জাতীয়নির্বাচনী হালচালরাজনীতি

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ খেলাফত মজলিসের চার দফা

 

এমদাদুল্লাহ্, বজ্রধ্বনি:
সোমবার (১৮ জুলাই) বেলা আড়াইটায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে খেলাফত মজলিসের সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

এতে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ জাতীয় সরকার, নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা, ইভিএম পরিহার, নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও নিরপেক্ষকরণের দাবি উল্লেখ্য করে চার দফা প্রস্তাব পেশ করেছেন দলের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের।

এসব প্রস্তাবাবলীর মধ্যে প্রথম দফায় রয়েছে- নির্বাচন কমিশনকে কার্যকর ও নিরপেক্ষকরণ। এর ব‍্যাখ‍্যায় বলা হয়েছে (ক) নির্বাচন কমিশনের কাজের ক্ষেত্রে সরকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ কোনভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, এমন নিশ্চয়তা থাকতে হবে। (খ) নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা ও নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যাবতীয় কার্য শেষ না হওয়া পর্যন্ত জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট, তথ্য ও আইন মন্ত্রণালয়সহ নির্বাচনের সাথে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্ত্রণালয় বিশেষত: মাঠ পর্যায়ের প্রশাসন যারা নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করবেন তাদেরকে নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকতে হবে। নির্বাচন কমিশন চাইলে তাদের যে কাউকে বদলী করতে পারবেন, এমন বিধান থাকতে হবে। (গ) নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব জনবলের মাধ্যমেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা নেয়া।

দ্বিতীয় দাবি- নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা। এর ব‍্যাখ‍্যায় রয়েছে (ক) নির্বাচনকে অর্থ ও পেশী শক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখতে হবে। সবার জন্যে সমান সুযোগ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনীয় নির্বাচনী আইন প্রণয়ন ও পদক্ষেপ নিতে হবে। (খ) ভোটারদের মধ্যে নিরাপত্তাবোধ নিশ্চিত করা ও যে কোনো অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি এড়াতে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা। (গ) প্রত্যেকটি নির্বাচনী বুথে সিসিটিভি স্থাপণ করতে হবে। (ঘ) সকল দলীয় প্রার্থীর ব্যক্তিগত প্রচারণা ছাড়া অন্যান্য আনুষ্ঠানিক নির্বাচনী প্রচারণার দায়িত্ব ও ব্যয় নির্বাচন কমিশন বহন করবে, এমন ব্যবস্থা করা। ব্যয়ের ক্ষেত্রে কোনো গুরুতর অনিয়ম প্রমাণিত হলে প্রার্থীতা বাতিল এমনকি নির্বাচিত হলেও তার পদ বাতিল ঘোষণা করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। (ঙ) সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিতের লক্ষ্যে বিদায়ী সংসদ ভেঙ্গে দেয়া অথবা দলীয় এমপি, মন্ত্রীদের পদত্যাগ করে নির্বাচনে অংশ নেয়া। প্রয়োজনে সংবিধানের সংশোধনী আনতে হবে।

তৃতীয় দফা- আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পরিহার করা। ইভিএম যেহেতু অদ্যাবধি জনগণ ও রাজনীতিকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি তাই আগামী জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম পরিহার করা। তবে, ভোটার ভেরিফাইএবল পেপার ট্রেলার সংযুক্ত করে স্থানীয় নির্বাচনে পরীক্ষা করা যেতে পারে। মেশিন যেহেতু মানুষ দ্বারা পরিচালিত হয় তাই সেগুলো ব্যবহার করার আগে রাজনৈতিক সমঝোতা ও সবদলের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থা চালু করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, রাজনৈতিক ঐকমত্য ছাড়া ইভিএম চালু করার চেষ্টা করলে সন্দেহ আরো বেশী প্রবল আকার ধারণ করবে, যা কোনো অবস্থায়ই কাম্য নয়।

চতুর্থ দফায় আছে- জাতীয় নির্বাচনকালীন সরকার। যার ব‍্যাখ‍্যায় আছে (ক) নির্বাচনের উপর আস্থা ফিরিয়ে আনা, সুষ্ঠু- অবাধ এবং নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ একটি সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। এর জন্য প্রয়োজনীয় সংলাপের সূচনা করা জরুরি। (খ) নির্বাচনকালীন সরকার শুধু সরকারের দৈনন্দিন কার্য সম্পাদন করবে। তার জন্যে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন করা যেতে পারে।

এক ঘন্টাব‍্যাপী অনুষ্ঠিত সংলাপে সংগঠনের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদের নেতৃত্বে খেলাফত মজলিসের ১১ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ গ্রহণ করেন। এর মধ্যে ছিলেন- দলের নায়েবে আমির মাওলানা সাখাওয়াত হোসাইন, মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, যুগ্মমহাসচিব এডভোকেট জাহাঙ্গীর হোসাইন, মুহাম্মদ মুনতাসির আলী, ড. মোস্তাফিজুর রহমান ফয়সল, অধ্যাপক মো. আবদুল জলিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা তোফাজ্জল হোসেন মিয়াজী, এডভোকেট মো. মিজানুর রহমান, প্রশিক্ষণ সম্পাদক অধ্যাপক কাজী মিনহাজুল আলম ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মাওলানা সাইফ উদ্দিন আহমদ খন্দকার।

সংলাপে নির্বাচন কমিশনের পক্ষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারবৃন্দ ও নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close