নারায়ণগঞ্জসিদ্ধিরগঞ্জ
সিদ্ধিরগঞ্জে চাঁদা না দেওয়ায় বসতবাড়িতে তালা দেওয়ার অভিযোগ

সিদ্ধিরগঞ্জ ( নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে সঙ্গবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের কবলে পড়ে নিজের তৈরি করা বসতবাড়িতে বসবাস করতে পাড়ছেন না। রাবেয়া আক্তার চুন্নি নামের এক নারীর পরিবারবর্গ। চাঁদাবাজের বিরুদ্ধে মামলা হলেও জামিনে বেরিয়ে আবারও হামলার অভিযোগ ভুক্তভোগীর।
সিদ্ধিরগঞ্জের নাসিক ৬ নং ওয়ার্ড সুমিলপাড়া বিহারি কলোনি এলাকার বাসিন্দা রাবেয়া আক্তার চুন্নি। তার স্বামী বিল্লাল হোসেন প্রবাসে থাকাকালীন অবস্থা পরিশ্রমের টাকা দিয়ে পার্শবর্তী ৭ নং ওয়ার্ডের কদমতলি পুকুরপাড় এলাকায় ২০১৭ সালের শেষের দিকে ১৩ লক্ষ টাকায় আড়াই শতাংশ জমি কিনেন। জায়গা কিনা থেকে শুরু করে গত পাঁচ বছর যাবত চাঁদাবাজদের থেকে তাকে নানা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে বলে জানান তিনি।
ভুক্তভোগী নারী জানান, তিনি ২০১৭ সালে যখন জায়গা ক্রয়ের জন্য কথাবার্তা বলছিলেন তখন ঐ এলাকার মৃত জালালের ছেলেরা চাঁদাবাজ চক্রের হিরা, মানিক, অন্তর, হৃদয়, হাসান ও একই এলাকার তাঁতি লীগ নেতা লিটন তার থেকে চাঁদা দাবী করে। তখন তিনি চাঁদাবাজের নগদ ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দেওয়া লাগে। অভিযুক্ত হিরা ও মানিক কদমতলি এলাকায় ইটা-বালুর ব্যবসা করায় সবাইকে তার থেকে পন্য নেয়া লাগে । যখন রাবেয়া আক্তার চুন্নি জায়গাটি ক্রয় করে তখনই তারা তাকে বলেছেন বাড়ির কাজের যাবতীয় ইটা-বালু-সিমেন্ট আমরা দিবো।যদি তাদের দিতে দেওয়া না হয় বাড়ির কাজ বন্ধ থাকবে।
একপর্যায়ে ভুক্তভোগী নিরুপায় হয়ে তাদের থেকে বাড়ির কাজের সকল পন্য নেওয়া শুরু করে কাজ চলমান রাখেন। তিনি আরও বলেন, আমার বাড়ির আশপাশের মানুষজন আমাকে যখন বলেন, যে চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা ইটা-বালু -সিমেন্ট টাকার পরিমাণ কম দিয়ে কাজ চালাতো। তখন হঠাৎ একদিন ভুক্তভোগী নিজে তার পন্য গুনে দেখেন তার ৩ হাজার ইটার জায়গায় ২ হাজার দেওয়া হয়েছে, ১৪ বস্তা সিমেন্টের বদলে ১০ বস্তা ও এক গাড়ি বালুর পরিমাণ ৭০ বস্তা হয়। তখন তাদের প্রশ্ন করলে নানান হুমকি দেন তাকে। তখন হিরারা দাবী করে ২ লক্ষ টাকা পান নারীর কাছে। তিনি তা মেনে নিয়ে ২ বছর যাবত ৫-১০ করে টাকা দিয়ে আসছিলো বলে জানান।
বাড়ির গ্যাসের জন্য ভুক্তভোগী নারী যখন অন্য লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন চাঁদাবাজ চক্রের হিরা ও তাঁতি লীগ নেতা গুজা লিটন তাকে বলেন ৩ লাখ টাকা দিয়ে অবৈধ গ্যাস এনে দিবে। তাদের প্রস্তাবে নারী রাজি না হওয়া বিভিন্ন ভাবে তাকে অত্যাচার করা হয়। তিনি বলেন, সর্বশেষ আগস্ট মাসের ১ তারিখ বিকেল ৪ টায় ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বিল্লাল হোসেনকে অপহরণ করে তুলে নিয়ে যান চাঁদাবাজরা। তাকে লোহার রড, লাঠিসোটা দিয়ে মারধর করে চাঁদা আদায়ের চেষ্টা করেন হিরা ও লিটনরা।
খবর পেয়ে উক্ত নারীর মেয়ে ৯৯৯ এ ফোন করলে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রিপন খন্দকার তার স্বামীকে উদ্ধার করেন। ভুক্তভোগী তাদের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাদের চক্রের প্রধান হিরাকে পুলিশ গ্রেফতার করে আদালতে পাঠালে। একদিন পর হিরা জামিনে এসে তার বাড়ির এক ও দো তালার ঘরের সকল আসবাবপত্র ভেঙে ঘরে তালা লাগিয়ে দেন। এবং নাীরকে বলেন ৩ লাখ টাকা না দিলে মেরে ফেলবে। ভুক্তভোগী নারীর স্বামী বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে ৬ আগস্ট ২০২২ ইং তারিখ বেআইনী জনতাবদ্ধে আটক করে মারপিট, জখম, ও চুরি ও হুমকি প্রদানে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেন।
উক্ত মামলায় আসামি করা হয়েছিল, কদমতলি নয়াপাড়া পুকুরপাড় এলাকার মৃত জালালের চার ছেলে আবুল কালাম হিরা( ৩৫) মানিক (৩৪) অন্তর (২৮), হৃদয় (২৪), কদমতলি নয়াপাড়া এলাকার আবু তাহেরর ছেলে হাসান (২৫) এবং একই এলাকার বাতেন চৌধুরীর ছেলে টিটু (২৬) কে। এ বিষয়ে অভিযুক্ত হিরা বলেন, এ ঘটনা পুরোপুরি মিথ্যা। রাবেয়া আক্তার নামের মহিলা অহেতুক আমাদের বিরুদ্ধে এসব বলছেন। আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধির কাছে বিষয়টি জানিয়েছি। আমাদের কাউন্সিলর সব জানেন।
এ বিষয়ে নাসিক ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিল মিজানুর রহমান রিপন জানান, রাবেয়া আক্তার চুন্নি নামের এক মহিলা আমার কাছে অভিযোগ দিয়েছিল তার বাসায় কিছুসংখ্যক লোকজন তালা মেরে রেখেছেন।তখন আমি অসুস্থ থাকায় বিষয়টি দেখা হয়নি। আমাকে গ্যাসের চাঁদার বিষয় কিছু জানান নি ঐ নারী। এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার তদন্ত (ওসি) হাফিজুর রহমান মানিক জানান, এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলা তদন্ত করে যারা জড়িত তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।