জাতীয়

ফেনীর মাফিয়া নিজাম হাজারী: শূন্য থেকে হাজার কোটি টাকার মালিক!

দিনে-দুপুরে ফেনী শহরের সড়কে পুড়িয়ে মারা উপজেলা চেয়ারম্যান একরামের কথা মনে আছেতো? সেই একরামসহ বহু মানুষকে হত্যা, গুম, সম্পদ লুটপাট ও দুর্নীতির মাধ্যমে এই প্রাসাদ গড়াসহ শত শত অভিযোগে অভিযুক্ত ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নিজাম হাজারী।

মাত্র ২ মেয়াদে সংসদ সদস্য এবং একবার পৌর মেয়রের দায়ীত্ব পালন করে তিনি বানিয়েছেন কয়েক হাজার কোটি টাকার সম্পদের পাহাড়। তবে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর এসব সম্পত্তির অনেক কিছু ফেলে রেখে পালিয়ে যান নিজাম হাজারীও। ৫ আগস্ট তিনি পালিয়ে যাওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতা পুড়িয়ে দেয় দেড় হাজার কাটি টাকায় বানানো তার বাগানবড়িটিও।

ফেনীর মাফিয়া হিসেবে পরিচিত ছিলেন নিজাম হাজারী। মাফিয়াতন্ত্রে তার কাছে ফেল করেছেন তারই এক সময়ের গুরু দেশখ্যাত গড ফাদার জয়নাল হাজারীও। বিরোধী রাজনীতিবিদ তো আছেই, নিজের ক্ষমতাকে পোক্ত করতে তিনি নিজ দলের কর্মীদের হত্যা করতেও দ্বিধা করেননি। অভিযোগ আছে- ফেনীর আলোচিত চেয়ারম্যান একরামকে পুড়িয়ে মারার নির্দেশ দাতাও ছিলেন নিজাম হাজারী। যদিও তার আধিপত্যবাদের বিপরীতে গিয়ে সেই সময় মুখ খোলার সাহস হয়নি অধিকাংশ মানুষেরই।

অনেকটা জিরো থেকে হিরো হয়েছেন নিজাম হাজারী। নিজাম হাজারীর রাজনীতির শুরু জয়নাল হাজারীর হাত ধরে হলেও উত্থান হয়েছে চট্টগ্রামের আ জ ম নাছিরের মাধ্যমে। তিনি চট্টগ্রামে অস্ত্র ব্যবসায়ী ছিলেন। ২০০১ সালে যৌথবাহিনীর অভিযানের মুখে তার গুরু জয়নাল আবেদীন হাজারী পালিয়ে গেলে অভিভাবক শূন্য হয় ফেনী আওয়ামী লীগ। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে আওয়ামী রাজনীতির হাল ধরতে চট্টগ্রাম থেকে ফেনী আসেন নিজাম হাজারী। ধীরে ধীরে তৈরি করেন নিজের আধিপত্যবাদ। কোণঠাসা করে দেন জয়নাল হাজারীকেও। এক পর্যায়ে তার চাঁদাবাজীর স্বর্গরাজ্য এমন পর্যায়ে পৌঁছায় যে, নিজাম হাজারীর নামে চাঁদা না দিয়ে ফেনীতে থাকার উপায় ছিল না রিকশাচালক থেকে শুরু করে শিল্পপতি পর্যন্ত কারোরই।
বিভিন্ন সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, নিজাম হাজারীর নামে ফেনীতে প্রতিদিন ওঠানো হতো তিন কোটি টাকার বেশি চাঁদা।

২০১১ সালে নিজাম হাজারী ফেনী পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন এলে মেয়র পদ ছেড়ে অংশগ্রহণ করেন সংসদ নির্বাচনে। প্রতিদ্বন্দ্বীবিহিনী নির্বাচনের মাধ্যমে ফেনী-২ আসনের এমপি হন হন তিনি। সে সময় পূরণকৃত হলফনামায় নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তার স্ত্রী নুরজাহান বেগমের সম্পদ দেখিয়েছিলেন ৪ কোটি ১৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৬৮ টাকা। এমপি হওয়ার পর ২০১৮ সালের নভেম্বরে তাদের সম্পদের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ৩১ কোটি ৯৫ লাখ ৫৭ হাজার ২০২ টাকায়। আর গত পাঁচ বছরে তাদের সম্পদের পরিমাণ দাঁড়ায় ১২৪ কোটি ৬২ লাখ ৭৬ হাজার ২৪৩ টাকায়। যদিও হলফনামায় উল্লেখ করা এই হিসাবেরও বাইরে হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে তার

যদিও নিজাম হাজারীর এমপি পদের বৈধতা নিয়েও ছিল প্রশ্ন। যা গড়িয়েছে উচ্চ আদালতেও। অভিযোগ আছে, অস্ত্র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত নিজাম হাজারী পুরো সাজা শেষ না করেই জালিয়াতির মাধ্যমে বেরিয়ে এসে জনপ্রতিনিধি হয়েছিলেন। যা আইনের পরিপন্থি। কিন্তু টাকা আর আধিপত্যের কারণে আইনকেও তোয়াক্কা করেননি নিজাম হাজারী।

অবশেষে ভেঙেছে নিজাম হাজারীর আধিপত্যবাদ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের সাথে সাথে হাজার কোটি টাকার সম্পদ রেখে পালিয়েছেন তিনি। কিন্তু যাওয়ার আগের দিনও তার নির্দেশে ফেনীতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের চালানো গুলিতে ঝরেছে ৯টি তাজা প্রাণ। এ ঘটনায় নিজাম হাজারীসহ প্রায় তিন হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীকে আসামি করে ৮টি মামলা করেছেন নিহত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা। কবে গ্রেফতার হয়ে বিচারের আওতায় আসবেন নিজাম হাজারীসহ এসব হত্যা, লুটপাট ও চাঁদাবাজীর হোতারা সেদিকে চেয়ে আছে ফেনীবাসী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close