আইন ও অধিকার

ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করছে “PROYASH-প্রয়াস”

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল।সুস্থতা একটি বড় সম্পদ। সকলে চায় সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতে ।
একজন নাগরিকের বেঁচে থাকার জন্য বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার বা কিছু অধিকার প্রয়োজন হয় যা রাষ্ট্র নিশ্চিত করে।রাষ্ট্র জনগণের কল্যাণে আইন তৈরি করে। কিন্তু জনগণ সে আইন ও অধিকার সম্পর্কে অবহিত না থাকলে এর সুফল থেকে বঞ্চিত হয়। ভোক্তা অধিকার আইন দেশের সবচেয়ে জনবান্ধব ও কল্যাণকর একটি আইন, যা একটি মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত।কিন্তু আমাদের দেশের অধিকাংশ জনগন এই আইন সর্ম্পকে অবগত নয়। যার ফলশ্রুতিতে আমরা হরহামেশাই দেখছি প্রতারণা, এবং ভেজাল যুক্ত পণ্য ব্যবহার এর ফলে অনেক মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে কিংবা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখীন হচ্ছে।

২০২২ সালে আমরা ৯ জন তরুণ- তরুণী দ্যা হাংগার প্রজেক্ট এর মাধ্যমে ব্রিটিশ কাউন্সিল এর লিড বাংলাদেশ ট্রেইনিং নিয়ে “PROYASH-প্রয়াস” নামক প্রকল্প শুরু করি।

আমাদের মূল লক্ষ্য হলো, স্থানীয় কাউন্সিলর এবং ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের সহযোগিতায়
“ভোক্তাকে তার অধিকার নিয়ে আরো সচেতন করা এবং সেই সাথে ভোক্তা অধিকার গুলো যেন লঙ্ঘিত না হয় সেই ব্যাপারে জনগনকে সতর্ক করা”।

আমরা বৃহত্তর মহাখালী এলাকা, আকিজ কলেজ অব হোম ইকনমিক্স কলেজ, ধানমণ্ডি ২৭ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার মানুষদের নিয়ে কাজ শুরু করি এবং এখন পর্যন্ত প্রান্তিক পর্যায়ের ৫০০০ এর ও অধিক মানুষের কাছে আমরা আমাদের প্রয়াসকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছি।

প্রকল্পের কাজে আমরা বিভিন্ন জরিপ, বিভিন্ন ক্যাম্পেইন, ব্যবসায়ী দের সাথে কথোপকথন,তরুণদের সাথে আলোচনা, বাংলাদেশ ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং লোকাল কাউন্সিলর এর সাথে আলোচনার মাধ্যমে কাজের ধারা বজায় রেখেছি
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কোনো প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তির কাছ থেকে কোনো পণ্য বা সেবা নিয়ে কেউ প্রতারিত হলে তিনি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করতে পারেন। পরে তদন্ত বা শুনানি শেষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে জরিমানা করা হয়। আইন অনুযায়ী জরিমানার টাকার ২৫ শতাংশ পান অভিযোগকারী। বাকি টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হয়।

আমাদের ক্ষুদ্র এই প্রচেষ্টায় বর্তমানে অনেকেই ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে অবগত হয়েছেন এবং কোনো ধরনের প্রতারণার স্বীকার হলে প্রতিবাদ এবং অভিযোগ জানাতে দ্বিধান্বিত বোধ করেন না। তেমনই এক ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরা হলো।
কাজী সাদিয়া ইসলাম জানান,আমি গত সেপ্টেম্বর এ একটি স্বনামধন্য অনলাইন ব্যবসায়ের পেজে ২ টা শাড়ি প্রি অর্ডার করে পেমেন্ট করেছি। কিন্তু যখন আমি শাড়ি গুলো হাতে পেয়েছি,দেখি সেগুলো পুরানো শাড়ি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটিকে অবগত করলে, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গ বলে ,” আমরা শাড়ি চেঞ্জ করে দিবো”।
কিন্তু এর পর থেকে তারা আমার সাথে কোনো ধরনের যোগাযোগ করছে না, ফোনকল ও রিসিভ করছে না বা টেক্সট ও সিন করছে না।
এর মধ্যে আমি প্রয়াস এর মাধ্যমে জানতে পারি,
কোন ব্যক্তি কোন দ্রব্য বা সেবা বিক্রির উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দিয়ে ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করলে তিনি অনূর্ধব ১ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ২ লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন। অত:পর আমি সাহস করে ১৬১২১ নম্বরে কল করে জানতে পারি কিভাবে অনলাইন এ অভিযোগ জানাতে হয়।।আমি ই-মেইলে আমার নাম, পিতা-মাতার নাম, ঠিকানা, ফোন, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, অভিযুক্ত অনলাইন পেইজ ও ঘটনার বিবরণ এবং প্রমাণস্বরূপ সম্পূর্ণ কথোপকথোনের স্ক্রিনশট,, পেমেন্ট এর স্ক্রিনশট,অর্ডারকৃত পণ্য এবং রিসিভ করা পণ্যের ছবি সংযুক্ত করে অভিযোগ জানায়।অভিযোগ টি আমলে নিয়ে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর এর সত্যতা নিশ্চিত হয়ে উক্ত অনলাইন পেইজ কে ৫০০০০ টাকা জরিমানা করেন এবং মোট জরিমানার ২৫ % অর্থাৎ ১২৫০০ টাকা আমাকে প্রদান করা হয়।
ভোক্তা অধিকার আমাদের অধিকার,, একজন নাগরিক এর অধিকার।। ভোক্তা অধিকার কারো দয়া বা করুণা নয়। ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কে আমাদের সচেতন হতে হবে। সবাই সচেতন হলেই আইনটির সঠিক বাস্তবায়ন হবে। আমাদের একটুখানি সচেতনতাই পারে নিরাপদ ও ভেজালমুক্ত পণ্যের বাংলাদেশ গড়তে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close