নিজস্ব প্রতিবেদক,ঢাকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আরবি বিভাগে লেকচারার পদে নিয়োগের ক্ষেত্রে ভাইবার পরে করা সংক্ষিপ্ত তালিকায় জামায়াত শিবিরপন্থী দুইজন রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা হলেন- তামীরুল মিল্লাত টঙ্গী শাখার আরবি লেকচারার মোহাম্মদ সালমান এবং মানারাত স্কুলের খন্দকার নুরুল একা উম্মে হানী।
অভিযোগ উঠেছে ছাত্র জীবন থেকেই তারা জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সেই সূত্রে তারা ওই দুই প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ পান এবং এখনো করছেন। এরপরও একটি গ্রুপ তাদেরকে নিয়োগ দিতে তৎপর হয়ে উঠেছে। মোহাম্মদ সালমান আগেও ঢাবিতে চাকরির জন্য সুপারিশপ্রাপ্ত হওয়ার পর জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে সেই সুপারিশ বাতিল করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। এদিকে জামায়াত শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার কথা অস্বীকার করে দুজনই নিজেদের আওয়ামী লীগপন্থী বলে দাবি করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মোহাম্মদ সালমান জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠান তামীরুল মিল্লাত কামিল মাদ্রাসার টঙ্গী শাখায় ২০০২ সাল থেকে এমপিওভূক্ত শিক্ষক পদে কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু ঢাবিতে লেকচারার পদে আবেদন করার সময় এমপিওভূক্ত শিক্ষক হিসাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে আবেদন করেনি তিনি। উল্টো তামিরুল মিল্লাত মাদরাসার শিক্ষকতা করার তথ্যটি গোপন করেছে। ইংরেজি বিহীন দাখিল (মুজাব্বিদ বিভাগ) থেকে উত্তীর্ণ সালমান ঢাবির ছাত্র থাকা অবস্থাতেই তামীরুল মিল্লাতে শিক্ষক হিসাবে যোগদান করেছিলেন। এছাড়াও অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক ভিসি থাকা অবস্থায় ২০১৮ সালে প্রো-ভিসি নাসরিন আক্তারের বোর্ডে আরবি বিভাগের লেকচারার হিসাবে সুপারিশ প্রাপ্ত হয়েছিলেন সালমান। তখন তার জামায়াত সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় ওই সুপারিশ সিন্ডেকেটে বাতিল হয়ে যায়। আর খন্দকার নুরুল একা উম্মে হানী ঢাবির ছাত্রী থাকা অবস্থায় একটি হলের ইসলামী ছাত্রীসংস্থার সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠান মানারাত স্কুলে শিক্ষিকা হিসাবে ৮ বছর ধরে কর্মরত আছেন। এছাড়াও তিনি ঢাবি ক্যাম্পাসের জামায়াতের শীর্ষস্থানীয় নেতা আরবি বিভাগের শিক্ষক ড. মিজানুর রহমানের তত্ত্বাবধানে এম.ফিল করেছে।
জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ে এম.ফিল করা অবস্থায় বিধি অনুযায়ী চাকুরীর স্থল থেকে ছুটি নেয়ার কথা থাকলেও, সে ছুটি নেননি বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অভিযোগের বিষয়ে মোহাম্মদ সালমান মুঠোফোনে বলেন, পড়ালেখায় আমার মাদ্রাসা ব্যাকগ্রাউন্ড হওয়ায় এবং টুপি-পাঞ্জাবি পড়ায় একটি গ্রুপ পরিকল্পিতভাবে অবান্তর অভিযোগ তুলছে। আমি জামায়াতের রাজনীতি করিনা, এটা কিভাবে প্রমান দিবো জানি না। যারা বলছে, তারা প্রমান দেখাক পারলে। তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করার বিষয় স্বীকার করে বলেন, ঢাবিতে নিয়োগে এই অভিজ্ঞতা কাজে দিবেনা বলে আবেদনে উল্লেখ করিনি।
খন্দকার নুরুল একা উম্মে হানী মুঠোফোনে বলেন, আমার পরিবারের সবাই মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং সবাই আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। পাবনা ৫ আসনের সাবেক এক এমপি ও আওয়ামী লীগের আরো এক শীর্ষ নেতার নাম বলে নিজের চাচা পরিচয় দেন। তারা আপনার আপন চাচা কিনা? জানতে চাইলে বলেন, আমার বাবার আপন চাচাতো ভাই। আমাদের গ্রামেই বাড়ি। আপনার বাবা মুক্তিযোদ্ধা? ও কোনো রাজনীতি করেন কিনা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনোটাই না। তবে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের ঘরে মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্প ছিল। মানারাত স্কুলে চাকুরির বিষয়ে বলেন, এটি এখন আর জামায়াতের কর্তৃত্বে নেই। এখনকার প্রিন্সিপাল মেহেদি হাসান প্রামাণিক কোনো দলীয় লোক নিয়োগ দেননি।
জানতে চাইলে ঢাবির আরবি বিভাগের চেয়ারম্যান যুবাইর মোহাম্মদ এহসানুল হক বলেন, নিয়োগের বিষয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আর কে কোন দল করেন সে বিষয়ে আমি জানি না। জানার কথাও না। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মানারাত স্কুল এখন আওয়ামী লীগের লোকজনের কর্তৃত্বে রয়েছে। তামিরুল মিল্লাত মাদ্রাসার বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।