সিলেট বিভাগ
শ্রীমঙ্গলে ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের মহোৎসব

কে এস এম আরিফুল ইসলাম, মৌলভীবাজার: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়ন ও মির্জাপুর ইউনিয়ন অবৈধ বালু উত্তোলনের খনি নামে এলাকাবাসীর কাছে বেশ পরিচিত। যেখানে প্রতিনিয়ত ফসলি জমি থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে চলেছে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেট চক্র। কিন্তু পরিকল্পনাহীন যত্রতত্র বালু উত্তোলন পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এসব কার্যক্রম অবৈধ ঘোষণা করা হলেও প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে চলছে অবৈধভাবে রমরমা এসব বালুর ব্যবসা। এদিকে এর সাথে জড়িত রয়েছে উঠতি বয়সের কিছু নামমাত্র কার্ডধারি তথাকথিত সাংবাদিকরা। এদের কেউ কেউ সরাসরি অবৈধ বালু উত্তোলনের অংশিদার আবার কেউ কেউ মাসোহারা বেতন-ভাতায় নিয়োজিত বালুর হিসাবরক্ষক ও দালাল। এদের বিষয়ে সামনে আসতেই তোলপাড় চলছে উপজেলা জুড়ে সচেতন মহলে।
এদিকে শ্রীমঙ্গল উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়ন ও মির্জাপুর ইউনিয়নে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে বহু অভিযোগ পাওয়া যায়। অনেক জায়গায় এর সত্যতাও রয়েছে। তবে, এরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে সরাসরি কেউ মুখ খুলতে চায় না। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকারীরা এলাকার কৃষি জমি থেকে মেশিন দিয়ে দীর্ঘ দিন থেকে বালু উত্তোলন করে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সাধন করছে। তাদের উৎপাতে রাস্তাঘাট ভেঙে চুরমার হয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত ১২ সেপ্টেম্বর সোমবার সকাল ১১ টার দিকে উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়নে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালু বহনকারী ট্রাকের চাকায় রুমকী নামের প্রথম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হওয়ার ঘটনায় এ পথে অবৈধ বালু বহনকারী ট্রাক চলাচল বন্ধ ও ট্রাক চালকের শাস্তির দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করেছে স্থানীয় স্কুল শিক্ষার্থী ও অবিভাবকরা।
তাছাড়া উপজেলা ভুমি অফিস সুত্রে জানা যায়, উপজেলার ভুনবীর ইউনিয়ন, মির্জাপুর ইউনিয়ন, কালাপুর ইউনিয়ন, লছনা চৌমুহনা ও লংলিয়া ছড়ায় অবৈধভাবে বালু উত্তোলন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপজেলায় ৩১ টি বালুমহাল এর মধ্যে ২৯ টি ইজারা ছাড়া সিলিকা বালুমহাল চিহ্নিত করা হয়েছে এবং ২ টি সিলিকা বালুমহাল ইজারা দেওয়া হয়েছে।
বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০-এর ধারা ৫-এর ১ উপধারা অনুযায়ী বলা আছে, পাম্প বা ড্রেজিং বা অন্য কোনো মাধ্যমে ভূগর্ভস্থ বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। ধারা ৪-এর (খ) অনুযায়ী, সেতু, কালভার্ট, বাঁধ, সড়ক, মহাসড়ক, রেললাইন ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে বালু উত্তোলন নিষিদ্ধ। আইন অমান্যকারী দুই বছরের কারাদণ্ড ও সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।