
এমদাদুল্লাহ্, বজ্রধ্বনি :
দেশের প্রয়াত শীর্ষ আলেম শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকের সন্তান মাওলানা মামুনুল হকের মুক্তি দাবি করেছেন দেশের শীর্ষ আলেমরা। তারা আশা প্রকাশ করেছেন, প্রয়াত শায়খুল হাদিসের সম্মান রক্ষার্থে মামুনুল হকসহ কারাগারে অন্তরীণ আলেমদের মুক্তি দেবে সরকার।
শুক্রবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রাজধানীর গুলিস্তানের কাজি বশির মিলনায়তন ও তার আশপাশে অবস্থান নেওয়া হাজার হাজার আলেম-উলামা ও ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ‘শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হক রহ.র জীবন ও কর্ম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের শীর্ষ আলেমরা এসব দাবি করেন। সভার আয়োজন করে শায়খুল হাদিস পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন শায়খুল হাদিস পরিষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, বাংলাদেশ কওমি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়ার মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক।
আলোচনায় অংশ নেন হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী (প্রতিনিধির মাধ্যমে), মধুপুরের পীর মাওলানা আবদুল হামিদ, সিলেট দরগাহ মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা মহিব্বুল হক গাছবাড়ী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা ইসমাইল নুরপুরী, হাটহাজারী মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা আশরাফ আলী নিজামপুরী, খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ডক্টর আহমদ আব্দুল কাদের, পটিয়া মাদরাসার নায়েবে মুহতামিম মাওলানা আবু তাহের নদভী, আন্তর্জাতিক মজলিসে তাহাফফুজে খতমে নবুওয়াতের মহাসচিব মাওলানা মুহিউদ্দিন রব্বানী, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের সিনিয়র নায়েবে আমীর মাওলানা ইউসুফ আশরাফ, মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দিন আহমদ, বিশিষ্ট লেখক মাওলানা যাইনুল আবেদীন, জমিয়ত নেতা মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়া, জামিয়া মুহাম্মাদিয়া আরাবিয়ার মুহতামিম আল্লামা আবুল কালাম, বেফাকের সহ-সভাপতি মাওলানা মুসলেহ উদ্দীন রাজু, জমিয়ত নেতা মাওলানা নাজমুল হাসান কাসেমী, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি মাওলানা এনামুল হক, উজানী মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা মাহবুবে এলাহী, ইত্তেফাকুল উলামা বৃহত্তর মোমেনশাহীর মাওলানা মুফতি মাহবুবুল্লাহ, হাইআতুল উলইয়ার পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাওলানা ইসমাইল বরিশালী, মানিকগঞ্জের পীর মাওলানা সাঈদ নূর, চরমোনাই পীরের প্রতিনিধি মাওলানা ইমতিয়াজ আলম, বিশিষ্ট লেখক মাওলানা লিয়াকত আলী, শায়খুল হাদীস রহ. এর বড় সাহেবজাদা হাফেজ মাহমুদুল হক, মেজো সাহেবজাদা মাওলানা মাহবুবুল হক, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমীর মাওলানা রেজাউল করিম জালালী, যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আব্দুল আজিজ, মাওলানা আব্দুল্লাহ, শায়খুল হাদিস পরিষদের সদস্য সচিব মাওলানা হাসান জুনাইদ, সহ সদস্য সচিব মাওলানা আব্দুল মুমিন, মাওলানা এহসানুল হক, অর্থ সচিব মাওলানা মুহাম্মাদুল্লাহ, সহ অর্থ সচিব মাওলানা শামসুল আলম প্রমুখ।
