
বিশেষ প্রতিনিধিঃ
বেশিরভাগই কলেজ পড়ুয়া, নয়তো বেসরকারি ভার্সিটির ছাত্রী। খোলামেলা মনের চটপটে সভাবের মেয়ে হিসেবেই নিজেকে উপস্থাপন করেন। পরিচয় পর্বে কিংবা সামান্য ঘনিষ্ঠতার সূত্রেই দ্বিধাহীন ভাবেই বলে দেন যে, পড়াশুনার সূত্রে বাবা মা রক্ষণশীল কোনো ছাত্রী হোস্টেলে রেখে গেছেন, কিন্তু হোস্টেল লাইফটি তার মোটেও পছন্দের নয়। নিজেই গোপনে ছোট ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে থাকেন অথবা থাকবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ধনাঢ্য পুরুষকে ফাঁদে ফেলে বø্যাকমেইলিংয়ের টোপ ফেলা হয় এমন সাদামাটা ভাবেই। রাজধানীর সাধারণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি থেকে অভিজাত পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত পার্টি পর্যন্ত সর্বস্তরেই এ টোপ ফেলা মেয়েদের অবাধ বিচরণ রয়েছে। তারা টার্গেট করে ফাঁদ পাতে এবং শিকার নিশ্চিত করেই লিভ টু গেদারের জন্য প্রস্তুতি নেয়। সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় অতিগোপনে মেলামেশার ভান ধরলেও বাস্তবে এ সম্পর্কের সকল দৃশ্যপট গোপনে ক্যামেরাবন্দী হয়ে থাকে। এখান থেকেই শুরু হয় ব্ল্যাকমেইলিংয়ের সূত্রপাত। সংঘবদ্ধ চক্রের অন্য সদস্যরা এসব ভিডিওচিত্র পরিবার পরিজনের কাছে পৌঁছে দেওয়া কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এককালীন মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়, মাঝেমধ্যেই বখড়া আদায় করাও অব্যাহত থাকে। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংঘবদ্ধ চক্রের সকল সদস্য টার্গেটকৃত ব্যক্তির উপর একযোগে হামলে পড়ে। হাতে হ্যান্ডকাপ লাগিয়ে মারধোর করে, হাজির হন চক্রেরই মিডিয়া কর্মি পরিচয়ের ভিডিওগ্রাফাররা। তরুণির সঙ্গে নগ্নতার নানা দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করে এবার তারা মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করে বসেন। ফাঁদে পড়ে উপায়ন্তরহীন অবস্থার শিকার প্রতারিত ব্যক্তির সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে তবেই ছেড়ে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। সংঘবদ্ধ নারী অপরাধীদের এমন তিন সহস্রাধিক ফাঁদ রয়েছে রাজধানীর যত্রতত্র। এসব ফাঁদের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত রয়েছে অন্তত সাত হাজার স্মার্ট তরুণি। সম্প্রতি এই চক্রের দুই সদস্যকে আটক করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। এরপরই বের হয়ে আসে ভয়ানক তথ্য। গ্রেফতার ফাহাদ ইবনে আব্দুল্লাহ ওরফে রেজভী (২৪) ও শারমিন আক্তার টুম্পা (২১) বর্তমানে কারাগারে রয়েছেন। পিবিআই-এর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ জানান, পিবিআই (ঢাকা মেট্রোর) এর একটি বিশেষ টিম অভিযান চালিয়ে বাড্ডা লিংক রোড থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে দুটি মোবাইল ফোন সেট ও টুম্পার সঙ্গে এক ধনাঢ্য ব্যক্তির আপত্তিকর ৫টি অশ্লীল ছবি উদ্ধার করা হয়। তিনি বলেন, গ্রেফতারকৃতরা রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত এলাকার প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী ও ধনাঢ্য ব্যক্তিদের ফোন নম্বর ও ভিজিটিং কার্ড সংগ্রহ করে।
