ধর্মসিলেট বিভাগ
ইমাম মুয়াজ্জিনগণের মর্যাদা ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট- ওলীউর রহমান

মসজিদ আল্লাহর ঘর, সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ও পবিত্র জায়গাহলো সমজিদ সমূহ। মসজিদ সমূহের সম্মান, মর্যাদা ও অবস্থানহচ্ছে মুসলমানদের হৃদয়ের গভীরে। প্রতিটি মুসলমান মনে প্রাণেমসজিদ সমূকে শ্রদ্ধা করে। সেই সাথে মসজিদের ইমাম,মুয়াজ্জিন ও খতীবগণ হচ্ছেন সম্মানের পাত্র। তারা হচ্ছেন নামাজেরমত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের জিম্মাদার। রাসূল (সা.) ইমামমুয়াজ্জিনদের জন্য দোয়া করেছেন। তিনি বলেন, “ইমাম হচ্ছেন জামিনদার আর মুয়াজ্জিন হচ্ছেন জিম্মাদার। হে আল্লাহ! ইমামদেরসত্যপথে র্দৃঢ় রাখো এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দাও।” দেশেরআড়াই থেকে তিন লক্ষ মসজিদে আলেমদের বিশাল একটি অংশ ইমাম,মুয়াজ্জিন ও খতীবের মত সম্মাজনক পেশার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এইলেখায় মূলত দেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতীব ও মসজিদের খাদিমগণেরবর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু আলোকপাত করব।প্রথমে সংক্ষেপে যে কথাটি বলতে চাই যে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি,মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নীতি নৈতিকতার অধঃপতনের বর্তমানপ্রেক্ষাপটে দেশের ইমাম মুয়াজ্জিন ও খাদিমগণ এক কঠিন সময় পারকরছেন। নিতান্ত অল্প বেতনের পাশাপাশি কোনো কোনো সময় চরমদুর্ব্যবহারের শিকারও হচ্ছেন কোন কোন ইমাম মুয়াজ্জিন। এর কারণহলো আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ ইমাম মুয়াজ্জিনদের যেভাবে কোন বেতনস্কেল নেই তেমনিভাবে নেই ধর্মীয় ব্যক্তি হিসেবে তাদের মান-সম্মানের নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোন আইন, নেই মসজিদপরিচালনার শক্তিশালী কোনো নীতিমালা। মসজিদ সমূহ পরিচালিতহচ্ছে লাগামহীনভাবে, যার যার ইচ্ছা মত।
বিগত তিন চার বছরে জিনিস পত্রের দাম অনেকগুণ বেড়ে গেলেও অধিকাংশ ইমাম মুয়াজ্জিনেরবেতন আজ থেকে চার বছর আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। বেতনবৃদ্ধির কথা বললে অনেকের চাকরী ও চলে যায়।ইমাম মুয়াজ্জিনগণের প্রতি কোনো কোনো মসজিদ কমিটিরঅবহেলা ও দুর্বব্যবহার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, অমানবিকনিয়ম কানুন চালিয়ে দিয়ে রীতিমত ইমাম মুয়াজ্জিনও খাদিমগণেরউপর নীপিড়ন চালানো হচ্ছে, তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকারথেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কোনো কোনো মসজিদ কমিটিরদায়িত্বশীল ও এলাকার মাতেব্বরদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারেরকারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন সম্মানিত ইমাম মুয়াজ্জিনগণ,সম্মানজনক এই পেশায় আসতে চাচ্ছেননা তরুণ প্রজন্মের অনেকআলেম। কোনো কোনো এলাকায় মসজিদকে পরিণত করা হয়েছে নোংরা গ্রাম্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে।
এলাকার কোনো প্রভাবশালী বা টাকাওয়ালা হচ্ছেন মসজিদের কর্ণদার। যুগের পরযুগ গ্রামের একাধিক বলয় ও গোষ্ঠীর মধ্যে চলে মসজিদেরকর্তৃত্ব নিয়ে দ্ব›দ্ব ও সংঘাত। যে গোষ্ঠী বা বলয় মসজিদেরকর্তৃত্ব পায় তারা মসজিদকে নিজেদের পৈতৃক সম্পদ মনে করে,নিজেদের ইচ্ছমত পরিচালনা করে। বহু মসজিদ এমন আছে যেখানেবছরের পর বছর ধরে আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নেই, কর্ণদাররাপ্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনা। এক কথায়ইমাম মুয়াজ্জিন নিয়োগ, তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিদা,তাদের সাথে আচরণ ও বিদায়ের প্রক্রিয়া সহ সামগ্রিক বিষয়নিয়ে রয়েছে নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি ও স্বেচ্ছাচারিতা।সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ঘটনারপ্রতি যদি দৃষ্টি দেওয়া যায় তাহলে অনুভব করা যাবে মসজিদসমূহপরিচালনার ক্ষেত্রে কত অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা হচ্ছে এবং ইমামমুয়াজ্জিনগণের সাথে কত নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে।
১. গত ২২ আগষ্ট ২২ইং নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা ইউনিয়নে একটি মসজিদের ইমামকে একটি নোটিশের মাধ্যমে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নোটিশে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার যেকারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সে কারণগুলোর অন্যতম দুটি কারণ হলো-১. তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগে থেকে নিজ নামাজের স্থানে অবস্থান করেননা। ২. তিনি মাঝে মধ্যেকমিটির অনুমতি ছাড়া এক দুই ওয়াক্ত মসজিদে অনুপস্থিত থাকেন।তাছাড়া এই নোটিশে বলা হয়েছে- মাসিক ছুটি দুই দিন এবংদুই মাসের এক সাথে ছুটি নিতে হবে। এক দুই ওয়াক্তের কোনছুটি নেই, এক দুই ওয়াক্ত অনুপস্থিত থাকলে সে পরিমাণ বেতনকর্তন হবে।উপরে বর্ণিত ঘটনায় যে চিত্র ফুটে উঠেছে এটা হচ্ছে দেশেরঅধিকাংশ মসজিদের অবস্থা।
ইমাম মুয়াজ্জিনগণের জন্য মসজিদ কমিটির পক্ষ থেকে অবশ্য কিছু নিয়ম কানুন থাকবে, তাই বলে তাদেরউপর এতো কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া কি কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত? একজন ইমাম নিজের ঘরে সুন্নত আদায় করে জামাতের দু’এক মিনিট আগে মসজিদে উপস্থিত হলেই চলে, ইমাম মুয়াজ্জিনগণচব্বিশ ঘন্টা মসজিদে অবস্থান করা জরুরী নয়, ব্যক্তিগত বাপারিবারিক কাজে কোথাও যেতে পারেন, রাস্তায় জ্যামে পড়েও সময়মতজামাতে উপস্থিত নাও হতে পারেন। মাঝে মধ্যে এরকম হতেই পারে। এইসুযোগ অবশ্য ইমাম মুয়াজ্জিনগণকে দিতে হবে। কারণ তারা তোআর সাধারণ কোনো কর্মচারী নয়, বরং তারা হচ্ছেন ধর্মীয় নেতা।এসব তুচ্ছ কারণে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনগণের বেতন কাটা বা