সভায় হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরীর দেওয়া লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন চট্টগ্রামের জামিয়া ইসলামিয়া আজিজুল উলূম বাবুনগর মাদরাসার শিক্ষক মুফতি মুহাম্মাদ ইকবাল। লিখিত বক্তব্যে শাহ্ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী বলেন, ‘ঈমানী আন্দোলনে শায়খুল হাদিস রহ. কোনো ভয়ভীতি, মামলা-হামলার তোয়াক্কা করেননি। পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে রাজপথে ভূমিকা রেখেছেন। এজন্য অনেক কুরবানি তাকে পেশ করতে হয়েছে। তিনি বার বার কারাবরণ করেছেন কিন্তু ঈমানী আন্দোলন থেকে একচুল পিছপা হননি।
তিনি বলেন, আজকে শায়খুল হাদিস রহ. এর জীবনী আলোচনা করতে গিয়ে বারবার মনে পড়ছে তার কলিজার টুকরা, আমার অত্যন্ত স্নেহের পাত্র মাওলানা মামুনুল হকের কথা। তিনি প্রায় দেড় বছর যাবত কারাবন্দী। আমি সরকারের কাছে আহ্বান জানাই যে, তাকেসহ সকল উলামায়ে কেরামকে অবিলম্বে মুক্তি দিন।
তিনি আরো বলেন, অনেকেই আমাকে বলে, এই সরকার যতদিন ক্ষমতায় আছে, তারা আলেমদেরকে মুক্তি দিবে না। আমি একথা বিশ্বাস করতে চাই না। আমি আশা করি, সরকার আমাদের দাবি মানবে এবং সকল আলেমদের মুক্তি দেবে।
শায়খুল হাদিসের রাজনৈতিক অবদান উল্লেখ করে আলেমদের উদ্দেশ্যে হেফাজতের আমির বলেন, এই সময়ে আলেম সমাজকে নিজেদের ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে। অনেকে নিজের স্বার্থসিদ্ধির জন্য, কিছু পাওয়ার আশায় মূল কাজ থেকে সরে গিয়ে এদিকে-ওদিকে ছুটোছুটি করছি। যা আলেমদের ঐতিহ্যের বিরোধী। এসব কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে।’
বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির আল্লামা ইসমাইল নুরপুরী বলেন, ‘আল্লামা মামুনুল হকসহ অনেক আল্লামাকে জেলের মধ্যে আবদ্ধ রেখেছে এই সরকার। সরকারকে বলতে চাই, আপনারা ওলামাদের অশ্রুর জলকে এ্যাটমবোম বানাবেন না। অনতিবিলম্বে আল্লামা মামুনুল হকসহ সকল আলেমদের মুক্তি দিন। তাহলে দেশে শান্তি নাযিল হবে।’
অনুষ্ঠানে খেলাফত মজলিসের মহাসচিব অধ্যাপক ডক্টর আহমদ আব্দুল কাদের বলেন, ‘শায়খুল হাদিস বলতে বাংলাদেশে একমাত্র শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হককেই বোঝায়। তার জীবনের খেদমতের জন্য যেন আল্লাহ্ তাকে বেহেশত নসিব করেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে তার মতো মানুষের প্রয়োজন বড় আকারে অনুভব হচ্ছে। আমরা যদি এক হতে পারি তাহলে কোন বাঁধাই আমাদের বাঁধা হতে পারবে না। আসুন আমরা এক হই নেক হই।’
অনুষ্ঠানের সভাপতি মাওলানা মাহফুজুল হক বলেন,‘শায়খুল হাদিসের রেখে যাওয়া সব কিছু আমাদের কাছে আমানত। তিনি তার পরিবারকে আমাদের কাছে যেভাবে রেখে গেছেন, এটাও আমাদের কাছে অনেক বড় আমানত। এই আমানতের কদর করা, তাদের পাশে থাকা, সকল কর্মকাণ্ডের তাদের সহযোগিতা করা আমাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। শায়খুল হাদিসের পরিবারের সদস্য আমার ছোট ভাই মামুনুল হক। এই দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শায়খুল হাদিসের অনেক অবদান রয়েছে। তার সেই ভূমিকার হক আদায় স্বরূপ, তার হাতেগড়া, তার হাদিসের মসনদে বসে, তার সন্তান আল্লামা মামুনুল হককে অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে, সরকারের কাছে আহ্বান করবো, তাকে মুক্তি দিবেন। শায়খুল হাদিস রহ.র সম্মান রক্ষার্থে তাকে মুক্তি দিন।’
সভায় বক্তাগণ বলেন, ‘শায়খুল হাদিস রহ. চলে যাওয়ার পর আল্লামা আহমদ শফী রহ. আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী রহ. আল্লামা নুর হুসাইন কাসেমী রহ.সহ আরও অনেক ওলামায়