পরে টার্গেট করা ব্যক্তির সঙ্গে সখ্য গড়ে তুলে। একপর্যায়ে শারীরিক সম্পর্ক তৈরি করে ও গোপনে অশ্লীল ছবি ধারণ করে। পরবর্তীতে ওই অশ্লীল ছবির কথা বলে ভুক্তভোগী ব্যক্তির কাছে বড় অঙ্কের টাকা দাবি করে। তাদের দাবি না মানলে ছবি ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়া বা পরিবারকে জানিয়ে দেয়ার হুমকি দেয় চক্রের সদস্যরা। কিন্তু এতেও কাজ না হলে চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ধর্ষণ বা ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ এনে মামলা দিয়েও অর্থ হাতিয়ে নেয়। গত ২৭ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান এলাকায় অভিজাত এক ফ্ল্যাট থেকে কলেজ ছাত্রী মুনিয়ার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধারের পর সংঘবদ্ধ চক্রের প্রতারণামূলক কর্মকান্ডের বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। অনুসন্ধানকালে সাদিয়া নাসরিন নামে এক অপরাধ সম্রাজ্ঞীর সন্ধান মিলেছে, যিনি নিজেই বাদী হয়ে অন্তত আটটি ধর্ষণ মামলা দায়ের করেছেন। তার ধর্ষণ প্রচেষ্টা মামলা থেকে নিজের আপন চাচাও রক্ষা পাননি। এসব মামলার মধ্যে পাঁচটি মামলা মিট মিমাংসা করেই তিনি কয়েক কোটি টাকার মালিক বনেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া সাদিয়া নাসরিনের কর্মরত দুই তরুণিকে বাদী বানিয়েও একাধিক ধর্ষণ, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলা দিয়ে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের হয়রানি করে চলছেন। প্রতিটি মামলা সুরাহা করার ক্ষেত্রেই তিনি মোটা অঙ্কের দাবি করার মধ্য দিয়ে অভিনব প্রতারণার রমরমা বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন বলেও ভুক্তভোগিদের অভিযোগ। পিবিআইর এ কর্মকর্তা বলেন, রাজধানীর গুলশানের জনৈক একজন বাসিন্দা প্রতারণার শিকার হন। তিনি ভাটারার অটো মিউজিয়ামে গাড়ি কিনতে গিয়ে ফাহাদ ইবনে আব্দুল্লাহর সঙ্গে পরিচয়ের সূত্র ধরে নারী অপরাধী চক্রের ভয়ঙ্কর ফাঁদে পড়েন।
তার কাছে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করা হয়। পরে ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী বিষয়টি উল্লেখ করে উত্তরা পশ্চিম থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশ প্রতারক চক্রের দুই সদস্যকে গ্রেফতার করে। পিবিআই-এর এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর অভিজাত এলাকায় এ চক্রের সদস্যরা সক্রিয়। কমপক্ষে এদের ৭-৮টি গ্রুপ রয়েছে যারা ‘ব্ল্যাকমেইলিং’ করে টাকা হাতিয়ে নেয়। বিশেষ করে শিক্ষিত সুন্দরী টিনেজ মেয়েদের ব্যবহার করে তারা ফাঁদ পাতে। এদের সঙ্গে রয়েছে শক্তিশালী একটি চক্র। যারা তাদের মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। স্বয়ংসম্পূর্ণ চক্র : টোপ নারী রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সুন্দরী নারী দিয়ে এমন ভয়ঙ্কর প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে একাধিক প্রতারক চক্র। রীতিমত সংঘবদ্ধ চক্র। সেই চক্রে রয়েছে সাংবাদিক, মাস্তান, পুলিশ কর্মকর্তা, সুদর্শণা নারী থেকে শুরু করে প্রয়োজনীয় সব চরিত্র। যার প্রতি যে নির্দেশনা থাকে সেটাই তারা যথাসময়ে রোল পাঠ করে শুধু। তাদের টার্গেট ধনাঢ্য ব্যক্তি, বড় ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী কিংবা রাজনীতিবিদ। ব্ল্যাকমেইলিংয়ের নাটক সাজাতে এসব চক্রের পুরুষ সদস্যরা পরিস্থিতি বুঝে কেউ বনে যায় সাংবাদিক, কেউ পুলিশ কর্মকর্তা। আর নারী সদস্যরা কখনো প্রেমের ফাঁদে ফেলে, কখনো সময় কাটানোর নামে টার্গেট করা ব্যক্তিকে ডেকে নিয়ে আসছেন তাদের নির্ধারিত আলিশান ফ্ল্যাটে। তার পর ভিকটিমকে বিবস্ত্র করে তার পাশে চক্রের নারী সদস্যদের বিবস্ত্র অবস্থায় রেখে তোলা হচ্ছে ছবি; কেড়ে নেওয়া হচ্ছে সর্বস্ব। এখানেই শেষ নয়। বিবস্ত্র সেই ছবি কখনো ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে, কখনো পত্রিকায় ছাপানোর কথা বলে কখনো-বা নারী নির্যাতন মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি