লেখা-পড়াসারাদেশ

ভৈরবে শিক্ষার্থীদের থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের অভিযোগ

ভৈরব সরকারি কে. বি পাইলট মডেল হাই স্কুলে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের উপর বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত ক্লাস চাপিয়ে অর্থ আদায়ের অভিযোগ

মোঃ রাফি তালুকদার ভৈরব(কিশোরগঞ্জ)প্রতিনিধিঃ কিশোরগঞ্জের ভৈরব সরকারি কে. বি পাইলট মডেল হাই স্কুলে জোরপূর্বক শিক্ষার্থীদের উপর বাধ্যতামূলক অতিরিক্ত ক্লাস চাপিয়ে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায় , প্রতিটি শ্রেণীর তিনটি শাখায় ৬০ জন করে ১৮০ জন শিক্ষার্থী করে ষষ্ঠ শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণীতে পর্যন্ত পড়াশোনা করছেন। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছে এ এক্সট্রা ক্লাস। এর জন্য শিক্ষার্থীদের মাসিক ফি বাবদ ৬শত টাকা ও পরীক্ষা ফি বাবদ ৫০ টাকা করে দিতে হবে। যে জায়গায় স্কুলটির সরকারি মাসিক বেতন শুধু মাত্র ১০ টাকা। এই বিষয়ে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, স্কুলে বাধ্যতামূলক এক্সট্রা ক্লাস শুরু হয়েছে। আমার দুই ছেলে। বড় ছেলে কে.বি স্কুলে পড়ে আর ছোট ছেলে কিন্ডারগার্টেনে পড়ে। আমার স্বামী রাজমিস্ত্রীর কাজ করে। শুধু তার উপার্জন দিয়ে তাদের পড়াশোনার খরচসহ পুরো সংসারের খরচ চালাতে হয়। এতেই আমাদের হিমসিম খেতে হয়। ভেবে ছিলাম বড় ছেলেকে যখন সরকারি স্কুলে ভর্তি করাইছি তাহলে কম টাকায় পড়াতে পারব। কিন্তু কিছুদিন আগে স্কুলে থেকে বলা হয়েছে এক্সট্রা ক্লাস করতে হবে যা সবার জন্য নাকি বাধ্যতামূলক। এর জন্য প্রতি মাসে পরীক্ষার ফি সহ ৬শ ৫০ টাকা দিতে হবে। আমাদের পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিই ভালো না। তার উপর স্কুলের জোরপূর্বক এর নিয়মের কারণে তাদের পড়াশোনা খরচসহ সংসার চালাতে এখন কষ্ট হবে যাবে। আমরা এক্সট্রা ক্লাস চাই না। আরেক শিক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমার স্বামী চা বিক্রি করে পরিবার চালাই। স্কুলে এই নিয়ম করাতে এতো টাকা দিয়ে প্রতি মাসে পড়ালেখা করানো আমাদের জন্য এখন কষ্ট হয়ে যাবে। তার সাথে আবার নাকি আলাদা স্কুলের বেতনও দিতে হবে। এছাড়া আরও কয়েকজন অভিভাবক বলেন, স্কুলে অনেক শিক্ষার্থী আছে যাদের পরিবার আর্থিকভাবে অসচ্ছল। তাই তারা তাদের ছেলে মেয়েদের কম টাকায় সরকারি স্কুলে পড়াতে চাই। কিন্তু স্কুল কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উপর জোরপূর্বক এক্সট্রা ক্লাস চাপিয়ে দিয়ে যে ফি নির্ধারণ করেছে তা অনেক অভিভাবকের উপর এক প্রকার জুলুম হয়ে যাবে। তার সাথে আবার স্কুলের বেতনও আছে। তাই আমরা এই বাধ্যতামূলক এক্সট্রা ক্লাস চাই না। ষষ্ঠ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের মার্চ মাস থেকে মে মাস পর্যন্ত তিন মাসের শীট দিয়েছে এক্সট্রা ক্লাসের। প্রতি মাস শেষে এই শীটের মধ্য থেকে পরীক্ষা নেয়া হবে বলা হয়েছে। এই পরীক্ষার জন্য ৫০ টাকা ফি দিতে হবে এবং এক মাস ক্লাসের জন্য সাথে আরো ৬শত টাকা দিতে হবে । সপ্তম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী বলেন, সকাল সোয়া ১০ থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত এর মধ্যে আমাদের তিনটা ক্লাস হয়। আর এই ক্লাসগুলো এক্সট্রা ক্লাস হিসেবেই করানো হয়। যদি কেউ এক্সট্রা ক্লাস করতে না আসে তাহলে স্যাররা বলে টিসি নিয়ে চলে গিয়ে অন্য স্কুলে সপ্তাহে একদিন ক্লাস করতে। তাহলে আর এই স্কুলে সপ্তাহে ৬দিন ক্লাস করতে আসতে হবে না। এছাড়া দশম শ্রেণীর আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমরা যদি এক্সট্রা ক্লাস না করি তাহলে আমাদের এ্যাসাইমেন্ট জমা নিবে না বলা হয়েছে। এমনকি এক্সট্রা ক্লাস শুরু হওয়ার পর যারা ক্লাস করতে আসে নাই তারা শ্রেণি শিক্ষকের কাছে তাদের এ্যাসাইমেন্ট জমা দিতে গেলে নিতে চাইনি। এই বিষয়ে ভৈরবে সরকারি কে. বি পাইলট মডেল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো.নুরুল ইসলাম বলেন, করোনার কারণে আড়াই বছর ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার বিঘ্ন ঘটে। আর এই আড়াই বছর পড়ালেখা থেকে দূরে থাকাতে তাদের যে ঘাটতি হয়েছে এই ঘাটতিটা পূরণের জন্য ও পড়াশোনার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে আমি আমার স্কুলের শিক্ষকদের নিয়ে স্কুলের ক্লাসসমূহের বাহিরে অতিরিক্ত সময়ে এই এক্সট্রা ক্লাসের ব্যবস্থা করেছি যেন ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার মান ও রেজাল্ট ভালো হয়। আমি স্কুল ও ছেলেমেয়ে ভালো রেজাল্ট এর জন্য এই এক্সট্রা ক্লাসটা পুরো বছরই চালিয়ে যেতে চাই। এছাড়া এক্সট্রা ক্লাসের জন্য টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরোও বলেন, সরকারি নির্ধারিত অনুযায়ী যে ফি ধার্য ধরা আছে ঐ রকম ফি আমি নেই নাই। অর্ধেকের চেয়ে আরো অনেক কম নিচ্ছি। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী সপ্তাহে ৩ দিন ক্লাস করালে মাসে ১২শ টাকা ফি ধার্য করা আছে। আর আমি সপ্তাহে ৬ দিন ক্লাস করিয়ে পরীক্ষার ফিসহ ৬শত ৫০ টাকা নির্ধারণ করেছি। এর পরেও যদি কোনো অক্ষম অভিভাবক আমার কাছে আসে এবং আমাকে অবহিত করে তাহলে আমি তা মওকুফ করে দিব। এছাড়া প্রধান শিক্ষক মো. নুরুল ইসলামের দাবি আইন মেনেই নেয়া হচ্ছে অতিরিক্ত ক্লাস এবং মাসিক ফি ১২শত টাকার পরিবর্তে অর্ধেক নেয়া হচ্ছে মাত্র ৬শত টাকা। স্কুলের সভাপতি ও ইউএনও মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ বলেন, বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত ক্লাসের নামে টাকা নেয়াটাও বেআইনি। দুর্বল শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে বিশেষ ক্লাস নিতে পারে। নিজের ইচ্ছাতে যদি কোন শিক্ষার্থী ক্লাস করতে চাই সেটা অন্য বিষয়। তবে কারো উপর চাপিয়ে দেয়া অন্যায়। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবেন বলে জানান তিনি ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close