তাদেরকে বিদায় করে দেওয়া হলো ইমাম মুয়াজ্জিনগণের উপর চরমঅমানুষিক এবং অমানবিক আচরণ। উপরে বর্ণিত নোটিশে ইমামের ছুটি বলা হয়েছে মাসে দুই দিন,তাও আবার দুই মাসে ছুটি নিতে হবে। আমাদের দেশের সরকারীবেসরকারী যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার ছুটি থাকে। কোনোকোনো প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার ছাড়াও মাসে ২/৩ দিন ছুটি পাওয়া যায়।সব মিলিয়ে যেকোন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতকর্মচারীরা মাসে ৫/৬ দিন ছুটি ভোগ করে থাকেন। এই দৃষ্টিকোণথেকে ইমাম মুয়াজ্জিনগণও মাসে ৪/৫ দিন ছুটি পাওয়া তাদেরমানবিক ও নাগরিক অধিকার। কারণ তারা তো মানুষ এবংমসজিদগুলো তো এই সমাজেরই অংশ। গোটা সমাজের প্রতিটিমানুষ যদি শুক্রবার সহ জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসগুলোতে ছুটি ভোগকরে তাহলে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনগণকে এই সুযোগ দিতেঅসুবিধা কোথায়? অবশ্য ইমাম মুয়াজ্জিনগণ শুক্রবারের পরির্বতেসপ্তাহের অন্য দিনে এই ছুটি ভোগ করবে। তাছাড়া অধিকাংশ ইমাম মুয়াজ্জিনগণ মসজিদের হুজরা বা কোয়াটারে থাকেন, স্ত্রী সন্তাননিয়ে মসজিদের আশে পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেননা।কারণ তাদেরকে যে বেতন দেওয়া হয় এই বেতন দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়েথাকা কোনো ভাবেই সম্ভব হয়না। একারণে পরিবারের সদস্যদেরঅসুখ বিসুখে বিশেষ ছুটির সুযোগ দেওয়াও হচ্ছে তাদেরমানবিক অধিকার। কিন্তু অধিকাংশ ইমাম মুয়াজ্জিন এই অধিকারথেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। যার প্রমাণ হলো উপরের এই ঘটনা। ২. গত সেপ্টেম্বর (২০২২ইং) মাসে ঢাকা মিরপুর ২নং কাঠালবাগবায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে এক লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনাঘটেছে। মসজিদের এসি বন্ধ করতে দেরি হওয়ার কারণে মসজিদেরমোতাওয়াল্লী মসজিদের মুয়াজ্জিনকে মারপিট করেছেন। সিসিক্যামেরায় ধারণকৃত এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সোশ্যালমিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় সারা দেশে ইমামমুয়াজ্জিনগণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেন এবংঅভিযুক্ত মোতাওয়াল্লীর অপসারণ দাবী করেন। এক পর্যায়ে মসজিদকর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত মোতাওয়াল্লীকে পদচ্যুত করতে বাধ্য হয়। ৩. দেশের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় গত ২১ অক্টোবর (২০২২ইং)একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং সেই সাথে একটি ভিডিও ওভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং প্রকাশিত সংবাদে দেখাগেছে সাতক্ষিরা জেলার কালারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারুলী বিশ্বাস তাকে সালাম না দেওয়ার অপরাধে কালারোয়া উপজেলামসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা মুতিউর রহমানকে জনসম্মুখে অপস্থও নাজেহাল করছেন। এই হিন্দু এবং মহিলা নির্বাহী কর্মকর্তাউপজেলা মসজিদের খতীবকে হল ভর্তি মানুষের সামনে বেয়াদব, ছাগল
