আন্তর্জাতিকখেলাধুলাজাতীয়বিনোদন
৪০০তম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের বড় জয়
প্রথম দুই ম্যাচ হেরে আগেই সিরিজ খুইয়েছে বাংলাদেশ। তৃতীয় ম্যাচটি হারলে পড়তে হতো ধবলধোলাইয়ের লজ্জায়।
তবে ১০৫ রানের বড় জয়ে এবারের মতো সেই লজ্জা এড়াতে সক্ষম হলো টাইগাররা। এই ম্যাচটি আবার বাংলাদেশের ৪০০তম ওয়ানডে ম্যাচ। এই জয়সহ একই ফরম্যাটে টাইগারদের মোট জয়ের সংখ্যা এখন ১৪৪টি; বিপরীতে হার ২৪৯ ম্যাচে।
সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ১০ আগষ্ট বুধবার ১০৫ রানে জয় তুলে নিয়েছে বাংলাদেশ।
শুরুতে ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান সংগ্রহ করে টাইগাররা। জবাবে ১৫১ রানে গুঁটিয়ে যায় স্বাগতিকদের ইনিংস। শেষটা হার দিয়ে হলেও জিম্বাবুয়ে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতেছে।
হারারের গ্যালারি আজও ছিল ভরপুর, আগের দুই ম্যাচের মতোই। উৎসব অবশ্য করা হয়নি। আনন্দের উপলক্ষ ভেস্তে দিলো বাংলাদেশের বড় জয়। যদিও পুরোপুরি পারল কি না, সেই সংশয় থেকেই গেল। কারণ সিরিজটা যে আগেই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছে জিম্বাবুয়ের। উৎসবে ভাটার টান পড়তে পারে বড়জোর।
জিম্বাবুয়ের ক্রিকেট আদতে অনেকদিনের অপেক্ষা শেষে পেল এমন সিরিজের দেখা। টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ে শুরু, এরপর একই ফল ওয়ানডেতেও। এর চেয়েও কখনো কখনো যেন বড় হয়ে উঠল সিকান্দার রাজাদের বীরত্ব।
লড়াই করার চেষ্টা, হাল না ছাড়ার প্রত্যয় আর দমে না যেতে চাওয়ার অবিশ্বাস্য স্পৃহা জিম্বাবুয়ের দর্শকদের ক্রিকেটের প্রতি ফিরিয়েছে ভরসা। তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের শেষটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে হার এসব কতটুকু কমাতে পারবে, ওই প্রশ্ন থেকেই যায়।
শেষ ম্যাচের শুরুটা অবশ্য দারুণ হয়েছিল স্বাগতিকদের। বাংলাদেশকে যথারীতি স্বস্তির শুরু এনে দেন তামিম ইকবাল ও এনামুল হক বিজয়। তামিমের রান আউটে অবশ্য খুব বেশি দীর্ঘস্থায়ী হয়নি সেটি। নবম ওভারে রান আউট হয়ে তামিম ফিরলে ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। ৩০ বলে ১৯ রান করে বিদায় নেন টাইগার অধিনায়ক।
তামিমের বিদায়ের পর অল্প সময়ের মধ্যেই উইকেট হারান নাজমুল হাসান শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। দুইজনই শূন্য রানে বিদায় নেন। বিপদে পড়া বাংলাদেশের হয়ে একপ্রান্তে লড়াই করে গেছেন বিজয়। ৪৮ বলে ৩ ছক্কা ও ৪ বাউন্ডারিতে পূর্ণ করেন অর্ধশতক। মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৯০ বলে ৭৭ রানের জুটি গড়ে আশা জাগান তিনি। সেঞ্চুরির পথে হাঁটতে থাকা বিজয় শেষ পর্যন্ত আর পেরে ওঠেননি।
