কিশোরগঞ্জ
কিশোরগঞ্জের ৬টি আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ঘোষণা

স্টাফ রিপোর্টার, বজ্রধ্বনি:
আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করেছে জেলা খেলাফত মজলিস। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের (৩৮ নং) নিবন্ধিত দেওয়াল ঘড়ি প্রতীকের এ দলটির কিশোরগঞ্জের তৃণমূলেও রয়েছে সাংগঠনিক কাজের বিস্তৃতি ও মজবুতি।
দলের নেতৃবৃন্দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই অভ্যুত্থান পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনে আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রত্যেক সংসদীয় আসনে সম্ভাব্য প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা তৈরি করে কেন্দ্রে জমা দেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ১২ এপ্রিল সারাদেশ চিঠি ইস্যু করা হয়। এর প্রেক্ষিতে কিশোরগঞ্জ জেলা খেলাফত মজলিস জেলা কমিটির বৈঠক করে এবং তৃণমূলের প্রস্তাবণার প্রেক্ষিত তালিকা তৈরি করে গত ১৫ মে কেন্দ্রে প্রেরণ করে।
গত ১৭ মে দলের মহাসচিব ড. আহমদ আবদুল কাদেরের সাথে ঢাকায় কেন্দ্রীয় অফিসে গিয়ে সাক্ষাৎ করে কিশোরগঞ্জ জেলা খেলাফত মজলিসের একটি প্রতিনিধি দল। এ প্রতিনিধি দলে সংগঠনের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুল আহাদ, সাধারণ সম্পাদক হাফেজ মাওলানা এমদাদুল্লাহ্, সহ সভাপতি মো. মুজিবুর রহমান, মুফতি শহীদুল্লাহ্ খান, সহ সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমদ, মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাহেল, ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা অলীউর রহমান অংশগ্রহণ করেন। সাক্ষাতকালে কিশোরগঞ্জের সর্ব শেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও সাংগঠনিক কাজের সার্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। এসময় দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিজানুর রহমান উপস্থিত ছিলেন।
কিশোরগঞ্জ জেলা নির্বাহীর বৈঠকের সিদ্ধান্ত এবং জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা ও সংগঠনের প্রতিষ্ঠাকালীন জেলা সভাপতি মাওলানা হিফজুর রহমান খানের সাথে মতবিনিময় করে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে (৩ জুন) মঙ্গলবার সন্ধ্যায় খেলাফত মজলিস কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার ফেসবুক পেইজে প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেন সংগঠনের জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল্লাহ্। ঘোষিত তালিকানুযায়ী জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে প্রার্থীরা হচ্ছেন-
কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) আসনে সংগঠনের জেলা শাখার প্রধান উপদেষ্টা শায়খুল হাদিস মাওলানা হিফজুর রহমান খান। তিনি ১৯৮৯ সালের ৮ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাকালীন কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি ছিলেন। তিনি একসময় কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি বিদ্যাপীঠ আল জামিয়াতুল ইমদাদিয়ার মুহাদ্দিস ছিলেন। বর্তমানে জেলা শহরের বড় বাজারে অবস্থিত মার্কাজ মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং আলহাজ্ব শামসুদ্দিন ভূঞা জামিয়া ইসলামীয়া ও খালেদা আক্তার কওমি মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল ও শায়খুল হাদিস হিসেবে কর্মরত আছেন। কিশোরগঞ্জের একজন প্রবীণ আলেম হিসেবে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিত ও গ্রহণ যোগ্যতা। আলেম উলামার জেলা হিসেবে পরিচিত কিশোরগঞ্জ সদরের এ আসনে অন্যান্য ইসলামী ইসলামী দলগুলোর যেসব প্রার্থীরা রয়েছেন তাদের অধিকাংশ হিফজুর রহমান খানের ছাত্র। সে হিসেবে ইসলামী দলগুলোর যৌথ নির্বাচন হলে উচ্চ শিক্ষিত ও ক্লিন ইমেজের ব্যক্তি হিসেবে মাওলানা হিফজুর রহমান খান ভালো কিছু করবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদরের এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছিলেন বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড -বেফাকের সাবেক মহাসচিব মাওলানা আতাউর রহমান খান।
কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) আসনে রয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আলহাজ্ব মাওলানা ছাঈদ আহমদ। তিনি এর আগে সংগঠনের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দীর্ঘ ২০ বছর দায়িত্ব পালন করেছেন। একসময় তিনি কটিয়াদী উপজেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি ছিলেন। তিনি পেশাগত ভাবে একজন ব্যবসায়ী। দীর্ঘ রাজনীতির কারণে তৃণমূলে রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি।
কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) আসনে আছেন খেলাফত মজলিসের কিশোরগঞ্জ শহর শাখার সভাপতি প্রভাষক হাফেজ মাওলানা আতাউর রহমান শাহান। সাবেক এ ছাত্র নেতা পেশাগতভাবে শিক্ষককতার সাথে সম্পৃক্ত আছেন। তিনি কওমি ও আলীয়া মাদরাসা শিক্ষা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স করেছেন। বর্তমানে তিনি পিএইচডি করছেন। কওমি মাদরাসা ও আলেম-উলামা অধ্যুষিত এলাকা হিসেবে পরিচিত তাড়াইল উপজেলার পাশাপাশি করিমগঞ্জ উপজেলাতেও রয়েছে ব্যাপক মাদরাসা। সে হিসেবে তরুণ ভোটার, আলেম-উলামা ও ইসলাম প্রিয় জনতার কাছে একজন গ্রহণযোগ্য ও উচ্চশিক্ষিত প্রার্থী হিসেবে প্রভাষক আতাউর রহমান শাহানের রয়েছে আস্থার জায়গা।
কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) আসনে প্রার্থী হচ্ছে সংগঠনের জেলা শাখার ছাত্র ও যুব বিষয়ক সম্পাদক মাওলানা অলীউর রহমান। এর আগে তিনি বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস ও ইসলামী যুব মজলিসের কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন । ইটনা উপজেলার পাঁচ কাহনীয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান অলীউর রহমান কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ ডিগ্রী দাওরায়ে হাদিস এবং আলীয়া মাদরাসা থেকে কামিল পাশ করার পাশাপাশি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তরুণ এ আলেম শিক্ষকতার পেশায় নিয়োজিত। তিনি কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের আল আজহার মাদরাসা এবং আন নূর স্কুল এন্ড মাদরাসাসহ বেশ কয়েকটি দীক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক হিসেবে দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করছেন।
কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) আসনে রয়েছেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও কিশোরগঞ্জ জেলা খেলাফত মজলিসের সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা আব্দুল আহাদ। তিনি খেলাফত মজলিসের প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত। তিনি অতীতে সংগঠনের জেলা শাখার সহ সভাপতি ও ভৈরব উপজেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় তিনি ভৈরব উপজেলা চারদলীয় জোটের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেছেন। পেশাগত ভাবে তিনি একজন শিক্ষক ও চিকিৎসক। দীর্ঘ সময় ধরে সিলেটসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষকতা করে আসছেন। বর্তমানে তিনি রাজধানী ঢাকায় দু’টি মাদরাসায় ও বাজিতপুর উপজেলার দু’টি মাদরাসার শায়খুল হাদিসের পাশাপাশি বেশ কয়েকটি মাদরাসার পরিচালনার সাথে যুক্ত রয়েছেন। হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শাইকুল ইসলাম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর (রহ.) প্রবীণ খলিফা মাওলানা আব্দুল আহাদ কিশোরগঞ্জ জেলা ইমাম উলামা পরিষদের সহ সভাপতি ও বাজিতপুর উপজেলা ইমাম উলামা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন। হাজার হাজার ছাত্রের উস্তায প্রবীণ এ আলেমের বাজিতপুর ও নিকলীর প্রত্যন্ত গ্রামঞ্চলের সর্বসাধারণের কাছেও রয়েছে তার ব্যাপক পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তার যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) আসনে সংগঠনের জেলা শাখার সহ সাধারণ সম্পাদক ও ভৈরব উপজেলার সভাপতি মাওলানা সাইফুল ইসলাম সাহেল। তিনি ছাত্র জীবনে বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্র মজলিস কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি বর্তমানে ভৈরব ইসলাহুল উম্ম মাদরাসার পরিচালক। পাশাপাশি একটি মসজিদের ইমাম ও খতিবের দায়িত্বে আছেন। সাবেক এ ছাত্র নেতা একজন মুক্তিযোদ্ধা ও অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তার সন্তান। তরুণ এ আলেম স্থানীয় বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। ছাত্র জীবন থেকেই বিভিন্ন ধরনের সমাজসেবা মূলক কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। স্থানীয়ভাবে তরুণ আলেম ও ছাত্রদের মধ্যে রয়েছে তার ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা। কিশোরগঞ্জের সবকটি আসনে দলীয় প্রার্থী ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে খেলাফত মজলিস কিশোরগঞ্জ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য এমদাদুল্লাহ্ বজ্রধ্বনিকে বলেন, অন্যান্য দলের মতো আমাদের দলে নিজ ইচ্ছায় কেউ প্রার্থী হয়নি বরং তৃণমূলের মতামতের ভিত্তিতে প্রার্থী ঠিক করা হয়েছে। কোনো কোনো আসনে বিকল্প প্রার্থীও রাখা হয়েছে। এতে প্রার্থীদের মাঝে কোনো প্রকার ক্ষোভ বা বিরোধিতা নেই। প্রার্থীদের মতামত ও জেলা কমিটির সভার সিদ্ধান্তক্রমে কেন্দ্রে তালিকা প্রেরণ করা হয়। পরবর্তীতে কেন্দ্রীয় নির্দেশনার আলোকে আমি প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করেছি। কেন্দ্রীয় সংগঠনের পক্ষ থেকে ওই সম্ভাব্য প্রার্থীদের স্ব স্ব সংসদীয় আসনে তৎপরতা জোরদার করার আহ্বান জানানো হয়েছে। সাবেক ছাত্র নেতা এমদাদুল্লাহ্ আরো জানান, নির্বাচনের পূর্বে ইসলামী দলগুলোর ঐক্যের সম্ভাবনা রয়েছে। হতে পারে ইসলামী দলগুলোর পক্ষ থেকে একটি আসনে যেকোনো একটি দলের প্রার্থী থাকবে। একটি প্রতীক থাকবে। একেক আসনে একেক প্রতীকে নির্বাচন হতে পারে, তবে একই আসনে একাধিক ইসলামী দলের প্রার্থী থাকবে না। এর ভিত্তিতে যাকে যে আসনেই প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হবে, সেক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ছাড়ের মানসিকতা নিয়েই খেলাফত মজলিসের প্রার্থীরা কাজ চালিয়ে যাবে। আমরা বিভেদ নয়, ঐক্য চাই। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র চাই। সুরাং ঐক্যের ক্ষেত্রে যেকোনো দলের প্রার্থী হোক, আমরা ন্যায় প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করবো, ইনশাআল্লাহ্।