সিলেট বিভাগ

দেশের চাহিদা মিটিয়ে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে বাংলাদেশী মাছ

 

কমলগঞ্জ(মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা:

দেশের বিভিন্ন প্রজাতির মাছ ভারতের ত্রিপুরাসহ বিভিন্ন রাজ্যে রপ্তানি হচ্ছে। এতে করে বাংলাদেশ সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। পাশাপাশি লাভবান হচ্ছেন রপ্তানিকৃত প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্টরা। মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার শমশেরনগর হয়ে কুলাউড়ার চাতলাপুর স্থল শুল্ক ষ্টেশন হয়ে এসব মাছ রপ্তানি করা হয়। প্রতিদিন প্রায় ৫৫-৬০ লাখ টাকার মাছ রপ্তানি হয়ে থাকে। বর্তমানে মাছ রপ্তানি করতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরনের হয়রানীর সম্মুখীন হচ্ছেন। এভাবে হয়রানী থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা যায়, দেশ স্বাধীনের আগ থেকেই মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলার চাতলাপুর সীমান্তে চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশন ও অভিবাসন কেন্দ্রের কার্যক্রম শুরু হয়। সীমান্তের ওপারে রয়েছে ভারতের কৈলাশহর হয়ে আগরতলা। প্রথমে এই সীমান্ত হয়ে বৈধ পথে দুই দেশে লোকজন পারাপার শুরু করেন। পরে শুরু হয় পণ্যদ্রব্য আমদানি রপ্তানি। বর্তমানে ভারতে বিভিন্ন ধরনের মাছ, শুঁটকি, প্লাস্টিক, সিমেন্টসহ কয়েকটি পণ্য ভারতে যায়। আর ভারত থেকে সাতকরা, কমলা, পেঁয়াজ, টাইলস তৈরির কাঁচামাল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য বাংলাদেশে আসে।

রপ্তানীকারক প্রতিষ্ঠান এস এম কর্পোরেশন এর সত্ত্বাধিকারী বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর হাসান এ প্রতিনিধিকে জানান, সরকার আমদানী রপ্তানি করার জন্য চাতলাপুর স্থল শুল্ক বন্দর খুলে দেয়ার ফলে দীর্ঘদিন ধরে সুনামের সহিত ভারতে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রপ্তানি করে আসছেন। এতে প্রচুর পরিমান বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। সরকারও বিপুল পরিমান রাজস্ব পাচ্ছে। পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশে মাছের চাহিদা পূরণ করে পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে মাছ রপ্তানি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বৈধভাবে সরকারের দেয়া সকল কিছু অনুস্মরণ করে এ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছি। মাঝে মাঝে অযথা হয়রানির ফলে আমরা নানা ভোগান্তিতে পড়ি। এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

বাংলাদেশ রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স ফামিন এন্টার প্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী মো.তাজদিক হোসেন ইমরান দু:খ প্রকাশ করে জানান, দীর্ঘ ১০ বছর ধরে কুলাউড়া চাতলাপুর স্থল শুল্ক ষ্টেশন দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ রপ্তানি করছেন। এসব মাছ রপ্তানির ফলে প্রতি বছর এবং বর্তমানে ডলার সংকটের মধ্যেও বৈদেশিক মুদ্রা আসছে। পাশাপাশি অনেকের কর্মসংস্থান বাড়ছে। কিন্তু বর্তমানে মাছ রপ্তানী করতে হয়রানীর সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি বলেন, কে বা কারা কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ও মৎস্য বিভাগকে ফোন দিয়ে মাছের সাথে অবৈধ অন্যকিছু পাচার হচ্ছে বলে জানায়। এতে করে রপ্তানিকৃত গাড়ীর মাল আনলোড আবার লোড করতে হয়। এতে করে প্রচুর সময় ব্যয় হয় এবং মাছ পৌঁছতে সময় লাগে। ভারতের আমদানীকৃত প্রতিষ্ঠানও ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। তিনি এই ভূয়া ফোনের মাধ্যমে ভিত্তি করে এভাবে হয়রানী থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য উধ্বর্তন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সামী এন্ড সাবিত এন্টার প্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মেসার্স জারা এন্টার প্রাইজ এর সত্ত্বাধিকারী মো. মশিক মোল্লা জানান, ‘তারা বৈধভাবে ব্যবসা করছেন দীর্ঘদিন ধরে। বর্ডারে এসে হয়রানির শিকার হতে না হয় এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।

চাতলাপুর স্থলের শুল্ক স্টেশনের লেবার সর্দার আলমগীর হোসেন জানান,‘এই চেকপোস্ট দিয়ে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকার জিনিসপত্র আমদানী হয়ে থাকে। আমরা মালগুলো উঠানামা করে থাকি সবসময়। কিন্তু কিছু দিন ধরে ব্যবসায়ীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন। কারণ, একবার মাল আনলোড করার পর আবার কর্তৃপক্ষ আনলোড করান। এত করে ব্যবসায়ীদের মাছগুলো নষ্টের পর্যায়ে চলে যায়। তারা সঠিক দাম পায় না ভারতে। আমাদেরও কষ্ট হয় একাধিকবার মাল আনলোড করতে।’

চাতলাপুর স্থল শুল্ক স্টেশনের কাস্টমস সুপারিনটেনডেন্ট রেজাউল হক বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করতে কোন ধরনের হয়রানীর শিকার যেন না হয় সেদিকে আমাদের নজর আছে।’

আমদানি রপ্তানির মাধ্যমে ভারত বাংলার দু’দেশের পারস্পরিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হয় সচেতন মহল এই প্রত্যাশা করছেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close