Uncategorized
“আমি পাড়ায়া মানুষ মাইরালাই”, আড়াইহাজার উপজেলা চেয়ারম্যানের হুমকি
আমি একটা উপজেলা চেয়ারম্যান। আমার একটা সরকারি মর্যাদা আছে। তোমার শহিদুল্লাহ ভাই জীবনে মেম্বার হইতে পারছে? তুমি আমার ছবিতে দাগ দিছ, এতে কী হইবো তুমি জানো? তোমারে আমি কী ভয় দেখামু? তুমি জানো, আমি পাড়ায়া মানুষ মাইরালাই। একদম ধইরা লইয়া আইবো, পাড়ায়া মাইরালামু। এই মালাউনের বাচ্চা, তরে আমি কী ভয় দেখামু? তর গাজীপুরে আমি ব্যবস্থা করতাছি।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশিত একটি অডিও রেকর্ডে আড়াইহাজার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকারকে এভাবেই হুমকি দিতে শোনা যায়। যাকে হুমকি দিচ্ছেন তিনি গাজীপুর মহানগর শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অমিত সাহা। এই নেতাকে ‘মালাউন’ বলে গালি এবং পাড়া দিয়ে মেরে ফেলার হুমকির অডিও ফাঁস হতেই জেলাজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে।
৩ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই অডিওর শুরুতে চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান ও অমিত সাহাকে স্বাভাবিক ভাবেই কুশল বিনিময় করতে শোনা যায়। অমিত সাহা তাঁর একটি ছবিতে কেন লাল দাগ দিলেন এ প্রশ্ন তুলে কৈফিয়ত দাবি করতে থাকেন মুজাহিদুর রহমান। কথার একপর্যায়ে চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান বলেন, ‘তুমি আমার ছবিতে দাগ দিছ, এতে কী হইবো তুমি জানো?’ প্রতি উত্তরে অমিত সাহা বলেন, ‘আমাকে এসব ভয় দেখাইয়েন না। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধা ভালোবাসা আছে, থাকবে।’ এরপরই ক্ষিপ্ত হয়ে পাড়া দিয়ে মেরে ফেলার হুমকি এবং ‘মালাউনের বাচ্চা’ বলে গালি দেন মুজাহিদুর রহমান। তর্কবিতর্কের পরে অমিত সাহা বলেন, ‘আমার মতো তেলাপোকাকে কেন ফোন দিছেন আপনি?’ এরপরেই সংযোগটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অমিত সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমাদের শেখ রাসেল শিশু কিশোর পরিষদের মূল সংগঠনটি মহাসচিব দ্বারা পরিচালিত। এরই মধ্যে গত ২০২১ সালে প্রধানমন্ত্রী কেএম শহীদুল্লাহ ভাইকে সংগঠনের মহাসচিব পদে স্থলাভিষিক্ত করেন। কিন্তু একই নামে আরেকটি পক্ষ, যেটা মুজিবুর রহমান হাওলাদার ও মুজাহেদুর রহমান হেলো সরকার মিলে সংগঠন চালাচ্ছে। এ নিয়ে আপত্তি করে আমি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেই, যেখানে তাঁর ছবি রেড মার্ক করে দেই। সেই পোস্ট দেখে গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ৮টার দিকে হেলো সরকার আমাকে ফোন করে প্রথমে হুমকি ও গালাগাল করে। আমরা সংখ্যালঘু বলে সে আমাকে মালাউনের বাচ্চা বলে গালি দেয়। এ ছাড়া আমাকে গাজীপুর থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে সে। এই অবস্থায় আমি আমার জীবন নিয়ে শঙ্কার ভেতর আছি।’ ফোনে হুমকি ও গালাগাল দেওয়ার ঘটনা নিয়ে গতকাল রোববার (১৮ সেপ্টেম্বর) রাতে গাজীপুরের বাসন থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন অমিত সাহা। সেখানে তিনি চেয়ারম্যান মুজাহেদুর রহমান হেলো সরকারের নাম উল্লেখ করে লিখেছেন, গত ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ৭টা ৫৫ মিনিটে আমাকে তাঁর ব্যবহৃত নম্বর দিয়ে ফোন করে সাংগঠনিক বিষয় নিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল এবং ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন।
অডিওর সত্যতা স্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান মুজাহিদুর রহমান হেলো সরকার। তিনি বলেন, ‘অই ছেলে আমার নামে উলটাপালটা লিখে আমার ছবিতে লাল কালি দিয়ে দাগ দিয়েছে। তখন আমি বলেছি, ওই ব্যাটা তুমি এইটা করছো কেন? আমি উপজেলার চেয়ারম্যান। এটা নিয়ে আমার এলাকায় প্রতিক্রিয়া হইছে। এলাকার লোকজন তো পিটায়া মাইরা ফেলব। ও আমারে বলে, আপনি আমাকে ভয় দেখান? আমি তখন বলছি, তরে আমি ভালো কথা বলছি, তুই মালাউন মানুষ, এত সাহস দেখাস কেন হিন্দু মানুষ হইয়া? এইটা আবার অডিও কইরা প্রচারের দরকার কী? ও জিডি করছে, এখন যদি আমিও করি? কারণ আমার নামে ফেসবুকে উলটাপালটা লিখছে।’ একজন দায়িত্বশীল চেয়ারম্যান হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের কাউকে ‘মালাউন’ বলা বা হত্যার হুমকি দেওয়া কতটা শোভনীয় এমন প্রশ্নে মুজাহিদুর রহমান বলেন, ‘ও তো আমারে উত্তেজিত করছে। ও আমাকে বলে আপনি আমাকে ভয় দেখান? সেই প্রসঙ্গে আমি রাগের মাথায় বলছি। ওই ছেলে যে এসব রেকর্ড করছে সেটাই তো আমি জানি না। আমি তো মানুষের কথা রেকর্ড করি না।’