কমলগঞ্জ উপজেলা
সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মজুরি প্রদানের দাবি জানিয়েছে চা-শ্রমিক সংঘ
কমলগঞ্জ সংবাদদাতা:
চা-শ্রমিকদেরকে সরকার ঘোষিত মজুরি অনুযায়ী মজুরি পরিশোধ করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে চা-শ্রমিক সংঘ। চা-শ্রমিক সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির আহবায়ক রাজদেও কৈরী এবং যুগ্ম-আহাবয়ক শ্যামল অলমিক এক যুক্ত বিবৃতিতে অভিযোগ করেন সরকার ঘোষিত নিম্নতম মজুরি অনুযায়ী ১১ আগস্ট ২০২৪ থেকে চা-শ্রমিকদের মজুরি দৈনিক ১৭৮.৫০ টাকা প্রদান করার প্রজ্ঞাপন থাকলেও চা-বাগান কর্তপক্ষ তা মানছেন না। তারা পূর্বের ন্যায় দৈনিক ১৭০ টাকা মজুরি পরিশোধ করছেন।
নেতৃবৃন্দ বলেন, ২০২৩ সালের ১০ আগস্ট সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ড চা-শিল্পের শ্রমিকদের জন্য মজুরি নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন (এসআরও নং ২৪৬-আইন/২০২৩) জারী করে। প্রজ্ঞাপনের শর্তাবলীর ৮(খ) নং পয়েণ্টে উল্লেøখ করা হয়েছে ‘যদি একজন শ্রমিকের মূল মজুরি ১৭০ টাকা হয়, তবে এক বৎসর কর্মরত থাকিবার পর তাহার মজুরি বৃদ্ধি পাইয়া ১৭৮.৫০ টাকা নির্ধারিত হইবে এবং পরবর্তী বৎসরে ক্রমবর্ধমান হারে পুণরায় ৫% হারে বৃদ্ধি পাইবে অর্থাৎ মূল মজুরি ১৭৮.৫০ টাকার ৫% বৃদ্ধি পাইয়া ১৮৭.৪৩ টাকা নির্ধারিত হইবে।’ সে অনুযায়ী চলতি বছরের ১১ আগষ্ট থেকে একজন চা-শ্রমিকের মজুরি ১৭৮.৫০ টাকা হলেও চা-বাগান কর্তৃপক্ষ সরকারি আইন ও প্রজ্ঞাপন উপেক্ষা করে ১৭০ টাকা করে মজুরি পরিশোধ করছেন। এমন কি আলীনগর, সুনছড়া, শমসেরনগর, রাজনগরসহ বিভিন্ন বাগানের শ্রমিকরা সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৭৮.৫০ টাকা মজুরি পরিশোধ করার অনুরোধ করলেও বাগান কর্তৃপক্ষ তা আমলে নিচ্ছেন না।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী মজুরি প্রদান করা না হলে আসন্ন দুর্গা পূজায় উৎসব বোনাসের ক্ষেত্রেও চা-শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্থ হবেন। নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সরকার ঘোষিত প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দৈনিক ১৭৮.৫০ টাকা মজুরি বকেয়াসহ পরিশোধ করার দাবি জানান। একই সাথে চা ও রাবার শ্রমিকদের সুস্থভাবে বেঁচে থাকা ও উৎপাদনে সক্রিয় থাকার প্রয়োজনে বর্তমান বাজারদরের সাথে সংগতি রেখে ৬ সদস্যের পরিবারে ভরণপোষণের খরচ হিসাব করে ২০২৩-২০২৪ মেয়াদের জন্য নিম্নতম মজুরি নির্ধারণ এবং একটি পরিবারের সাপ্তাহিক প্রয়োজনের অনুপাতে চাল/আটা, ডাল, তেল, চিনি/গুড়, সাবান, চা-পাতাসহ পূর্ণ রেশন প্রদান করার দাবি জানান।
সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন চা-বাগানে শ্রমিকদের ঠিকমত মজুরি ও রেশন পরিশোধ না করা হচ্ছে না উল্লেখ করে বিবৃতিতে নেতৃবৃন্দ বলেন এনটিসি কোম্পানীর কুরমা, পাত্রখোলা, মাধপুর, মদনমোহনপুর, দেউন্দি টি কোম্পানীর নয়াপাড়া, দেউন্দি, লালচাঁন, মৃত্তিঙ্গা, ব্যাক্তিমালিকাধীন ইমাম-বাওয়ানী, ফুলতলা, সিলেটের ডালুছাড়া, তারাপুরসহ বিভিন্ন বাগানে মজুরি ও রেশন পরিশোধ না করার কারণে শ্রমিকরা বিক্ষোভ ও কর্মবিরতি পালন করছেন। শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে জুড়ী উপজেলার ফুলতলা চা-বাগানের কর্তৃপক্ষ আগামী ৮ অক্টোবর পর্যন্ত বেআইনীভাবে বাগান বন্ধ ঘোষণা করেন। নেতৃবৃন্দ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন বর্তমান দ্রব্য মূল্যের উর্দ্ধগতির এই সময়ে মজুরি ও রেশন পেয়েও শ্রমিকরা দু’বেলা ডাল-ভাত জুটাতে পারেন না। তার উপর যদি শ্রমিকদের মজুরি ও রেশন প্রদান বন্ধ করে দেওয়া হয় তাহলে শ্রমিকদের না খেয়ে মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।
নেতৃবৃন্দ অবিলম্বে সকল চা-বাগানের শ্রমিকদের বকেয়াসহ মজুরি-রেশন পরিশোধ এবং ফুলতলাসহ বন্ধ সকল বাগান চালু করার দাবি জানান। অন্যথায় চা-শ্রমিকরা বেঁচে থাকার তাগিয়ে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের আন্দোলনের শিক্ষা নিয়ে নতুন করে আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ে দাবি ও অধিকার আদায় করার পথে অগ্রসর হতে বাধ্য হবেন।