জাতীয়স্বাস্থ্য বার্তা

শল্যচিকিৎসা পরবর্তী অস্থিসন্ধির সমস্যা ও ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা

মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বৃদ্ধি পেয়েছে যাতায়াত। যার ফলে বর্তমানে সড়কে প্রায়ই ঘটে দূর্ঘটনা। প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে অনেকেই ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতালে। এ ছাড়াও খেলাধুলা সহ অন্যান্য দুর্ঘটনায়ও অনেকে আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। আহত এসব রোগীদের অনেকেরই প্রয়োজন হয় শল্যচিকিৎসা।

শল্যচিকিৎসার পর অধিকাংশ রোগীদেরই কিছু সমস্যা দেখা দেয়। যেমন অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যাওয়া, মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়া, মাংসপেশি দুর্বল হয়ে যাওয়া, মাংসপেশি অবস হয়ে যাওয়া ইত্যাদি যার ফলে চিকিৎসা গ্রহন করার পরেও স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যাহত হয় এমনকি অনেক সময় পঙ্গুত্ব বরন করতে হয়। একটু সচেতন হলে ও সময়মত ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা গ্রহন করলে এসব সমস্যা কাটিয়ে উঠে সুস্থতা লাভ করা সম্ভব।

অস্থিসন্ধি শক্ত হওয়া ও মাংসপেশি শুকিয়ে যাওয়ার কারন
আমাদের শরীরের মাংসপেশি অনেকটা রাবারের মত। আমরা যখন শরীর নড়াচড়া করি এসব মাংসপেশির দৈর্ঘ্য বাড়ে ও কমে। দীর্ঘদিন মাংসপেশির নড়াচড়া না হওয়া ও প্লাস্টার থাকার কারনে নড়াচড়া করতে না পারার কারনে মাংসপেশির দৈর্ঘ্য হ্রাস বৃদ্ধির প্রবনতা ও ক্ষমতা কমে যায়। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন নড়াচড়া না করার কারনে অস্থিসন্ধির মধ্যে থাকা জেলি শুকিয়ে যায় ও অস্থিসন্ধির চারদিকে থাকা টেনডন ও লিগামেন্টের সংকোচন ও প্রসারন ক্ষমতা কমে যায়, ফলে মাংসপেশিতে ব্যাথা হয়, দুর্বল হয়, শুকিয়ে যায় এবং অনেক ক্ষেত্রে অস্থিসন্ধি শক্ত হয়ে যায়।

ফিজিওথেরাপি কখন শুরু করতে হবে
রোগীর শারিরীক অবস্থার উপর নির্ভর করে শল্যচিকিৎসার আগে অথবা পরে আবার অনেক ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার আগে এবং পরে উভয় সময়েই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন হতে পারে। শল্যচিকিৎসার আগে মুলত রোগীকে শল্যচিকিৎসার জন্য প্রস্তুত করতে অনেক সময় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। তবে বেশীরভাগ রোগীরই শল্যচিকিৎসার পরবর্তীতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রয়োজন।

কিছু কিছু ক্ষেত্রে শল্যচিকিৎসার পরবর্তী দিন থেকেই ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা উচিত। বিশেষ করে শরীরের যে অংশে শল্যচিকিৎসা হয়েছে সে অংশের আগের ও পরের অস্থিসন্ধির ব্যায়াম দ্রুত শুরু করা খুবই জরুরী। যেমন কনুইতে কোন শল্যচিকিৎসা হলে কাধ ও কব্জির ব্যায়াম এবং হাটুতে শল্যচিকিৎসা হলে কোমড় ও গোড়ালির ব্যায়াম খুবই জরুরী। শল্যচিকিৎসা স্থানের সেলাই কাটা হলে পরবর্তী দিন থেকেই একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট এর তত্ত্বাবধানে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করা উচিত।

ভাঙ্গা হাড় জোড়া লাগতে স্থানভেদে চার সপ্তাহ থেকে বার সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

কিন্তু এই দীর্ঘ সময় অস্থিসন্ধি নড়াচড়া না করলে পরবর্তীতে তা নড়াচড়া করা কঠিন হয়ে পড়ে। আবার হাড় জোড়া লাগতে যেহেতু দীর্ঘ সময় লাগে এ সময়ে ভাঙ্গা স্থানে নড়াচড়া হলে হাড় সঠিক ভাবে জোড়া লাগবে না। কাজেই এ সময় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অত্যন্ত সতর্ক ভাবে নিতে হবে। সঠিকভাবে চিকিৎসা গ্রহন করলে হাড় জোড়া লাগার পাশাপাশি মাংসপেশির শক্তি বৃদ্ধি সহ অস্থিসন্ধি শক্ত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা শুরু করার পূর্বে অবশ্যই একজন অভিজ্ঞ ফিজিওথেরাপিস্ট এর পরামর্শ গ্রহণ করতে হবে।

মো. আমিরুল ইসলাম
ক্লিনিক্যাল ফিজিওথেরাপিস্ট
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুর্নবাসন প্রতিষ্ঠান (নিটোর)
শেরেবাংলা নগর, ঢাকা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close