১৫তম ওভারের চতুর্থ বলে অফ স্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে উইকেটরক্ষকের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। ৭১ বলে ৪ ছক্কা ও ৬ বাউন্ডারিতে ৭৬ রান করে সাজঘরে ফেরেন এই ওপেনার। এরপর ব্যাট করতে নামা আফিফ হোসেনের সঙ্গে ধীরগতিতে এগোতে থাকেন মাহমুদউল্লাহ। তার টেস্ট ধাচের ইনিংস এসে থামে ৩৫তম ওভারে। ৬৯ বলে ৩৯ রান করে ফিরতে হয় সাজঘরে।
সাতে ব্যাট করতে নামা মিরাজকে নিয়ে বেশ কিছুক্ষণ লড়ে যান আফিফ। ৪৭ বলে ৩৩ রানের জুটি গড়েন তরুণ দুই ব্যাটার। সিকান্দার রাজার বলে মিরাজ এলবিডব্লিউ হলে ভাঙে এই জুটি। ১৪ রান করে বিদায় নেন টাইগার অলরাউন্ডার। এরপর ক্রিজে নেমে থিতু হতে পারেননি তাইজুল ইসলামও। ৫ রানে রান আউট হয়ে সাজঘরে ফেরেন তিনি।
একপ্রান্তে ব্যাটাররা যখন আসা-যাওয়ার মিছিলে, অপরপ্রান্তে থাকা আফিফ তখন ফিফটির দেখা পান। ৫৮ বলে অর্ধশতক পূর্ণ করেন এই ব্যাটার। শেষদিকে এসে পরপর উইকেট হারান হাসান মাহমুদ (১), মোস্তাফিজুর রহমান (০)। ৮১ বলে ২ ছক্কা ও ৬ বাউন্ডারিতে সর্বোচ্চ ৮৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন আফিফ। বাংলাদেশ নির্ধারিত ৫০ ওভার ব্যাট করে ৯ উইকেট হারিয়ে ২৫৬ রান তুলে।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে জোড়া উইকেট শিকার করেন ব্র্যাড ইভান্স ও লুক জঙ্গে। একটি করে উইকেট পান রিচার্ড এনগারাবা ও সিকান্দার রাজা।
জবাব দিতে নেমে প্রথম ওভারেই ধাক্কা খায় জিম্বাবুয়ে। প্রথম ওভারেই ৫ বলে শূন্য রান করা কাইতানোকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন হাসান মাহমুদ। পরের ওভারে আরেক ওপেনার মারুমিকে বোল্ড করেন মেহেদী হাসান মিরাজ।
শুরুর এই ধাক্কা পরে আর সামলে উঠতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। পুরো সিরিজে তাদের সবচেয়ে বড় ভরসা সিকান্দার রাজাও আউট হন কোনো রান না করে। ফর্মে থাকা এই ব্যাটার নিজের খেলা প্রথম বলেই বোল্ড হন এবাদত হোসেনের ওভারে।
শেষ উইকেটে ৬৮ রানের জুটি কেবল হারের ব্যবধানটাই কমিয়েছে জিম্বাবুয়ের। তবে ছোটখাটো একটা ঝড় বইয়ে দিয়েছেন শেষ দুই ব্যাটার। তারা আবার জিম্বাবুয়ের শেষ উইকেটে সর্বোচ্চ রানের জুটিও গড়েছেন। দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ বলে ২৬ রান করেছেন ১১ নম্বরে খেলতে নামা ভিক্টর নিয়াউচি আর ১০ নম্বরে নেমে সর্বোচ্চ ২৭ বলে ৩৪ রান করেছেন এনগারাবা। দুজনে মিলে ৯টি চার ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।
বাংলাদেশের পক্ষে ৫ ওভার ২ বল খেলে ১৭ রানে ৪ উইকেট নেন মোস্তাফিজুর রহমান। দুই উইকেট করে পেয়েছেন তাইজুল ইসলাম ও অভিষিক্ত এবাদত হোসেন।