং কর্মকর্তা এমনটা করে থাকলে তা উচিত নয়। প্রার্থীর নির্বাচন কমিশনে আপিল করে মনোনয়ন বৈধ করার সুযোগ আছে।
ইসির দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিচালনা ম্যানুয়েলে বলা হয়েছে, ছোটখাটো ত্রুটির জন্য কোনো মনোনয়নপত্র বাতিল করা যাবে না। যদি বাছাইয়ের সময় এমন কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি নজরে আসে, যা তাৎক্ষণিকভাবে সংশোধন সম্ভব, তা হলে মনোনয়নপত্র দাখিলকারীর দ্বারা তা সংশোধন করিয়ে নিতে হবে।
ছোটখাটো ত্রুটি-বিচ্যুতির কারণ দেখিয়ে কোনো প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিলের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সাবেক নির্বাচন কমিশনার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একেবারেই ছোট একটি ভুল। এ ধরনের ভুলের ক্ষেত্রে ছাড়ের বিষয়ে আরপিওতে বলাই আছে।’ ‘এখন যেহেতু মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেওয়া হয়েছে, ইসিতে আপিল করতে হবে। আপিলে ওই প্রার্থীর মনোনয়নপত্র চূড়ান্তভাবে টিকে যাবে বলেই আমি মনে করি’—যোগ করেন সাবেক এ নির্বাচন কমিশনার।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করলে সেটি একেবারে বাতিল না; কারণ ইসিতে আপিল করে প্রার্থিতা নিশ্চিত করার সুযোগ আছে। মনোনয়নপত্র সাময়িক বাতিলে প্রার্থী ভোট করতে পারবেন না সেটি কিন্তু বলার সুযোগ নেই।
তবে রিটার্নিং কর্মকর্তা মনোনয়নপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত দিলে নিয়মানুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রার্থী নির্বাচন কমিশনে আপিল করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ছাড়পত্র নিয়ে ভোটের লড়াইয়ে নামতে পারবেন। অনেকক্ষেত্রে কোনো আসনে দলীয় প্রার্থীর চেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী শক্তিশালী হলে, তার মনোনয়নপত্র সামিয়ক বাতিলের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করেন প্রতিদ্বন্দ্বি অন্য প্রার্থীরা। এর ফলে মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া প্রার্থীকে নিয়ে জনসাধারণ সাময়িকভাবে দ্বিধান্বিত হয়ে পড়ে।
ফরিদুপুর-১ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী দোলন বলেন, কোনো দলের মনোনীত প্রার্থী না হওয়ায় মনোনয়নপত্রে এ সংক্রান্ত একটি ছকে তিনি স্বাক্ষর করেননি। রিটার্নিং কর্মকর্তা এটিকে ত্রুটি দেখিয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন। এখন তিনি ইসিতে আপিল করে প্রার্থিতা নিশ্চিত করবেন।
এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট প্রার্থী মনোনয়নপত্রে ছোটখাটো ভুলের ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার জন্য ইসিতে একটি আবেদন দিতে পারেন। এছাড়া নিয়মানুযায়ী ইসিতে আপিল করার সুযোগ তো আছেই। চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত প্রার্থিতার সুযোগ নেই বলা যাবে না।’