জাতীয়ঢাকানির্বাচনী হালচাল

নির্বাচনে সাজানো ও আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতা হচ্ছে

নাগরিক প্ল্যাটফর্মের সংবাদ সম্মেলনে মন্তব্য

ডেস্ক রিপোর্টঃ

সংসদ নির্বাচন প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে; তবে তা সাজানো ও অনেকটা আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতা। এটা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না। একে মূলত একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা বলা যায়।
‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন ও ন্যায্যতার লক্ষ্যে নাগরিক এজেন্ডা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা উঠে আসে। এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম আজ শনিবার সকালে রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলনে করে। এতে সভাপতিত্ব করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান।
নির্বাচন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, এটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ হচ্ছে; তবে তা সাজানো ও অনেকটা আত্মঘাতীমূলক প্রতিযোগিতা। স্বেচ্ছায় হোক বা হুমকি ও জোরপূর্বক ভোটার নিয়ে আসা হোক; ভোটার অংশগ্রহণমূলক বলা যাবে। সাংবিধানিকভাবেও শুদ্ধ বলা যাবে, তাই আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করা যাবে না। তবে এটি আসলে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন ও পরবর্তী অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের জিজ্ঞাসা ছিল বেশি। মূলত চারটি বিষয়ে প্রশ্ন করেছেন তাঁরা। এগুলো হচ্ছে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অধিকারের বিষয়টি নির্বাচনী ইশতেহারে কতটা এসেছে, পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর সংজ্ঞা, বৈষম্যের সঙ্গে গণতান্ত্রিক জবাবদিহির সম্পর্ক ও নির্বাচনের পর পরিস্থিতি কী হতে পারে?
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের কোর গ্রুপ সদস্য ইফতেখারুজ্জামান বলেন, নির্বাচনে সম্ভাব্য সব দল বা প্রার্থীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত হয়নি, এটা তো পরিষ্কার। তার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষেত্র তৈরি করা হয়নি। এতে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত হচ্ছে না। এসব পরিপ্রেক্ষিতে একটা ঝুঁকি তৈরি হয়। যাঁরা এমন একচ্ছত্র ভুবন তৈরি করছেন, তাঁরাও জানেন, এতে অগণতান্ত্রিক শক্তির বিকাশ ঘটে। এটা কেউ চায় না। এটা সব নাগরিকের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই দায়ও সবার নিতে হবে।
নির্বাচন কমিশনে (ইসি) জমা দেওয়া হলফনামা থেকে প্রার্থীর আয় ও সম্পদ সম্পর্কে জানার একটি বড় সুযোগ তৈরি করেছে বলে উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, দেশবাসী জানতে পারছে, তুলনা করার সুযোগ পাচ্ছে। বাস্তবে যদি ক্ষমতা যথাযথ প্রয়োগে ইসির সৎ সাহস থাকত, তাহলে তথ্য গোপন করার অভিযোগে অনেকের প্রার্থিতা বাতিল হতো। তা তো হচ্ছে না। তবে দুদক চাইলে স্বপ্রণোদিত হয়ে সম্পদের উৎস তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারে।
সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনাও করেন মোস্তাফিজুর রহমান। সিপিডির এই সম্মাননীয় ফেলো বলেন, উন্নয়ন হয়েছে। তবে বণ্টনের ন্যায্যতার দিক থেকে এখানে অনেক সমস্যা আছে। পরিসংখ্যান ব্যুরোর খানা জরিপেও বৈষম্য উঠে এসেছে।
নাগরিক প্ল্যাটফর্মের আহ্বায়ক ও সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, এটাকে নির্বাচন বলা যাবে না। এটি মূলত একটি বিশেষ নির্বাচনী তৎপরতা। ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ (১৫ ফেব্রুয়ারি) সালেও এমন নির্বাচনে দেখা গেছে। নির্বাচনের ফলাফল টিকিয়ে রাখা কঠিন। প্রথাগত রাজনীতি দুর্বল হলে সামাজিক শক্তির দায় বাড়ে। তাই নাগরিকের দায় বেড়ে গেল, নিশ্চুপ থাকার সময় এটা না। নিজেদের সমস্যা নিজেদের সমাধান করতে হবে। আটলান্টিকের ওপার থেকে এসে কেউ সমাধান করে দেবে, এটা ভাবা উচিত না।
দেবপ্রিয় আরও বলেন, আয় বৃদ্ধির সঙ্গে নির্বাচিত হওয়ার নিবিড় সম্পর্ক আছে। যে যতবার নির্বাচন করছে, তার আয় গাণিতিক হারে তত বাড়ছে। বহুত্ববাদহীন নির্বাচনের বড় কুফল এটি। এখন এনবিআর এটি যাচাই করে দেখতে পারে। যে হারে সম্পদ বেড়েছে, সেই হারে কর দিয়েছেন কি না প্রার্থীরা। যদিও দেখা যাবে সবাই মুরগির খামারি ও মাছচাষি হয়ে গেছেন। তিনি আরও বলেন, অর্থনীতি যে সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র তা কীভাবে মোকাবিলা করবে? তাই এখানে নাগরিকের দায়িত্ব বেশি।
মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, নাগরিক সমাজের সুপারিশ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সদিচ্ছা প্রয়োজন, সেখানে একটা ঘাটতি আছে।
বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সালমা আলী বলেন, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে নজরদারি ও জবাবদিহি থাকতে হবে। না হলে আইন থাকবে, বাস্তবায়ন হবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্য এবং নীরব জনগোষ্ঠীর কণ্ঠকে শক্তিশালী করা; এ তিনটি বিষয়ের ওপর আলাদা নিবন্ধ উপস্থাপন করে সুপারিশ তুলে ধরা হয়। এগুলো তুলে ধরেন এম বি আকতার, ফারহান হোসেন ও আসিফ মোহাম্মদ। এতে বলা হয়, ২০২১ সালে দুর্গাপূজাকে কেন্দ্র করে সহিংসতার কথা সবার জানা। এরপর দুই বছর কিন্তু পূজায় কোনো ঘটনা ঘটেনি। তার মানে সরকারের সদিচ্ছা থাকলে সম্ভব। আবার শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীর অধিকার নিশ্চিত করার যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, তা আজও পূরণ হয়নি চুক্তি বাস্তবায়ন না করায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন, এশিয়া ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কাজী ফয়সাল বিন সিরাজ প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close