জাতীয়নির্বাচনী হালচাল

সাড়ে ৫ কোটি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য টেলিগ্রাম চ্যানেলে ফাঁস

সাড়ে পাঁচ কোটি নাগরিকের তথ্য টেলিগ্রাম চ্যানেলে ফাঁস হয়েছে, স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশন

দেশের স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রধারী (এনআইডি) নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশ্যে মিলছে মেসেজিং অ্যাপ টেলিগ্রামের একটি চ্যানেলে। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কর্মকর্তারা বিষয়টি স্বীকার করেছেন বলে দাবি একাধিক গণমাধ্যমের।

ইসির দেওয়া তথ্যের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, এনআইডি সার্ভারে ১২ কোটি নাগরিকের তথ্য আছে। তাদের মধ্যে সাড়ে পাঁচ কোটি নাগরিক পেয়েছেন স্মার্ট এনআইডি কার্ড।

জানা গেছে, টেলিগ্রাম বটে ১০ সংখ্যার এনআইডি নম্বর দিলেই ব্যক্তির নাম, ফোন নম্বর, ঠিকানা, ছবিসহ অন্যান্য তথ্য মিলছে।

ইসির এনআইডি শাখার সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেনের ভাষ্য, এনআইডির তথ্য টেলিগ্রামে পাওয়া যাচ্ছে- এমন তথ্য গত মঙ্গলবার জানতে পেরেছেন তিনি। তবে টেলিগ্রাম চ্যানেলটির হোতা কারা, সে বিষয়ে তার জানা নেই।

তিনি বলেন, এটি শনাক্ত করা হয়েছে যে, এনআইডি সার্ভারে অ্যাক্সেস রয়েছে, এমন ১৭৪টি সংস্থার একটির মাধ্যমেই এই তথ্য ফাঁস হয়েছে। তবে কোন সংস্থা এ কাজ করেছে তা বলেননি তিনি।

আশরাফ হোসেন, “এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে,” বলে আশ্বাস দেন। তিনি আরও বলেন, “সংস্থাগুলো তাদের পোর্টালের জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে তথ্য নেয়। কখনো কখনো তাদের পোর্টালের দুর্বলতা থাকে এবং শেষ পর্যন্ত এমন পরিস্থিতি হয়।”

তবে “এনআইডি সার্ভার নিরাপদ আছে” বলে দাবি এনআইডি শাখার মহাপরিচালক একেএম হুমায়ূন কবীরের। টেলিগ্রামে তথ্য ফাঁসের বিষয়টি সম্পর্কে অবগত নন বলে জানান মহাপরিচালক।

গত ৭ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের তথ্যপ্রযুক্তি ভিত্তিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম টেকক্রাঞ্চ এক প্রতিবেদনে জানায়, একটি সরকারি ওয়েবসাইট থেকে প্রায় পাঁচ কোটি বাংলাদেশি নাগরিকের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়েছে।

আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক তখন বলেছিলেন, সরকারি সংস্থা রেজিস্ট্রার জেনারেল কার্যালয়ের সার্ভারের মাধ্যমে এই তথ্য ফাঁস হয়েছে।

ফাঁস হওয়া তথ্যের মধ্যে রয়েছে নাগরিকদের নাম, ফোন নম্বর, ইমেইল অ্যাড্রেস ও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর।

এ ঘটনার পর আইসিটি বিশেষজ্ঞরা এনআইডি সার্ভার থেকে পরিষেবা গ্রহণকারী সংস্থাগুলোর ওপর সার্বক্ষণিক নজরদারি চালাতে ইসিকে সুপারিশ করেছিলেন। পাশাপাশি নিয়মিত বিরতিতে সার্ভারে দুর্বলতা মূল্যায়ন ও অনুপ্রবেশের পরীক্ষা পরিচালনার পরামর্শও দেন তারা।

এইনআইডির তথ্য ফাঁসের ঘটনায় ক্ষুব্ধ এক নাগরিক বলেন, ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস করা আমার ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য হুমকিস্বরূপ।

জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার থেকে নাগরিকের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ফাঁস হওয়ার বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেসরকারি চাকরিজীবী মেহেদী হাসান। তিনি বলেন, “আমরা নিজেদের সিঙ্গাপুর-কানাডা দাবি করি, কিন্তু আমার মনে হয় না সোমালিয়া কিংবা মোজাম্বিকের মতো সঙ্কটপূর্ণ দেশেও নাগরিক তথ্য এভাবে ফাঁস হয়।  এভাবে চললে কিছুদিন পরে তো রাস্তার পাশে ফটোকপির দোকানে দুই-চার টাকায় নাগরিক তথ্য বিক্রি হবে।”

এ বিষয়ে প্রযুক্তিবিদ মাসুক হেলাল বলেন, “প্রথমত এর ফলে আইডেন্টিটি স্ক্যাম হতে পারে। এতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু নাগরিকের সমস্ত ব্যক্তিগত বিষয় হুমকির মুখে। আমরা জানি না ঠিক কী কী তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। তবে যদি আঙুলের ছাপের মতো বায়োমেট্রিক তথ্য ফাঁস হয়ে থাকে, তার ফল হবে ভয়াবহ।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close