ঢাকালেখা-পড়াসাহিত্য

সামাজিক সম্প্রীতি ভাবনা, লেখক-নুরুজ্জামান

সৃষ্টিকর্তা প্রথম মানব আদমকে সৃষ্টি করেছেন। তাঁর একাকিত্তের সঙ্গী হিসেবে হাওয়া কে সৃষ্টি করেছেন। এরপরে তাদের উল্লেখযোগ্য ২ জন সন্তান হাবিল এবং কাবিল এ পৃথিবীতে ভালো এবং মন্দের প্রতিনিধিত্ব করে আসছে।

পথভ্রষ্ট মানুষ-সমাজ-দেশকে পুনরায় সঠিক দীক্ষা দিতে কিছু মহামানব এসেছেন। যারা বিভিন্ন ধর্মের মাধম্যে সময়ের প্রয়োজনে মানুষের মাঝে শান্তি ও সম্প্রীতি কথা প্রচার করেছেন। পৃথিবীর ইতিহাস এমনটাই বলে।

সম্প্রীতির প্রশ্ন সেখানেই আসে যেখানে অস্থিরতা, অনৈক্য ও দ্বন্দ্বের দেখা মিলে।

আজ পৃথিবীতে প্রায় ৭৭০ কোটি জনসংখ্যা । আমাদের দেশেও প্রায় ১৬ কোটির মত জনসংখ্যা। ভালো মন্দ সবমিলিয়ে পৃথিবী চলছে তার আপন গতিতে। আমি এ পৃথিবীর ক্ষুদ্র একটা সৃষ্টি। সমাজকে বুঝার আগে পরিবারকে পাশে পেয়েছি। আমার মূল্যবোধের একটি বিশাল অংশে এই পরিবারের ভূমিকা রয়েছে। যেখানে আমার ৪ টা ভুমিকা রয়েছে। একজন সন্তান, একজন ভাই, একজন স্বামী এবং একজন পিতা। আমার প্রতিটি ভূমিকায় আমার বেশ কিছু দায়িত্ব রয়েছে। সেই দায়িত্বপূরণের স্বার্থে আমাকে এই সমাজকে জানতে হয়েছে। পাশে প্রয়োজন পড়েছে। তাই আমি একজন প্রতিবেশী হিসেবে নিজের ভূমিকার কথা ভাবি যেখানে সমাজের প্রয়োজন আমাকে। এভাবেই আমি যেই সমাজেই যাই নিজ সমাজের প্রয়োজনে তা একটা রাষ্ট্রের অধীনেই নাগরিক হিসেবে ভুমিকা পালন করি । আমি আমার পরিচয়ের জন্য যেমন বংশের কথা বলি তেমনি সমাজের কাছে আমি পেশার পরিচয় বহন করি।

আমি এখন ছাত্র । আমার প্রধান কর্তব্য জ্ঞানার্জন। ইতিবাচকতার চর্চা। এবং আমার প্রতিটি ভূমিকায় নিজের অধিকারের সাথে অন্যের অধিকার অক্ষুণ্ণ রাখার চেষ্টায় সততার পরিচয় দেয়া।

শ্রীমতি মনীষা শর্মা ২০১৫ সালে Global Journal of HUMAN-SOCIAL SCIENCE নামক জার্নালে তাঁর একটি অনুচ্ছেদ প্রকাশ করেন। আমি সেখান থেকে সামাজিক সম্প্রীতির বিশেষ কিছু বিষয়ে ধারনা একত্র করতে সক্ষম হয়েছি। সত্যিকারের সামাজিক হওয়ার জন্য সামাজিক সম্প্রীতি খুবই প্রয়োজন। সামাজিক হওয়ার অর্থ একে অপরের সাথে সুরেলাভাবে জীবনযাপন করা। আর তাই আমাদের অবশ্যই সমাজে কাজ করা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং তাদের মধ্যে বিদ্যমান সামাজিক সম্পর্কগুলি বুঝতে হবে। এই প্রতিষ্ঠান অনেক হতে পারে। ৪ টি বড় প্রতিষ্ঠানে এগুলোকে শ্রেণীবদ্ধ করা যেতে পারে।       ১) পরিবার, ২) জাতি ও সরকার, ৩) সংস্থা বা সংগঠন এবং ৪) কমিউনিটি ও প্রতিবেশী।

পরিবারিক পরিবেশ থেকে মূল্যবোধের সৃষ্টি। যেখানে প্রধান ভূমিকা থাকে বাবা মায়ের। একটি দেশ হল যেখানে একজন ব্যক্তি বাস করেন বা চাকরি করেন ইত্যাদি। জাতীয় বিশ্বাস এবং মূল্যবোধ হল নিজের জাতি ও অন্য জাতির জন্য, যা সামাজিক সম্প্রীতিকে প্রভাবিত করে। নাগরিক শান্তি, ন্যায়বিচার, সাম্য ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে বিশেষ ভূমিকা পালন বা শক্তি প্রয়োগ করাই সরকারের কাজ।

