নারায়ণগঞ্জ

‘আই ডোন্ট কেয়ার’ কে ভোট দিবে কে ভোট দিবে না! -শামীম ওসমান

নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান বলেছেন, আমরা দোষ ধরতে অভ্যস্ত। আমরা দোষ ধরি খুব বেশী। কারণ এটা আমাদের একটা ন্যাচার। আমরা মানুষের ভালোর থেকে খারাপের দিকটা দেখি বেশী। এমন কোন সেক্টর নাই যে সেক্টরে পারফেক্ট আছে। রাজনীতিতে সবাই পারফেক্ট না, সাংবাদিকতা বলেন, শিক্ষকতা বলেন, হুজুর বলেন, পুলিশ বলেন, সেনা বাহিনী বলেন বা প্রশাসন বলেন, পারফেক্ট না। সবাই যদি পারফেক্ট হতো তাহলে তো আর পৃথিবীতে কোন অশান্তি থাকতো না। প্রত্যকেটায় ভালা-খারাপ থাকে। সংখ্যা কোনটা বেশী সেটা দেখতে হবে। আমরা অনেক সময় পুলিশের দোষ ধরি, কিন্তু একটা জিনিস দেখেন এদের কিন্তু পার্সোনাল লাইফে ছুটি বলতে কিছু নাই। র‌্যাবের সদস্য তাদেরও ছুটি বলতে কিছু নাই। এদের ইদে, পূজায়, নববর্ষেও ডিউটি করতে হয়। পরিবারের সাথে গল্প করবে এমন সময় এদের জীবনে খুব কম আসে। আমাদের পুলিশের সংখ্যা এমন না যে ৮ঘন্টা করে ডিউটি করাবো। আমার মনে হয় যারা রাজপথে ট্রাফিকের কাজ করেন, তারা খুব মানবেতর দিন কাটে। যদিও আওয়ামী লীগ সরকার এসে অনেক কিছু করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমি থেকে এসেছি, সেখানে এই শ্রেনী পেশার চাকরি হলো সর্বোচ্চ চাকরি। কিন্তু বাংলাদেশে কিন্তু এইটা নাই।

শনিবার (২৯ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ১০টায় নারায়ণগঞ্জ পুলিশ লাইন্সে নারায়ণগঞ্জ জেলা ‘কমিউনিটি পুলিশিং ডে’ অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।

শামীম ওসমান বলেন, আজকে অনেক বয়স হয়ে গেছে, আজ আমি যদি ১৯৯৬ সালের এমপি শামীম ওসমান হইতাম, তাহলে আজকে আপনাদের এভাবে বলতাম না। কারণ ৯৬তে নারায়ণগঞ্জে ফেন্সিডিল ক্লাব নামে একটি ক্লাব হয়েছিলো। তখন নারায়ণগঞ্জে শহরে প্রতিদিন বিক্রি হতো ৩০ হাজার বোতল ফেন্সিডিল। তখনকার এসপি এবং ওসিরা আমাকে নিষিদ্ধ পল্লি উঠানোর জন্য যেভাবে সাহায্য করেছিলো, আমি সব সময় তাদের জন্য দোয়া করি। এই নিষিদ্ধ পল্লিতে প্রায় ৬ হাজার এর উপরে নারী ছিলো, যাদের বয়স ১১ বছরের নিচে। বাংলাদেশের সমস্ত ক্রাইমগুলি কন্ট্রোল করতো নিষিদ্ধপল্লি গুলি। আমি তাদের উচ্ছেদ করি নাই শুধু, পূর্ণবাসনও করেছি। আমি শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য এই কাজটা করেছিলাম। ওই ভালো কাজটা করতে পেরেছিলাম বলে ২০০১ সালে বোমা হামলায় বেচেঁ গিয়েছিলাম।

তিনি বলেন, আমি নিজে শীতের মধ্যে নারায়ণগঞ্জে রাতে চাদর পড়ে মাদক বন্ধে নেমে পড়েছিলাম। আমাকে গুলি করতেও গেছিলো, কারণ চিনতে পারে না। যখন চাদর সরিয়েছিলাম, তখন চিনছে আমি শামীম ওসমান। আমার ৩ থেকে ৪ দিন লেগেছিলো নারায়ণগঞ্জ ও আশে পাশের এলাকায় মাদক বন্ধ করতে। তৎকালীন আইজি সাহেব আমাকে ডেকে নিয়ে গেছিলেন জরুরী ভিত্তিতে, বলেছিলো আপনাকে মেরে ফেলবে। বলেছিলাম কেনো? বলেছে সারা বাংলাদেশের মাদক ব্যবসায়ীরা এক হয়েছে আপনাকে মারার জন্য। আমি বলেছিলাম ‘তো’। আমি নারায়ণগঞ্জ ছেড়ে আরও দূরে গিয়েছিলাম মাদক বন্ধ করতে। মাদক যে খায় আমি তাকে ঘৃণা করি না। কারণ সে তো অসুস্থ। কিন্তু যে মাদক বেচেঁ সে তো ইবলিশ শয়তান। যে পরিবারে একটা ছেলে মাদক খায় সে পরিবারটা দোযখ হয়ে যায়।