ইমাম মুয়াজ্জিনগণের মর্যাদা ওসাম্প্রতিক প্রেক্ষাপটওলীউর রহমানমসজিদ আল্লাহর ঘর, সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত ও পবিত্র জায়গাহলো সমজিদ সমূহ। মসজিদ সমূহের সম্মান, মর্যাদা ও অবস্থানহচ্ছে মুসলমানদের হৃদয়ের গভীরে। প্রতিটি মুসলমান মনে প্রাণেমসজিদ সমূকে শ্রদ্ধা করে। সেই সাথে মসজিদের ইমাম,মুয়াজ্জিন ও খতীবগণ হচ্ছেন সম্মানের পাত্র। তারা হচ্ছেন নামাজেরমত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের জিম্মাদার। রাসূল (সা.) ইমামমুয়াজ্জিনদের জন্য দোয়া করেছেন। তিনি বলেন, “ইমাম হচ্ছেনজামিনদার আর মুয়াজ্জিন হচ্ছেন জিম্মাদার। হে আল্লাহ! ইমামদেরসত্যপথে র্দৃঢ় রাখো এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করে দাও।” দেশেরআড়াই থেকে তিন লক্ষ মসজিদে আলেমদের বিশাল একটি অংশ ইমাম,মুয়াজ্জিন ও খতীবের মত সম্মাজনক পেশার সাথে সম্পৃক্ত রয়েছেন। এইলেখায় মূলত দেশের ইমাম, মুয়াজ্জিন, খতীব ও মসজিদের খাদিমগণেরবর্তমান অবস্থা নিয়ে কিছু আলোকপাত করব।প্রথমে সংক্ষেপে যে কথাটি বলতে চাই যে, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি,মূল্যবোধের অবক্ষয় ও নীতি নৈতিকতার অধঃপতনের বর্তমানপ্রেক্ষাপটে দেশের ইমাম মুয়াজ্জিন ও খাদিমগণ এক কঠিন সময় পারকরছেন। নিতান্ত অল্প বেতনের পাশাপাশি কোনো কোনো সময় চরমদুর্ব্যবহারের শিকারও হচ্ছেন কোন কোন ইমাম মুয়াজ্জিন। এর কারণহলো আমাদের দেশের লক্ষ লক্ষ ইমাম মুয়াজ্জিনদের যেভাবে কোন বেতনস্কেল নেই তেমনিভাবে নেই ধর্মীয় ব্যক্তি হিসেবে তাদের মান-সম্মানের নিরাপত্তার জন্য আলাদা কোন আইন, নেই মসজিদপরিচালনার শক্তিশালী কোনো নীতিমালা। মসজিদ সমূহ পরিচালিতহচ্ছে লাগামহীনভাবে, যার যার ইচ্ছা মত। বিগত তিন চার বছরেজিনিস পত্রের দাম অনেকগুণ বেড়ে গেলেও অধিকাংশ ইমাম মুয়াজ্জিনেরবেতন আজ থেকে চার বছর আগে যা ছিল এখনো তাই আছে। বেতনবৃদ্ধির কথা বললে অনেকের চাকরী ও চলে যায়।ইমাম মুয়াজ্জিনগণের প্রতি কোনো কোনো মসজিদ কমিটিরঅবহেলা ও দুর্বব্যবহার চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছে, অমানবিকনিয়ম কানুন চালিয়ে দিয়ে রীতিমত ইমাম মুয়াজ্জিনও খাদিমগণেরউপর নীপিড়ন চালানো হচ্ছে, তাদের নাগরিক ও মানবিক অধিকারথেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কোনো কোনো মসজিদ কমিটিরদায়িত্বশীল ও এলাকার মাতেব্বরদের স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্ব্যবহারেরকারণে অতিষ্ট হয়ে পড়েছেন সম্মানিত ইমাম মুয়াজ্জিনগণ,সম্মানজনক এই পেশায় আসতে চাচ্ছেননা তরুণ প্রজন্মের অনেকআলেম। কোনো কোনো এলাকায় মসজিদকে পরিণত করা হয়েছে
