আইন ও অধিকারনারায়ণগঞ্জ

পরিবেশ দূষণে বিপর্যস্ত নারায়ণগঞ্জকে উত্তরণের উপায় নিয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত

সোমবার (৪ জুলাই) সকালে আলী আহম্মদ চুনকা পাঠাগার ও মিলনায়তনে পরিবেশ দূষণে বিপর্যস্ত নারায়ণগঞ্জকে উত্তরণের উপায় এর বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত।

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেছেন, নারায়ণগঞ্জ শহরে শুধু শিল্পপতিরাই বসবাস করে না, এই শহরে মানুষও বাঁচবে। একদম বস্তিতে যে বসবাস করে সে যেমন সৌন্দর্য্য দেখবে, তেমনি ধনী ব্যক্তিও শহরের সৌন্দর্য্য উপভোগ করবে। এখন নারায়ণগঞ্জ শহরে যারা সর্বোচ্চ ব্যক্তি তারা ঘুরতে সিঙ্গাপুর, দুবাই, মালয়েশিয়া, কানাডা, আমেরিকা যায়। সেখানে তারা বাড়িও করে। কিন্তু আমি নিউজিল্যান্ডের মত সবুজ নগরী রেখে আমি দেশের টানে চলে এসেছি। কিন্তু আমি নিউজিল্যান্ডের মত সবুজ নগরী রেখে আমি দেশের টানে চলে এসেছি। আমার মনে হয় না, বাংলাদেশের দ্বিতীয় কোন জনপ্রতিনিধি আছেন যে এত যুদ্ধ করে নিজ শহরে টিকে থাকেন। আর যুদ্ধটা হলো, রাস্তা বড় করতে হবে, গাছ কাঁটা যাবে না, খাল, পুকুর, মাঠ রক্ষা করার লড়াই করতে হয়। আমার বিরুদ্ধে বড় বড় চিঠি যায় সংসদীয় কমিটির কাছে। প্রধানমন্ত্রীর, ডিজিএফআই এর কাছে। কিন্তু তারপরেও আমরা থামিনাই। আর থামি নাই বলেই নারায়ণগঞ্জে এতো সুন্দর হয়েছে।

মেয়র খাল রক্ষার প্রসঙ্গে বলেন, নারায়ণগঞ্জ সিটি নারায়ণগঞ্জের খালগুলো সুন্দর করার কাজ করা কত কঠিন ছিলো তা সবাই জানেন। বাবুরাইল খালের যে অবস্থা ছিল, কেউ ভেবেছি এত সুন্দর করে পুনরুজ্জীবিত করা সম্ভব হবে। আমরা ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের সহযোগীতায় দেড়শো কোটি টাকার প্রকল্পে নিতাইগঞ্জ খাল, বাবুরাইল খাল এবং শেখ রাসেল পার্ক তৈরী করেছি। কেউ কেউ বলেছে, ২০০ কোটি টাকা দিয়ে আইভী কেন বিশুদ্ধ বাতাস খাওয়াবে? এখানে হাতিরঝিল না, মতিঝিলের মত বিল্ডিং বানাতে হবে। আমি প্রতিবাদ করে বলেছি, প্রয়োজনে ৫০০ কোটি টাকা ব্যয় করে হলেও নগরবাসীকে বিশুদ্ধ বাতাস খাওয়াবো। এবং সেই কাজটি আমি করে দেখিয়েছি।

 

তিনি আরো বলেছেন, হাইকোর্টে রায় হয়েছে, নদীর তীরবর্তী সকল জায়গা শর্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে দিতে বলা হয়েছে। সেখানে বনায়ন ,পার্ক, হাঁটার জায়গা, সবুজায়ন করা হবে। আজ অব্দি বি আই ডব্লি উ টি এ এর সাথে বোঝাপড়া করতে পারলাম না। এমনকি মন্ত্রীর বলে দেওয়ার পরেও। তখন আমি জোড় করে, জায়গা দখল করে ওয়াকওয়ে নির্মান এবং গাছ লাগানো শুরু করেছি। একটি বেসরকারি টিভিতে নিউজ হলো আইভী ভূমিদস্যু, সরকারের সব জায়গা দখর করে নিয়ে যাচ্ছে। আমি বলেছি, হ্যা আমি ভূমিদস্যুই কিন্তু আমি ভবন তুলি নাই। আমি নগরবাসীর জন্য মাঠ ও পার্ক করে দিয়েছি। তারা যা বলুকনা কেন, আমার জনগণ পার্ক, মাঠ পেয়ে খুশি

মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী বলেন, আমাকে এখন অনেক মন্ত্রনালয় পছন্দ করে না। যেমন রেলওয়ে। কিছু কিছু মন্ত্রণালয় আমার নামই শুনতে পারে না। কারন আমি নাকি তাদের কাজে বাঁধা দেই। আমি কাউকেই বাঁধা দিতে চাই না, কিন্তু আমাদের নারায়ণগঞ্জ আমরা গড়তে চাই। ‘সবুজ শ্যামল জনপদ, নগর –হবে নিরাপদ’ এই স্লোগান নিয়ে এগুতে চাই। আমি রেলের জায়গা নগরবাসীর জন্য দখল করেছি। সেই দখলকৃত জায়গায় মাঠ করে দিয়েছি, যেটা কর্নফুলী ডকইয়ার্ড দখল করতে চেয়েছিলো। আমি চারদিকে গাছ লাগিয়েছি। এটা যদি অন্যায় হয় তাহলে অন্যায় মেনে নিতে প্রস্তুত। আমাদের অনেক বাঁধা, কিন্তু কোন বাঁধা আমাকে দমিয়ে রাখতে পারেনি।

 

তিনি রাজউক ও ড্যাপের প্রসঙ্গে বলেন, রাজউক কেন আমাদের এখানে হস্তক্ষেপ করে? তারা যেসব প্ল্যান দিচ্ছে ,যত্রতত্র বিল্ডিং হচ্ছে আর বিভিন্নভাবে জায়গা দখল করা হচ্ছে। রাজউক ঢাকা নিয়ে থাকুক। আমরা যখন সিটি করপোরেশন থেকে দেখভাল করতাম তখন এমন বিশৃঙ্খলা হয়নি। ড্যাপের পরিকল্পনা ঠিকমত বাস্তবায়ন হচ্ছে না। ড্যাপের প্রতি মিটিং এ চিঠি দিয়ে যার যার স্বার্থে পরিকল্পনা পরিবর্তন করা হচ্ছে। বড় বড় শিল্পপতিরা চিঠি দেয় তার জন্য এমন রাস্তা সহজ হয়, সেভাবেই নকশা পাল্টে যায়। তাহলে ড্যাপ করে লাভ কি? তারাই নারায়ণগঞ্জ শহরকে দূষন করছে ।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, ঢাকা ৯ আসনের সংসদ সদস্য  এবং পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পৃক্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী। এছাড়া  অনুষ্ঠানে এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আজিজুল হক মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাওন শায়লা, এলআরডি এর নির্বাহী পরিচালক মামুনুল হুদা প্রমুখ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close