জাতীয়
পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানো হলো না ফায়ার ফাইটার নয়নের
শীতের ছুটিতে পরিবারের সাথে সময় কাটাতে শুক্রবার গ্রামের বাড়ি রংপুরের মিঠাপুকুরে আসার কথা ছিল ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোহানুর জামান নয়নের। ঢাকা থেকে বাড়িতে যাচ্ছেন ঠিকই, তবে স্বাভাবিক নয়; অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেন বাজিয়ে নিথর দেহে। বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) মধ্যে রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে জরুরি প্রয়োজনে আগুন নেভাতে যান নয়ন। সেখানে রাস্তা পারাপারের সময় বেপরোয়া গতির একটি ট্রাকের ধাক্কায় প্রাণ প্রদীপ নিভে যায় তার।
নিহত ফায়ার সার্ভিস কর্মী সোয়ানুর জামান নয়ন (২৪) রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার বড়বালা ইউনিয়নের ছড়ান আটপড়িয়া গ্রামের কৃষক আখতারুজ্জামানের ছেলে। তিনি দুই বছর ধরে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সে কর্মরত ছিলেন। তার মৃত্যুর খবরে এলাকায় শোকের ছায়া নেমেছে। পাড়া-প্রতিবেশী ও স্বজনরা আসছেন বাড়িতে। শোকাহত পরিবারকে শান্তনা দিচ্ছেন সবাই। বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) বিকালে তার গ্রামের বাড়িতে গেলে দেখা যায় এই হৃদয় বিদারক দৃশ্য।
জানা যায়, পরিবারের একমাত্র ছেলে সন্তান হিসেবে অনেক বেশি দায়িত্ব ছিল নয়নের। স্বজনদের প্রত্যাশাও ছিল বেশি। কিন্তু, তার অকাল প্রয়ানে যেন পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। এক মেয়ে ও এক ছেলের মধ্যে নয়ন ছিল ছোট। সন্তানের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর থেকে বুক ফাটা কান্নায় নির্বাক হয়েছেন মা নার্গিস বেগম। সন্তান হারানোর ব্যথা সইতে না পেরে নিজের বুক চাপড়ে আহাজারি করে চলেছেন তিনি। নয়নের এই মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীরাও। সেই সাথে বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে নয়নের মৃত্যুতে মধ্যবিত্ত পরিবারটির কী হবে, সেই ভাবনাই এখন বেশি ভাবাচ্ছে স্বজনদের।
এদিকে, মাত্র ২৩ বছর বয়সেই দায়িত্ব পালনের সময় জীবন উৎসর্গ করা সাহসী যোদ্ধা নয়নের জন্য বাড়ির অদূরে কবর খোঁড়া হয়েছে। অন্যান্য প্রস্তুতিও শেষ পর্যায়ে। এখন শুধু ঢাকা থেকে মরদেহ রংপুরে এলেই দাফন সম্পন্ন করা হবে। নয়নের মরদেহ নিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গেছেন পরিবারের পক্ষ থেকে স্বজনরা। নয়নকে শেষ দেখা দেখতে সকাল থেকে অপেক্ষায় আপনজনরা।
নিহত নয়নের বাবা আক্তারুজ্জামান দুদু মিয়া জানান, তার সমস্ত সহায় সম্বল শেষ করে একমাত্র ছেলেকে মানুষের মতো মানুষ করার চেষ্টা করেছেন। পরে ফায়ার সার্ভিসে চাকরি পায় নয়ন। তিনি আর বলেন, চাকরিকে ঘিরে নয়নের অনেক স্বপ্ন ছিল। চাকরির পাশাপাশি প্রমোশনের জন্য পড়াশোনাও চালিয়ে গিয়েছিল। ছড়ান ডিগ্রি কলেজ থেকে এই বছর বিএ ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছেন নয়ন। ছেলে সেই পরীক্ষার ফল দেখতে আর পারল না। সব শেষ হয়ে গেল। এ সময় তিনি ছেলে হত্যার বিচার দাবি করেন।
পরিবারের অন্য সদস্যরা অভিযোগ করে বলেন, আগুন নেভানোর সময় পুরো এলাকাটি সুরক্ষিত রাখা হলে এই ঘটনা ঘটতো না। তারা ঘাতক কাভার্ডভ্যান চালকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন। সেই সাথে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অবহেলার অভিযোগও তুলেছেন তারা।
এদিকে রংপুর ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সের পরিচালক আমিরুল ইসলাম সরকার জানিয়েছেন, ঢাকায় জানাজা শেষে নয়নের মরদেহ নিয়ে রওনা দিয়েছে ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্স এর একটি টিম। রাত দশটার মধ্যেই তার গ্রামের বাড়িতে পৌঁছাতে পারবে ওই টিম। রাতেই জানাটা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে। দাফনের সব প্রস্তুতিও সম্পন্ন করা হয়েছে।
মিঠাপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিকী জানিয়েছেন, নয়নের মরদেহ বাড়িতে নেয়া থেকে শুরু করে দাফনকাজ সম্পন্ন করতে তারা সজাগ রয়েছে।