নোংরা গ্রাম্য রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে। এলাকার কোনোপ্রভাবশালী বা টাকাওয়ালা হচ্ছেন মসজিদের কর্ণদার। যুগের পরযুগ গ্রামের একাধিক বলয় ও গোষ্ঠীর মধ্যে চলে মসজিদেরকর্তৃত্ব নিয়ে দ্ব›দ্ব ও সংঘাত। যে গোষ্ঠী বা বলয় মসজিদেরকর্তৃত্ব পায় তারা মসজিদকে নিজেদের পৈতৃক সম্পদ মনে করে,নিজেদের ইচ্ছমত পরিচালনা করে। বহু মসজিদ এমন আছে যেখানেবছরের পর বছর ধরে আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নেই, কর্ণদাররাপ্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কোনো প্রতিবাদ করতে পারেনা। এক কথায়ইমাম মুয়াজ্জিন নিয়োগ, তাদের বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিদা,তাদের সাথে আচরণ ও বিদায়ের প্রক্রিয়া সহ সামগ্রিক বিষয়নিয়ে রয়েছে নানা অনিয়ম, অসঙ্গতি ও স্বেচ্ছাচারিতা।সাম্প্রতিক সময়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া কিছু ঘটনারপ্রতি যদি দৃষ্টি দেওয়া যায় তাহলে অনুভব করা যাবে মসজিদসমূহপরিচালনার ক্ষেত্রে কত অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতা হচ্ছে এবং ইমামমুয়াজ্জিনগণের সাথে কত নিষ্ঠুর আচরণ করা হচ্ছে।১. গত ২২ আগষ্ট ২২ইং নারায়নগঞ্জের ফতুল্লা ইউনিয়নে একটিমসজিদের ইমামকে একটি নোটিশের মাধ্যমে তার দায়িত্ব থেকেঅব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। নোটিশে তাকে অব্যাহতি দেওয়ার যেকারণগুলো উল্লেখ করা হয়েছে সে কারণগুলোর অন্যতম দুটি কারণ হলো-১. তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্ধারিত সময়ের দশ মিনিট আগেথেকে নিজ নামাজের স্থানে অবস্থান করেননা। ২. তিনি মাঝে মধ্যেকমিটির অনুমতি ছাড়া এক দুই ওয়াক্ত মসজিদে অনুপস্থিত থাকেন।তাছাড়া এই নোটিশে বলা হয়েছে- মাসিক ছুটি দুই দিন এবংদুই মাসের এক সাথে ছুটি নিতে হবে। এক দুই ওয়াক্তের কোনছুটি নেই, এক দুই ওয়াক্ত অনুপস্থিত থাকলে সে পরিমাণ বেতনকর্তন হবে।উপরে বর্ণিত ঘটনায় যে চিত্র ফুটে উঠেছে এটা হচ্ছে দেশেরঅধিকাংশ মসজিদের অবস্থা। ইমাম মুয়াজ্জিনগণের জন্য মসজিদকমিটির পক্ষ থেকে অবশ্য কিছু নিয়ম কানুন থাকবে, তাই বলে তাদেরউপর এতো কঠোর বিধিনিষেধ চাপিয়ে দেওয়া কি কোনোভাবে যুক্তিসঙ্গত? একজন ইমাম নিজের ঘরে সুন্নত আদায় করে জামাতের দু’এক মিনিট আগে মসজিদে উপস্থিত হলেই চলে, ইমাম মুয়াজ্জিনগণচব্বিশ ঘন্টা মসজিদে অবস্থান করা জরুরী নয়, ব্যক্তিগত বাপারিবারিক কাজে কোথাও যেতে পারেন, রাস্তায় জ্যামে পড়েও সময়মতজামাতে উপস্থিত নাও হতে পারেন। মাঝে মধ্যে এরকম হতেই পারে। এইসুযোগ অবশ্য ইমাম মুয়াজ্জিনগণকে দিতে হবে। কারণ তারা তোআর সাধারণ কোনো কর্মচারী নয়, বরং তারা হচ্ছেন ধর্মীয় নেতা।এসব তুচ্ছ কারণে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনগণের বেতন কাটা বা
