চট্টগ্রামচট্টগ্রাম বিভাগ

ধসের ঝুঁকিতে পরীর পাহাড়: চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন

চট্টগ্রাম নগরীর ‘পরীর পাহাড়ের’ বিভিন্ন ঢালু অংশে ফাটল দেখা দেওয়ায় ভূমিধসের চরম ঝুঁকি তৈরি হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা প্রশাসন। চলতি বর্ষায় যেকোনো সময় পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ ধসে প্রাণহানি ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

পরীর পাহাড়ে বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, জেলা প্রশাসন, আদালত, আইনজীবী সমিতির বিভিন্ন স্থাপনা রয়েছে। পাহাড়ের কর্তৃত্ব নিয়ে জেলা প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির মধ্যে সৃষ্ট বিরোধের মধ্যে এ ঝুঁকির কথা এসেছে।

বৃহস্পতিবার (৩০ জুন) বিকেলে ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ অধিদফতর, গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তাদের নিয়ে পরীর পাহাড়ের বিভিন্নস্থান পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। এ সময় নেজারত শাখার যুগ্ম জেলা জজ খায়রুল ইসলামও ছিলেন।

জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পরিদর্শনের পর সরকারি সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারাও যেকোনো সময় পরীর পাহাড়ে বড়ধরনের ধসের আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম নগরীর দক্ষিণে লালদিঘী এলাকায় ‘পরীর পাহাড়’ নামে পরিচিত পাহাড়টিতে গত বছর জেলা আইনজীবী সমিতি নতুন দু’টি ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নিলে আপত্তি তোলে জেলা প্রশাসন। সমিতির ওই দুই নতুন স্থাপনা নির্মাণকে জেলা প্রশাসন বলছে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’। আর সমিতির দাবি, নিয়ম মেনে ‘অনুমোদন’ নিয়েই তারা ভবন করছেন। এরপর পাহাড়ে নতুন স্থাপনা নির্মাণ না করতে এবং অবৈধ স্থাপনা অপসারণ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে একটি প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে তাতে সায় দেন প্রধানমন্ত্রী।

এ অবস্থায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন পাহাড়টিকে ‘পরীর পাহাড়’ হিসেবে উল্লেখ করে সেটি সংরক্ষণের জন্য সকল স্থাপনা উচ্ছেদে অনড় অবস্থানের কথা জানায়। আইনজীবী সমিতি জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। বিবাদ গড়ায় আদালতেও। এ অবস্থায় গত ৩১ জানুয়ারি আইনজীবী সমিতি ‘একুশে ভবন’ নামে নতুন একটি বহুতল ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে। কিন্তু জেলা প্রশাসনও তাদের বিরোধিতায় অনড় আছে।

এর মধ্যে জুনের মাঝামাঝিতে চট্টগ্রামে চারদিনের টানা বৃষ্টিতে পরীর পাহাড়ে ‘অ্যাডভোকেট ক্লার্ক ও স্ট্যাম্প ভেন্ডর সমিতি’র স্থাপনার পেছনে মাটি ধসে পড়ে। বৃহস্পতিবার ওই স্থানসহ পরীর পাহাড়ের আরও বিভিন্ন অংশ পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) ও সহকারী কমিশনার মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি বিভিন্ন সংস্থার বিশেষজ্ঞ কর্মকর্তাদের জেলা প্রশাসক স্যার পরীর পাহাড়ের বিভিন্ন অংশ দেখিয়েছেন। উনারা মতামত দিয়েছেন, পরীর পাহাড়ের বিভিন্ন জায়গায় বিশেষ করে ঢালু জায়গায় অপরিকল্পিতভাবে ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। যার কারণে পুরো পাহাড়টিই এখন ঝুঁকির মুখে। বিল্ডিং কোড না মেনে ভবন তৈরির কারণে পাহাড়ে ঢালু অংশ মাত্রাতিরিক্তভাবে ধসে পড়ছে। পাহাড়ের কয়েকটি অংশ চরমভাবে ধসের ঝুঁকিতে আছে বলে মত দিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। জেলা প্রশাসক স্যার গণপূর্ত বিভাগকে সেগুলো দেখিয়ে রিটেইনিং ওয়াল নির্মাণে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।’

জেলা প্রশাসনের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পরীর পাহাড়ে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত, জেলা ও দায়রা জজ আদালতসহ মোট ৭৬টি আদালত আছে। পাহাড়ের পাদদেশে আছে বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম শাখা, সাবরেজিস্ট্রি অফিস এবং চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অফিস।

১৯৭৭ সালে তৎকালীন জেলা প্রশাসক পরীর পাহাড়ের এক নম্বর খাস খতিয়ানভুক্ত জমি থেকে চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নামে প্রায় ১৩ শতক জমি লিজ দলিলমূলে বরাদ্দ দেন। এরপর থেকে কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি খাস জমি বেদখল করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে এ পর্যন্ত ৫টি ঝুঁকিপূর্ণ বহুতল ভবন নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম আইনজীবী সমিতি।

পাহাড়ের ঢালে অনুমোদনহীন এসব ভবনের চাপে পরীর পাহাড়ে ধস এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমানা দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close