তাই সামাজিক সম্প্রীতি বৃদ্ধির জন্য একটি সরকারকে সৎ, বৈধ, গণতান্ত্রিক এবং জবাবদিহি করতে হবে।

সংস্থায় একজন ব্যক্তি ব্যবসায়ী, চাকুরীজীবী বা অলাভজনক পেশায় নিযুক্ত হতে পারে। যাই হোক না কেন, কাজের ক্ষেত্রে অন্যদের সাথে সুসম্পর্ক থাকার ধারণাটি মূলত তার সংস্কৃতি এবং সহকর্মীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়। একইভাবে একজন ব্যক্তির সামাজিক সম্প্রীতি এবং শান্তি সম্পর্কে কমিউনিটি বা প্রতিবেশীর মনোভাব এবং অভ্যাসগুলি ব্যক্তির বিশ্বাসকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে থাকে।

ওয়ার্ল্ড ডেভলপম্যান্ট রিপোর্টে উল্লেখিত সামাজিক সম্পর্ক, প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার একটি ধারণা উপস্থাপন করা হয়েছে। সামাজিক সম্পর্ক, প্রতিষ্ঠান, এবং সংস্থার মধ্যকার বিশেষ বিষয়গুলো হল বিশ্বাস, ধর্ম, মূল্যবোধ, নেটওয়ার্ক, আদর্শ, লিখিত বা অলিখিত নিয়ম-কানুন, আইন,ঐতিহ্য, সংবিধান, জাতি,পরিবার, সুশীল সমাজ, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, আদালত, পুলিশ/প্রতিরক্ষা, পেশাজীবী সংগঠন, রাজনৈতিক দল। আমি সামাজিক সম্প্রীতির কিছু মধ্যবর্তী লক্ষ্য এবং প্রধান লক্ষ্য খুঁজে পেয়েছি । প্রধান লক্ষ্যগুলো হল; ন্যায়পরায়ণতা এবং সকল সম্পর্কের মধ্যে সম্প্রীতি। বিশেষভাবে সৃষ্টিকর্তার প্রতি শ্রদ্ধা, ভালবাসা/সহানুভূতি, ন্যায়বিচার, সমতা, বিশ্বস্থতা, সত্য, ক্ষমা, আশা, উদারতা, সমবেদনা এবং সহানুভূতি ।

মধ্যবর্তী লক্ষ্যগুলো হল; পারিবারিক পর্যায়ে- কম বিবাহবিচ্ছেদের হার, সামাজিকভাবে টেকসই জন্মহার, বয়স্ক সদস্যদের জন্য কার্যকর পারিবারিক যত্ন। জাতি ও সরকার পর্যায়ে- নাগরিক শান্তি, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা, ফৌজদারি বিচার, সমতা, মানবাধিকার সুরক্ষা, প্রশাসন ও মৃত্যুদন্ডে স্বচ্ছতা ইত্যাদি। সংস্থা বা সংগঠন পর্যায়ে- সম্পত্তি সম্পদের বিস্তৃত বন্টন, ব্যবসা এবং সম্প্রদায়ের জীবনের একীকরণ, ক্রমাগত ঋণের অনুপস্থিতি, স্ব-কর্মসংস্থান, ঝুঁকি ভাগাভাগি এবং সরাসরি আর্থিক সম্পর্কের জন্য প্রণোদনা। কমিউনিটি ও প্রতিবেশী পর্যায়ে- কমিউনিটি আদালত এবং স্থানীয় ন্যায়বিচার ব্যবস্থা, আইন সম্পর্কে বিস্তৃত বা সর্বজনীন জ্ঞান, অন্যের সমস্যা বোঝা এবং সমাধান করার চেষ্টা করা ইত্যাদি।

পরিশেষে বলতে চাই সু-নাগরিক হওয়ার চর্চা করা প্রয়োজন। বিভিন্ন সচেতনতামূলক কর্মসুচি গ্রহন করে সমাজের যুবকদের মধ্যে এসব বিষয়ে ধারণা সুস্পষ্ট করা এবং দায়িত্বশীল নাগরিক তৈরি করা এখন সময়ের দাবি।

লেখকঃ নুরুজ্জামান ফাহাদ

(স্নাতকোত্তর) জাপানি ভাষা ও সংস্কৃতি বিভাগ,

আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

ইয়ুথ লিডার, ইয়ুথ এন্ডিং হাঙ্গার বাংলাদেশ।

১৭-০৮-২০২২

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close