জাতীয়
জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না— ডিবির উদ্দেশে হাইকোর্ট

জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না। যাকে খুশি ধরে নিয়ে গিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন, ছবি তুলে আবার সেটি প্রচার করেন।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘কথিত আটক’ ছয়জন সমন্বয়ককে অবিলম্বে মুক্তি দিতে ও দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি না চালাতে নির্দেশনা চেয়ে করা রিটের শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে হাইকোর্ট এ মন্তব্য করেন।
এদিন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি এস এম মাসুদ হোসাইন দোলনের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চে ওই রিটের ওপর শুনানি হয়।
আজ শুনানিতে আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নাম দিয়ে এখন যে কার্যকালাপ হচ্ছে তা মেনে নেওয়া যায় না। ‘৭১ সালে দেখেছি পাকিস্তানি হানাদাররা রাতের বেলা ব্লক রেড দিয়ে বাসায় বাসায় খোঁজ করা হতো মুক্তিবাহিনী আছে কি না। যে দেশটা আমরা ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময় স্বাধীন করেছি, সেই দেশে ২০২৪ সালে রাত ২টা-৩টায় ব্লক রেড দিয়ে বাসায় ছাত্র আছে কি না খোঁজা হয়। যদি ছাত্র থাকে তাহলে তাদের মোবাইল ফোন চেক করা হয়। রাস্তাঘাটেও ফোন চেক করা হয়। আমার প্রশ্ন এটা হচ্ছে কোন আইন বলে? কোন অধিকার বলে? আইন অনুযায়ী ব্যক্তিগত মোবাইল ফোন চেক করার অধিকার কারও নেই।
শুনানিতে ব্যারিস্টার সারা হোসেন বলেন, আমরা এসেছি আন্দোলনকারী ছাত্রছাত্রীদের ওপর গুলি না করার জন্য। ছয়জনকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কাউকে নিরাপত্তার স্বার্থে তুলে নেওয়া যায় না। তাদেরকে যেন মুক্তি দেওয়া হয়। বা কোর্টে প্রডিউস করা হয়। একজনকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে নিরাপত্তার নামে তুলে নিয়ে রাখা যাবে এটা কোথায় আছে। সংবিধানের ৬১ অনুচ্ছেদে অনুযায়ী এভাবে হেফাজতে রাখা বেআইনি। উচ্চ আদালতের অনেক নির্দেশনা আছে। এই আদালত নির্দেশ দিতে পারেন। তারা বলছেন, যে ছয়জন তাদের হেয়াজতে আছে। এখন প্রশ্ন হলে তাদের সম্মতি নিয়ে তাদের হেয়াজতে রাখা হয়েছে কিনা। এ বিষয়ে যে কোনো ব্যক্তি আবেদন করতে পারেন। আমরা আমাদের বিবেকের তাগিদে এসেছি।
মেহেদী হাছান আরও বলেন, দেশে যদি মব (বিশৃঙ্খলা) হয় সেখানে কি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আইন প্রয়োগ করতে পারবে না? যারা মারা গেছে তাদের মৃত্যুর জন্য যারা দায়ী তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ যদি বেআইনিভাবে গুলি করে থাকে তাহলে তদন্ত সাপেক্ষে তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিটি ঘটনার তদন্ত হবে।
এই রিট আবেদনের অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে। আমরা দেখতে পেয়েছি যে, ডিবি অফিসে ছয়জন কাটা চামচ দিয়ে খাচ্ছে।
তখন আদালত বলেন, জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না। যাকে খুশি ধরে নিয়ে গিয়ে খাবার টেবিলে বসিয়ে দেন, ছবি তুলে আবার সেটি প্রচার করেন।
এ সময় আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে বলেন, জাতিকে নিয়ে মশকরা করবেন না।
অরিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল শেখ মোহাম্মদ মোর্শেদ বলেন, দুই দিক থেকে ইনজুরি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও আক্রান্ত।
এ সময় আদালত বলেন, আটকের কথা বলে কি দিনের পর দিন রেখে দেবেন। এরপর শেখ মো. মোর্শেদ বলেন, যে ছয়জনের কথা এসেছে তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ আদালতে আসেননি।
তখন আদালত বলেন, আজকের প্রথম আলো দেখেন। তাদেরকে হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
মেহেদী হাছান চৌধুরী আরও বলেন, প্রতিটি ঘটনারই বিচার হবে। সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা হবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন।
এরপর আদালত আগামীকাল এ বিষয়ে উভয়পক্ষের আরও শুনানি শেষে আদেশের জন্য দিন ধার্য করেন।
এর আগে, আজ সকালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশের গুলি না চালাতে এবং ডিবি হেফাজত থেকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়কের মুক্তির দিতে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মানজুর আল মতিন প্রীতম ও আইনুন্নাহার সিদ্দিকা লিপি এ রিট দায়ের করেন।
রিটে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী প্রধানকে বিবাদী করা হয়েছে।
গত ১০দিন আগে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় সহিংসতা ও বিভিন্ন সরকারি স্থাপনায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
এদিকে গত কয়েকদিনে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে গোয়েন্দা হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে রোববার (২৮ জুলাই) রাতে সরকারের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-ছাত্রীদের মৃত্যুর প্রতিটি ঘটনা, হত্যা, অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর, নাশকতা ও নাশকতাজড়িত পরবর্তী সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ীদের যথাযথ তদন্তের মাধ্যমে জবাবদিহি করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
গত ১৮ জুলাই গঠিত সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারপতির নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিশন ইতোমধ্যেই এই বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। এছাড়া হত্যাকাণ্ড ও সহিংসতার ঘটনায় বেশ কয়েকটি বিভাগীয় তদন্তও পরিচালিত হচ্ছে।
তবে সাম্প্রতিক সহিংসতায় এ পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।
তিনি বলেন, কখনো বলা হচ্ছে ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আসলে মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। ছাত্র কতজন এখনও বিস্তারিত জানা যায়নি। আরও যাচাই করে তথ্য জানানো হবে।
নিহতদের মধ্যে কতজন নারী, কতজন পুরুষ কিংবা কোন পেশার মানুষ কতজন সেটি নির্ণয়ের কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন আসাদুজ্জামান খান।