৭ জানুয়ারী সংগঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে অনলাইন সভার আয়োজন করে সু শাসনের জন্য নাগরিকের সহযোগী সংগঠন সুজন বন্ধু।
গত ৮ জানুয়ারি রোজ সোমবার,
সুজন বন্ধুর সদস্য সচিব জারিফ অনন্তের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত অনলাইন সভাটির সভাপতিত্ব করেন সুজন বন্ধুর আহ্বায়ক মো. মোস্তাফিজুর রহমান সজল। সভায় মূখ্য আলোচক হিসেবে ছিলেন যুগ্ম আহ্বায়ক মো. অলিউল ইসলাম। এছাড়াও সুজন বন্ধুর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সভার যে কয়টি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়,তা হলো:
১. দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া
২. দেশব্যাপী আসন ভিত্তিক ভোটের হার
৩. নির্বাচনে তারুণ্যের উপস্থিতি
৪. আগামী দিনের করণীয়
আলোচ্য বিষয় সমূহের ওপর সভায় উপস্থিতিদের অনেকে বিভিন্ন প্রকার মন্তব্য প্রদান করেন যেমন –
ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া: দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে একটি মাত্র দল ও তাদের সমমনা গোষ্ঠী অংশ নেওয়ায় নির্বাচনটি ছিল একতরফা ও একপেশে। নির্বাচনের ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়াটিও ছিল অত্যন্ত ত্রুটিপূর্ণ ও মারাত্মক জালিয়াতির এবং সর্বোপরি ওয়ান ম্যান বা এক ব্যাক্তির শো। নির্বাচনে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অন্য দল থেকে লোক ভাগিয়ে আনা থেকে শুরু করে অনেকগুলো আসনে ক্ষমতাসীন দলের ডামি প্রার্থী রাখা হয়। যেন ২০১৪ মতো কেউ বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় না জেতে। এছাড়াও প্রার্থীদের নির্বাচনে অংশ নিতে নগদ টাকাসহ বিভিন্ন ধরনের প্রনোদনার লোভ দেখানো হয়। অনেক আসনে দলীয় মার্কা পাওয়া ব্যক্তির পক্ষে প্রচার-প্রচারণা না করে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সমর্থন দেয় ডামি প্রার্থীদের এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার ঘটনাও ঘটে (কুমিল্লা-২)। যেসব আসনে নতুন এমপি নির্বাচিত হয়েছে সেখানেও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।
অনেক আসনে দলীয় মার্কা পাওয়া ব্যক্তির পক্ষেও প্রচালনা চালাতে পারেনি তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা (কক্সবাজার-১)। কর্মীয়-সমর্থকদের অভিযোগ ছিল, রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর চাপে তারা পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে প্রচারনা চালাতে পারেনি। এছাড়াও নিজেদের মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়া এই নির্বাচনের অনেক আসনে স্বয়ং প্রিজাইডিং অফিসারের নির্দেশে সহকারি প্রিজাইডিং অফিসারের নেতৃত্বে (ভোলা-১) জাল ভোট দেওয়া হয়। অনেক আসনে নাগরিকদের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় চাপ দেওয়া হয়েছে ভোট দেওয়ার জন্য। এর মধ্যে সামাজিক সুরক্ষা বলয়ের আওতাধীন ব্যক্তিদের ভোট না দিলে কার্ড নিয়ে নেওয়ার হুমকি ও অনেক আসনে তা বাস্তবায়নও করা হয় (ঝালকাঠি-২, রাজশাহী-২)। এমনকি, এ অভিযোগে আটক হন রাজশাহীর একজন প্যানেল মেয়র।
ভোটের হার: দেশব্যাপী প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বলা ভোটের হার ২৭ শতাংশ নাকি ৪০ শতাংশ, নিয়ে বিতর্ক চললেও সভায় উপস্থিতিদের মতামত হচ্ছে ভোটের হার সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১৫ শতাংশ হতে পারে। তাদের মতে, তাদের নিজ নিজ কেন্দ্রেসহ আশপাশের কেন্দ্রগুলোতে ভোটার উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়নি। সাধারণ জনগণ এ নির্বাচনে অংশ নেয়নি।
তারুণ্যের উপস্থিতি: এ নির্বাচনে তরুণদের কোনো অংশগ্রহণই ছিল না। সভায় উপস্থিত সদস্যদের মধ্যেও ১ জন ব্যতীত সবাই ব্যক্তিগত উদ্যোগে ভোট বর্জন করে। অনেকে ভোট দিতে যাননি বিকল্প প্রার্থী নেই বলে। অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে অনেকে ভোট দিতে যাননি এই ভেবে যে, তাদের ভোট অন্য কেউ দিয়ে দিবে। এছাড়াও ২৮ অক্টোবরে অন্য দলের ওপর চালানো ক্রাকডাউন-সহ তফসিল পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন ধরনের সংঘর্ষ, জেল ও মৃত্যুর ঘটনাও তরুণদের ভোট দানে অনীহা সৃষ্টিতে প্রভাব রাখে।
করণীয়: তরুণদের অধিকার নিয়ে সোচ্চার হতে হবে। দেশে সুশাসন ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় দল-মত নির্বিশেষে তরুণদের সংগঠিত করে আগামী দিনে আরও বেশি সক্রিয় ভূমিকা রাখতে হবে বলে সবাই মত দেন।