আইন ও অধিকারনারায়ণগঞ্জসোনারগাঁও
মায়াদ্বীপে হামলার শিকার শিক্ষক ও তাঁর পরিবার পালিয়ে বেড়াচ্ছে

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের নুনেরটেকের মায়াদ্বীপে সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশন পরিচালিত সুবিধাবঞ্চিত জেলে সম্প্রদায়ের শিশুদের জন্য অবৈতনিক স্কুল ‘মায়াদ্বীপ জেলে শিশু পাঠশালা’টি বন্ধ করে দেওয়ার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে হামলার ঘটনায় সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) বেলা সাড়ে ১১টায় নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সুবর্ণগ্রাম ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা, সংস্কৃতিকর্মী ও কবি শাহেদ কায়েস।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও শিল্পী রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি ভবানী শঙ্কর রায়, মায়াদ্বীপ জেলেশিশু পাঠশালার প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখি, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী সোনারগাঁ শাখার সভাপতি লেখক শংকর প্রকাশ, সাংবাদিক মাহফুজুর রহমান, সাংবাদিক আব্দুস সালাম, কবি ও সাংবাদিক নাফিজ আশরাফ, সাংবাদিক বিল্লাল হোসেন রবীন, সাংবাদিক ও লেখক আফসার বিপুল, সংস্কৃতি ও মানবাধিকার কর্মী ধীমান সাহা জুয়েল, সাংবাদিক ফখরুল ইসলাম চৌধুরী, সাংবাদিক গোলাম রাব্বানী শিমুল, শুক্কুর আল মাহমুদ প্রমুখ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২২ জানুয়ারি রাত ৯টায় সোনারগাঁ উপজেলার নুনেরটেক গ্রামের মায়াদ্বীপে ‘মায়াদ্বীপ জেলেশিশু পাঠশালা’র প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখির বাড়িতে হামলা করা হয়। বারদী ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক হাশেমের নেতৃত্বে আনোয়ার, মেহেদী, শাহাপরান, দ্বীন ইসলাস, ফয়সাল, রাকিব, রহিম আলী, রমজান, শরিফ, ফাহিম, মাসুদ, মঙ্গল আলী, ইউছুফ, অজ্ঞাত আরও কয়েকজনসহ প্রায় ২০-২২ জন সন্ত্রাসী লাঠিসোটা, দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখির বাড়িতে হামলা চালায়। তারা সেসময় তাঁকে, তাঁর ২ ভাই, এবং তাঁর মাকে মারধর করে। পাখিকে ঘুষি দিতে গেলে তাঁর ১৫ মাসের মেয়ে পারিশার মাথায় আঘাত লাগে। পরবর্তীতে তাঁদের চিৎকার শুনে আশেপাশের লোকজন আসলেও কাউকে ঘরের ভিতর ঢুকতে দেয়নি সন্ত্রাসীরা। হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়েছেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা মরিয়ম আক্তার পাখি (২৬), তার ১৫ মাসের মেয়ে পারিশা আক্তার, মা নাসিমা বেগম (৫০), ছোট ভাই মো. শরিফ (২৪) ও মো: রাশেদ (২০)। একইসঙ্গে আসবাবপত্র ভাঙচুর করে নগদ টাকা ও স্বর্ণালংকার লুট করা হয়েছে। ‘মারধরে পাখি ও তার মা যখন মাটিতে পড়ে যায় তখন তারা পাখি ও তার মায়ের গলার স্বর্ণের চেইন ও ভাইয়ের বিকাশের লেনদেনের জন্য রাখা দোকানের নগদ ৫০ হাজার টাকা লুট করে নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় বলে যায় ভবিষ্যতে স্কুলে পড়াতে গেলে পরিবারের সবাইকে তারা জবাই করে মেরে ফেলবে। পাখি ও তাঁর পরিবার যাতে নদী পার হয়ে হাসপাতালে না যেতে পারে সেজন্য সকল নৌকার মাঝিকে নিষেধ করে দেয়, তাদেরকে হুমকি দেওয়া হয়। এজন্য কেউ এগিয়ে আসেনি। পরে শাহেদ কায়েস ট্রলারের ব্যবস্থা করে আহতদের সোনারগাঁ নিয়ে আসেন।’
এ ঘটনায় মামলার বাদী প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখির ভাই মো. শরীফের তথ্যমতে তাঁর বোন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, মায়াদ্বীপ শিশু পাঠশালায় পড়ায় তাই আমাদেরকে মেরেছে, বারবার বলা সত্ত্বেও কেন পাখি, রাশেদ স্কুলে যায়, এটাই নাকি আমাদের অপরাধ!’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, বর্তমানে হামলার ঘটনায় মামলা করায় প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখিকে হত্যার হুমকি দিচ্ছে হামলাকারীরা। হামলাকারীদের হুমকির কারণে ভয়ে বাড়ি ফিরতে পারছেন না তাঁরা। প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখিসহ আহতরা হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৮ জানুয়ারি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পায়। তারপর বাড়িতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো। এমন সময় আত্মীয় স্বজন ও এলাকাবাসীর মাধ্যমে তারা জানতে পারে হামলাকারীরা গ্রামে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে, বলছে পাখি ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়ি গেলে প্রাণে মেরে ফেলবে। তাদের ঘরবাড়ি ও দোকানে আগুন দিবে। তাদের গরু জবাই করে খেয়ে ফেলবে। তাই তারা ভাড়া বাসায় আশ্রয় নিয়েছে। এখন বাইরে যেতেও ভয় হয় তাদের।’
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, হামলার ঘটনায় মামলা করার পর পুলিশ ১ জন আসামিকে গ্রেপ্তার করে। বাকীরা আদালত থেকে জামিন নিয়েছে। তারাই বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে হুমকি-ধমকি দিচ্ছে। বলছে, গ্রামে ফিরে গেলে পাখিদের মেরে ফেলবে। আমরা চাই আসামিদের যারা জামিন নেয়নি তাদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক, যাতে ভবিষ্যতে আর কেউ এ ধরনের হামলা বা স্কুল বন্ধের পাঁয়তারা করতে সাহস না পায়, যাতে কোনো শিক্ষকের উপর হামলা করার দুঃসাহস না করে। একইসঙ্গে প্রধান শিক্ষকের পরিবার যেন দ্রুত নিরাপদে গ্রামে ফিরে স্কুল চালু করতে পারে সে জন্য আমরা পুলিশ প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এ সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা যেন পড়ালেখা থেকে বঞ্চিত না হয়। সবশেষে আমরা চাই আমাদের মামলার বাদী প্রধান শিক্ষক মরিয়ম আক্তার পাখির ভাই মো. শরিফের নামে দায়ের করা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও মিথ্যা অভিযোগ তদন্তপূর্বক প্রত্যাহার করে নেওয়া হোক।