তাদেরকে বিদায় করে দেওয়া হলো ইমাম মুয়াজ্জিনগণের উপর চরমঅমানুষিক এবং অমানবিক আচরণ। উপরে বর্ণিত নোটিশে ইমামের ছুটি বলা হয়েছে মাসে দুই দিন,তাও আবার দুই মাসে ছুটি নিতে হবে। আমাদের দেশের সরকারীবেসরকারী যেকোনো প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার ছুটি থাকে। কোনোকোনো প্রতিষ্ঠানে শুক্রবার ছাড়াও মাসে ২/৩ দিন ছুটি পাওয়া যায়।সব মিলিয়ে যেকোন সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরতকর্মচারীরা মাসে ৫/৬ দিন ছুটি ভোগ করে থাকেন। এই দৃষ্টিকোণথেকে ইমাম মুয়াজ্জিনগণও মাসে ৪/৫ দিন ছুটি পাওয়া তাদেরমানবিক ও নাগরিক অধিকার। কারণ তারা তো মানুষ এবংমসজিদগুলো তো এই সমাজেরই অংশ। গোটা সমাজের প্রতিটিমানুষ যদি শুক্রবার সহ জাতীয় ও ধর্মীয় দিবসগুলোতে ছুটি ভোগকরে তাহলে মসজিদের ইমাম মুয়াজ্জিনগণকে এই সুযোগ দিতেঅসুবিধা কোথায়? অবশ্য ইমাম মুয়াজ্জিনগণ শুক্রবারের পরির্বতেসপ্তাহের অন্য দিনে এই ছুটি ভোগ করবে। তাছাড়া অধিকাংশ ইমামমুয়াজ্জিনগণ মসজিদের হুজরা বা কোয়াটারে থাকেন, স্ত্রী সন্তাননিয়ে মসজিদের আশে পাশে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতে পারেননা।কারণ তাদেরকে যে বেতন দেওয়া হয় এই বেতন দিয়ে বাসা ভাড়া দিয়েথাকা কোনো ভাবেই সম্ভব হয়না। একারণে পরিবারের সদস্যদেরঅসুখ বিসুখে বিশেষ ছুটির সুযোগ দেওয়াও হচ্ছে তাদেরমানবিক অধিকার। কিন্তু অধিকাংশ ইমাম মুয়াজ্জিন এই অধিকারথেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন। যার প্রমাণ হলো উপরের এই ঘটনা। ২. গত সেপ্টেম্বর (২০২২ইং) মাসে ঢাকা মিরপুর ২নং কাঠালবাগবায়তুল জান্নাত জামে মসজিদে এক লজ্জাজনক ও দুঃখজনক ঘটনাঘটেছে। মসজিদের এসি বন্ধ করতে দেরি হওয়ার কারণে মসজিদেরমোতাওয়াল্লী মসজিদের মুয়াজ্জিনকে মারপিট করেছেন। সিসিক্যামেরায় ধারণকৃত এই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ সোশ্যালমিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এ ঘটনায় সারা দেশে ইমামমুয়াজ্জিনগণ সোশ্যাল মিডিয়ায় তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেন এবংঅভিযুক্ত মোতাওয়াল্লীর অপসারণ দাবী করেন। এক পর্যায়ে মসজিদকর্তৃপক্ষ অভিযুক্ত মোতাওয়াল্লীকে পদচ্যুত করতে বাধ্য হয়। ৩. দেশের বিভিন্ন অনলাইন পত্রিকায় গত ২১ অক্টোবর (২০২২ইং)একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে এবং সেই সাথে একটি ভিডিও ওভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ভিডিও এবং প্রকাশিত সংবাদে দেখাগেছে সাতক্ষিরা জেলার কালারোয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারুলী বিশ্বাস তাকে সালাম না দেওয়ার অপরাধে কালারোয়া উপজেলামসজিদের ইমাম ও খতীব মাওলানা মুতিউর রহমানকে জনসম্মুখে অপস্থও নাজেহাল করছেন। এই হিন্দু এবং মহিলা নির্বাহী কর্মকর্তা উপজেলা মসজিদের খতীবকে হল ভর্তি মানুষের সামনে বেয়াদব, ছাগল বলেন।