এমপি শামীম ওসমান বলেন, এখন বয়স হয়ে গেছে আগের মতো পারি না। যদি পারতাম তাহলে নারায়ণগঞ্জের আশে পাশের এলাকা একাই কন্ট্রোল করে ফেলতাম। আমি জানি কারা কারা করে, যারা করে তারা সামনে চলে আসে। আমরা অনেক সময় ভান ধনে থাকি, এতো সুশিল সাজি, এতো ভালো মানুষ সাজি। পরে দেখা যায় আমার পিছনে যে লোকটা আছে সেই এলাকায় মাদক বেচঁতেছে, আমার শেল্টারে। আমি পুলিশ ভাইদের কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চাইছি, আমার নারায়ণগঞ্জটাকে একটু সেভ করেন। আপনি বিনিময়ে যে কি পাবেন আপনি কল্পনা করতে পারবেন না।

তিনি আরও বলেন, আমার বিশ্বাস পুলিশ যদি নামে তাহলে সকলে তাদের সহযোগীতা করবে। কোন শেল্টার তো দূরের কথা, লাঠি নিয়ে নামতে হতে তাহলে লাঠি নিয়ে নামবো। আই ডোন্ট কেয়ার কে ভোট দিবে কে ভোট দিবে না। আল্লাহকে খুশি করতে চাই মৃত্যুর আগে এবং এই মাদক ব্যবসাটা বন্ধ করতে চাই। আমার এখন একটাই স্বপ্ন মানুষ শান্তিতে ঘুমাক।

এমপি বলেন, আমার দল বলতে আমি কিছু বুঝি না। আমার দলের লোক যদি খারাপ লোক হয়, তাহলে তার জন্য সাজা হবে ডাবল। অন্য দলের জন্য নরমাল হলে আমার দলের জন্য হবে ডবল সাজা। কারণ আমরা শেখ হাসিনার কর্মী। শেখ হাসিনার কর্মী হয়ে যদি কেউ এই খারাপ কাজ গুলোকে প্রশ্রয় দেয় তাহলে আমি মনে করি তার এই দলে থাকা কোন প্রয়োজন নাই। আমাদেরও তাকে কোন প্রয়োজন নাই। আমি পুলিশ ভাই, আপনাদের কাছে হাত জোর করে ভিক্ষা চাচ্ছি। দয়া করেন ভিক্ষা দেন আমাদের সাথে রাখেন। একজন জমি কিনে আরেকজন গিয়ে সাইনবোর্ড টানায়, মসজিদে বিচার হয়, টাকা নিয়ে ভাগাভাগি করে। এই হলো আমাদের সমাজের অবস্থা। সো ওই হ্যাব স্টপ, আমাদের স্টপ করতে হবে। আর যদি কেউ না পারে তাহলে ইনশাআল্লাহ আমরা মাঠে নামবো।

নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) গোলাম মোস্তফা রাসেল’র সভাপতিত্বে এ সময় আরও বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মঞ্জুরুল হাফিজ, র‍্যাব-১১ অধিনায়ক (সিইও) তানভীর মাহমুদ পাশা, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, জেলা কমিউনিটি পুলিশিংয়ের সভাপতি প্রবীর কুমার সাহা, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা, নারায়ণগঞ্জ জেলা কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির সাবেক সভাপতি ডা. শাহ নেওয়াজ চৌধুরী, বর্তমান কমিটির সহ-সভাপতি কাওসার আহাম্মেদ পলাশ, অফিস সম্পাদক মোহাম্মদ কামাল হোসেন, সোনারগাঁও উপজেলার চেয়ারম্যান এড. শামসুল ইসলাম ভূঁইয়া, বারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লায়ন মো. মাহাবুব রহমান বাবুল, শিপন সরকার, সদর উপজেলার বক্তাবলী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ শওকত আলী, ফতুল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খন্দকার লুৎফর রহমান স্বপন, আড়াইহাজার পৌরভার মেয়র মো. সুন্দর আলী, নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জিএম আরমান, ফতুল্লা কমিউনিটি পুলিশিং সভাপতি মোস্তফা কামাল, কমিউনিটি পুলিশিং সিদ্ধিরগঞ্জ সেক্রেটারি আনিসুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিপন সরকার শিখনসহ নেতৃবৃন্দ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close