Uncategorized
নারায়ণগঞ্জে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তির চিত্র

নারায়ণগঞ্জে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তির চিত্র নতুন কিছু নয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি চলে আসলেও দেখার যেন কেউ নাই। ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য বিআরটিএ কার্যালয়ের সামনে নিত্যদিন ভোগান্তির চিত্র দেখা যায়।
রীতিমত বিআরটিএ অফিসে অনিয়মই এখন নিয়ম হয়ে দাড়িয়েছে। ফলে ড্রাইভিং লাইসেন্স আবেদনকারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে নবাগত পুলিশ সুপার বলেছেন কিছুদিনের মধ্যে মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে। যেসব মোটর সাইকেলের রেজিষ্ট্রেশন নেই, কাগজপত্র আছে তারা রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলেন।
কিন্তু যাদের কোনটিই নেই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এতে প্রতিদিন নারায়ণগঞ্জ বিআরটিএ কার্যালয়ে ভীড় করছেন যানবাহন মালিকরা। বিশেষ করে মোটরসাইকেল চালকদের ভীড় লক্ষনীয়।
গ্রাহকদের অভিযোগ, বিআরটিএ লাইসেন্সের জন্য ২০১৯ সালে যারা আবেদন করেছেন তাদেরকে কর্তৃপক্ষ ধরিয়ে দিয়েছেন একটি স্লিপ। যা দিয়ে চালাতে পারবেন গাড়ি। এখন সেই স্লিপই হয়রানির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের।
স্লিপ দেখার পরও মামলা দিচ্ছেন ট্রাফিক পুলিশ। এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে গাড়ি প্রতি গুনতে হচ্ছে পাঁচশ থেকে হাজার টাকার জরিমানা।
এদিকে স্মার্ট ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে, আবেদন থেকে শুরু করে লাইসেন্স হাতে পাওয়া পর্যন্ত পদে পদে ভোগান্তি। বছরের পর বছর ঘুরেও লাইসেন্স না পেয়ে দালাল ধরতে বাধ্য হচ্ছেন সেবা প্রত্যাশীরা। বিআরটিএ বলছে, কার্ড সংকটের কারণেই এমন পরিস্থিতি।
ক্ষোভ প্রকাশ করে লাইসেন্সের আবেদনকারী রাজু আহম্মেদ বলেন, আমি ২০২০ সালে আবেদন করি এখন ২০২২ সাল এসেও এখন পর্যন্ত লাইন্সেস কার্ড হাতে পাইনি। বার বার তাদের কাছে আসলে বার বার সময় দিয়েও কার্ড দিতে পারে নাই। এই রকম রাজু আহম্মেদের মত অনেকেই দীর্ঘ দিন ধরেই তাদের লাইসেন্সে পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন।
এদিকে অনেক দিন পর লাইসেন্সে পেয়ে খুঁশি আবেদনকারী সুলতান আহমেদ। তিরি লাইসেন্সে হাতে পেয়ে বলেন, লাইসেন্স তো পেলাম না যেনো সোনার হরিণ পেলাম। তিন বছর পর লাইসেন্সে পাওয়া তো মানে সোনার হরিণ পাওয়ার মতোই।
সুলতান আহমেদ বলেন, আমি তিন বছর আগে লাইসেন্সের জন্য আবেদন করেছি। এর আগে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হই তার পর আঙ্গুলের ছাপ দেয়ার পর তারা আমাকে লাইন্সেস কার্ড পাবার একটি নির্ধারণ তারিখ দেয়।
তারপর সেই নির্ধারণ সময় যাবার পর আমি আমার কার্ড পাই নাই। প্রায় তিন বছর ঘুরে কার্ড পেয়েছি। এই কার্ডের জন্য তাদের কাছে কতবার তাদের কাছে গিয়েছি এখন বলে কি হবে। কার্ড পাবার জন্য তাদের পিছে ঘুরতে ঘুরতে রাগে মোটরসাইকেল বিক্রি করে দেই ।
১০ বছরের মেয়াদের জন্য কার্ড করেছিলাম পেয়েছি ৩ বছর পর। যখন কার্ড ছিলো না মোটরসাইকেল ছিলো আজ ড্রাইভিং লাইন্সেস কার্ড আছে মোটর সাইকেল নাই। প্রয়োজনে সময় পেলাম না। তার ভাষ্যমতে এখানে হাজার হাজার আবেদনকারী এখনও তাদের লাইসেন্স পান নাই। নাম মাত্র কিছু সংখ্যক লোক পেয়েছেন ।
অন্যদিক নাজমুল হাসান নামের এক যুবক বেকারত্ব ঘোচাতে গাড়ি চালনা পেশা হিসেবে নিতে ড্রাইভিং শেখেন । কিন্তু চাকরি পেতে লাগবে লাইসেন্স। সে আশায় আবেদনও করেছেন। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও মেলেনি সোনার হরিণ। চাকরি কিংবা লাইসেন্স দুটোই অনিশ্চিত তার।
নাজমুল হাসানের মতো প্রায় লাখ লাখ লাইসেন্স প্রার্থী আছেন এমন অনিশ্চয়তায়। জাল ড্রাইভিং লাইসেন্সের ব্যবহার ঠেকাতে ২০১১ সাল থেকে ইলেকট্রনিক চিপযুক্ত ডিজিটাল লাইসেন্স ব্যবস্থা চালু করে বিআরটিএ।
ঘরে বসেই অনলাইনে আবেদন করার ব্যবস্থা রাখা হয়। লার্নার কার্ড পাওয়ার পর লিখিত, মৌখিক ও ব্যবহারিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর মেলার কথা লাইসেন্স। অথচ সহজ এই পথটাই যেন আজ কঠিন। প্রতিটা ক্ষেত্রেই দীর্ঘ সময় ক্ষেপণ আবেদনকারীরা পড়েছে ভোগান্তিতে।
সূত্রমতে, ২০১৯ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত ১২ হাজার আবেদনকারীর ড্রাইভিং লাইন্সে পেন্ডিং ছিলো। পেন্ডিং থাকার কারণ সর্ম্পকে জানতে গিয়ে জানা যায় লাইসেন্স তৈরি করার জন্য ব্যান্ডরদের চুক্তি আকারে কাজ করতে দেওয়া হয়েছিল।
তাদের চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। তাদের অসম্পূর্ণ কাজের কারণে যথা সময়ে লাইন্সেস আবেদনকারীদের হাতে পৌঁছাতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। যার ফলে আবেদনকারীদের কার্ড পেন্ডিং পড়ে যায়।
সূত্রে আরো জানা যায় ৫হাজার লাইন্সেস কার্ড হয়ে গেছে যা ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালের আবেদনকারী কার্ড বিতরণ শেষ হবে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ২০২১ সালে আবেদনকারীদের পাবার কথা জানান।
এবিষয় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) নারায়ণগঞ্জ সার্কেল এর সহাকারী পরিচালক ইঞ্জি মো শামসুল কবীর জানান, আমাদের ৫ হাজারের মত আবেদনকারীর ড্রাইভিং লাইন্সেস এখন পর্যন্ত পায়নি।
আমাদের ব্যান্ডর ছিলো না তাই প্রিন্ট করা যায়নি যার ফলে আমাদের আবেদনকারীদের লাইসেন্স পেতে দেরি হয়েছে। আশা করছি এই সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যেই আবেদনকারীদের লাইসেন্স চলে আসবে। এবং সাথে সাথে তারা পেয়ে যাবে।