জাতীয়রংপুর বিভাগ
নিষিদ্ধ সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগ মিছিল করলেই গ্রেফতার: আইজিপি

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ময়নুল ইসলাম বলেছেন, বাংলাদেশ ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এখন থেকে এই সংগঠনটি সম্পন্ন নিষিদ্ধ। ছাত্রলীগের হয়ে যদি কেউ কখনো মিছিল করে বা ছাত্রলীগ যদি মিছিল করে সঙ্গে সঙ্গেই গ্রেফতার করা হবে।
শনিবার (২৬ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৩টায় রংপুর জেলা পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ৬ষ্ঠ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার গণঅভ্যূত্থানে শাহাদাতবরণকারী ও আহত বীরদের সম্মানে উৎসর্গীকৃত’ সুধী সমাবেশে এসব কথা বলেন।
এর আগে, আইজিপি ময়নুল ইসলাম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-আন্দোলনের প্রথম শহিদ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের বাড়িতে যান। সেখানে তার কবর জিয়ারত শেষে তার মা-বাবা ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে জড়িত পুলিশের সদস্যদের বিচারের আওতায় আনা হবে। শুধু সাময়িক বরখাস্ত বা বদলিতেই সীমাবদ্ধ নয়, যারা যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সুধী সমাবেশে আইজিপি বলেন, ‘জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণসহ বিভিন্ন অপরাধে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ২১ পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জুলাই আন্দোলনে যেসব পুলিশ সদস্য জড়িত আছে তাদের চিহ্নিতকরণে আমাদের পুলিশ বাহিনী কাজ করছে। কোন অপরাধীই ছাড় পাবে না; সবাইকে বিচারের আওতায় আনা হবে। শুধুমাত্র সাময়িক বরখাস্ত কিংবা বদলিতেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। যারা আসল অপরাধী তারা তো বিচারের আওতায় আসবেই এবং যারা সহযোগী তারাও বিচারের আওতায় আসবে।’
পুলিশকে প্রতিপক্ষ না ভাবার অনুরোধ জানিয়ে আইজিপি বলেন, ‘পুলিশ জনগণের বন্ধু হতে চায়। আপনারা যদি পুলিশকে প্রতিপক্ষ ভাবেন তাহলে পুলিশের সঙ্গে জনগণের একটা বড় ধরনের গ্যাপ তৈরি হবে। আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আস্থার জায়গাটা ফিরিয়ে আনার। পুলিশের গুটিকয়েক সদস্যের কারণে পুরো বাহিনীর প্রতি মানুষের আস্থাটা উঠে যাক সেটাও আমরা চাই না ‘
আইজিপি বলেন, ‘বিগত সময় গুলোতে দেখা গিয়েছে যার হাতে বৈধ অস্ত্র থাকার কথাই নয় তার হাতেও অবৈধ অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছিল। আমরা সেগুলো উদ্ধার করার চেষ্টা করছি। হয়তো খুব দ্রুত সময়ের মধ্যেই এসব অবৈধ অস্ত্রগুলো সরকারের কাছে জমা পড়বে।’
ছাত্রলীগের মতো একটি সন্ত্রাসী সংগঠনের যেসব নেতাকর্মীরা বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজগুলোতে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করে হামলা, হত্যা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, হলের সীটদখলসহ যেসব পরিস্থিতি তৈরি করে তারাই পরবর্তীতে বিসিএস দিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে পুলিশ বাহিনীতে এসে পুলিশ বাহিনীকে বিতর্কিত করেছে। ছাত্রলীগের মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের সদস্যদের পুলিশ বাহিনীতে এনে বাজে সংস্কৃতি চর্চা করা হয়েছে, সেটি দ্রুতই সংস্কার করা হবে।’
রাজনীতিবিদদের উদ্দেশ্যে আইজিপি আহ্বান জানিয়ে বলেন, অতীতে অনেক রাজনীতিবিদ পুলিশকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে। আবার যখন ছাত্রলীগ পুলিশ বাহিনীতে এসেছে উল্টো তারাও আবার রাজনীতিকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে— এই চর্চা বন্ধ করতে হবে। পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্যে আহ্বান কেউ যদি রাজনীতি করতে চান সেটাই পুলিশের চাকরি ছেড়ে দিয়ে রাজনীতিতে যোগদান করুন।
‘আবু সাঈদ হত্যাসহ বিভিন্ন জেলায় যে সকল ছাত্রজনকে হত্যা করা হয়েছে, যে সকল আন্দোলনকারী পঙ্গুত্ববরণ করেছে, এই সব ঘটনা নিয়ে যতগুলো মামলা হয়েছে সবগুলো মামলায় পুলিশ তদন্ত করছে। যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে বিচারের আওতায় আনা হবে। আমাদের পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন কাজ করছে। আপনারা চিন্তিত হবেন না; অপরাধীদের পুলিশ খুঁজে বের করে শাস্তির মুখোমুখি করবেই।’
আলোচনা সভায় রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, মহানগর পুলিশ কমিশনার মজিদ আলী, রংপুর পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শরীফ উদ্দিনসহ পুলিশের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।