অপরাধজাতীয়

মতিউরের শ্বশুরবাড়িতে বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি, নামে-বেনামে অঢেল সম্পত্তি

ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ছাগলকাণ্ডে ফেঁসে যাচ্ছেন বাবা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (শুল্ক ও আবগারি) ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের প্রেসিডেন্ট ড. মতিউর রহমান। বের হয়ে আসছে ফেনীতেও মতিউরের শ্বশুরবাড়িতে একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ির বানিয়েছেন। এছাড়াও রয়েছে মতিউর ও তার ওই ছেলে এবং ২য় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবুর নামে বেনামে বিপুল সম্পত্তি।

এই সম্পদ মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জেঠাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান তাদেরকে কিনে দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান।
শনিবার (২২ জুন) বিকালে সরেজমিনে মতিউর রহমানের শ্বশুরবাড়ি ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলার আমিরাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর মিয়া বাড়িতে গেলে বিষয়টি ইফাতের দুই মামা ও একাধিক নিকটাত্মীয় বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

সরেজমিনে দেখা যায় ফেনীতে মতিউরের বানিয়ে দেওয়া বিলাসবহুল বাড়িটি দেখা শুনা করছেন জসিম উদ্দিন নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি। দীর্ঘ ১০-১২ বছর ধরে  এই বাড়িতে থেকে বাড়ি দেখাশোনা করছেন বলে জানিয়েছেন জসিম।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই এলাকার সাবেক এক ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ছেলে ইফাত ও  স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবুর আবদার রক্ষায় মতিউর রহমান শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়িকে ১০ বছর আগে একটি বিলাসবহুল ডুপ্লেক্স বাড়ি উপহার দেন। এই ছাড়া মতিউর ছেলে স্ত্রী তার শ্যালক নকিবের নামে জেলা শহরে ও সোনাগাজী উপজেলা সদরে অঢেল জমিজমাসহ স্থাবর অস্থাবর সম্পদ কিনেছে।

বাড়ির দেখা শুনার দায়িত্বে নিয়োজিত জসিম উদ্দ্নি বলেন, সর্বশেষ গত দুই মাস আগেও এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান, স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবু, ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত ও শাশুড়ি বাড়িতে এসেছিলেন। দু’একদিন থাকার পর আবার ঢাকায় ফিরে যান। মতিউর রহমানের শাশুড়ি বর্তমানে ঢাকায় মেয়েদের বাসায় ও বাড়িতে আসা-যাওয়ার ওপর থাকেন।

নাম প্রকাশে না করা শর্তে এলাকাবাসী জানায় ‘গত বছর কোরবানির ঈদে মতিউরের ছেলে ইফাত কোটি টাকা ব্যয় করে ১৪টি গরু-ছাগল কিনেছিলেন। এর মধ্যে আটটি গরু ও দুটি ছাগল ঢাকায় কোরবানি দিয়েছেন। বাকি চারটি গরু নানার বাড়িতে নিজে এসে জবাই করে আত্মীয়-স্বজন ও গরিবদের মধ্যে বিতরণ করেছেন।’

মতিউরের স্ত্রী শাম্মী আখতারের জেঠাতো ভাই মো. আরিফুর রহমান বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার চাচাতো বোনের স্বামী। মুশফিকুর রহমান ইফাত তাদের একমাত্র সন্তান। শাম্মী আখতারের এক বোন ও এক ভাই রয়েছে। ২৫ বছর আগে মতিউরের সঙ্গে শাম্মী আখতারের বিয়ে হয়। বিয়ের এক বছর পর শাম্মী আখতারের বাবা অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিল্লাত মিয়া মারা যান। এরপর শাম্মীর অনুরোধে মতিউর শাশুড়ি, শালিকা লাভলী আক্তার ও শ্যালক মো. নকিবকে ঢাকায় নিয়ে যান। সেখানে লাভলীকে পড়ালেখা শেষে বিয়ে দেন। আর শ্যালক মো. নকিবকে বাসায় রেখে লেখাপড়া করান। সম্প্রতি নকিব চীন থেকে ফ্যাশন ডিজাইনের ওপর লেখাপড়া শেষ করে দেশে ফিরে এসে ব্যবসা ও চাকরি শুরু করেন। বর্তমানে তারা রাজধানীর ধানমন্ডি এলাকায় নিজস্ব বাসায় থাকেন।

অন্যদিকে, ফেনী ছাড়াও নরসিংদীর রায়পুর, গাজীপুরসহ নানা স্থানে ড. মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির অঢেল সম্পদ নিয়েও স্থানীয়দের মধ্যে চলছে আলোচনা।

প্রসঙ্গত, ১৫ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে আলোচনায় উঠে এসেছিলেন মুশফিকুর রহমান ইফাত। কোরবানি শেষ হলেও ওই ছাগলকাণ্ড নিয়ে বিতর্ক থামছে না। সামাজিক মাধ্যমে ঘুরছে ছাগল, ইফাত ও তার বাবাকে নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা। ইফাত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাস্টমস, এক্সসাইজ ও ভ্যাট অ্যাপিল ট্রাইব্যুনালের সভাপতি ড. মো. মতিউর রহমানের ছেলে। যদিও তা অস্বীকার করেন মতিউর। ইফাতের সঙ্গে তার কোনো সম্পর্কই নেই বলেও জানিয়েছিলেন। আর ইফাত দাবি করেছিলেন, তিনি কোনো ছাগল কিনেননি। তবে ফেনীর এমপি নিজাম হাজারীর তথ্যে বেরিয়ে এসেছে মতিউর রহমানই ইফাতের বাবা। ইফাতের মা এমপির মামাতো বোন।

ইফাত রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে একটি ছাগল ছাড়াও ঢাকার অন্তত সাতটি খামার ও একটি হাট থেকে এ বছর ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। গত বছরও কিনেছেন ৬০ লাখ টাকার পশু। ১৫ লাখ টাকার ছাগল কিনে লাখ টাকা অগ্রিম দিয়ে ছাগল ঘরে না আনা আলোচিত ইফাত পাখি পুষতে পছন্দ করেন। আড়াই লাখ টাকার পাখিও তার ঘরে আছে বলে এক ভিডিওতে ইফাতকে বলতে শোনা গেছে। তাঁর ঘরে মিশরের বাজরিগার পাখি, অস্ট্রেলিয়ার গালা কাকাতুয়াসহ আছে নানা প্রজাতির বেড়ালও।

এবার কোরবানির ঈদে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের সাদিক এগ্রো থেকে ১২ লাখ টাকায় একটি ছাগল কিনে আলোচনায় আসেন ১৯ বছর বয়সী এ তরুণ। কিন্তু ফেসবুকে শুধু একটি ছাগল কেনার ভিডিও ঘুরলেও সমকালের হাতে এসেছে দামি পশু কেনার অর্ধশত ভিডিও এবং ছবি। এসব ভিডিওতে ইফাতকে গরু কিনতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিওয়ের সূত্র ধরে ঢাকার আশপাশে ১০টি খামারে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইফাত এ বছর সাতটি খামার থেকে ৭০ লাখ টাকার গরু কিনেছেন। তবে ফেসবুকে বিতর্কের মুখে সাদিক এগ্রো থেকে কেনা ওই ছাগল তিনি আর বাসায় নেননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close