নারায়ণগঞ্জনারায়ণগঞ্জ সদররাজনীতি

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রতিদ্ধন্ধী আওয়ামীলীগ

নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের নির্বাচনে এবার আওয়ামীলীগের প্রতিদ্ধন্ধী আওয়ামীলীগ। দলীয় মনোনয়নের লড়াইয়ে কেউ কাউকে ছাড় দিচ্ছে না। জেলা পরিষদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণার পর নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে বেশ কয়েকজন নেতা জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হতে তৎপর হয়েছেন ছুটছে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে সম্ভব্য প্রার্থীররা নিজ নিজ দিক থেকে লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

এদিকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে অন্য কোনো দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করায় আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে সরকারদলীয় সম্ভব্য প্রার্থীরা কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে লবিং শুরু করেছেন। প্রার্থীরা জেলার ইউনিয়ন ও ইউপি সদস্যদের পাশাপাশি নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধি করছেন। বিএনপিসহ অন্যান্য দলের কোনো প্রার্থী না থাকায় ঘুরেফিরে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের নাম আলোচনায় উঠে আসছে।

আসন্ন নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামীলীগের কে হচ্ছেন চেয়ারম্যান প্রার্থী। কে হচ্ছেন সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী । তফসিল ঘোষণার পর থেকে এই নিয়ে জেলার বিভিন্ন স্থানে আলোচনা চলছে।

দলীয় সূত্রমতে, জেলা পরিষদের এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী তালিকায় বেশ কয়েকজন নেতার নাম আলোচনায় উঠেছে। তারা হলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, সহ- সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবু চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা এবং নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের পিপি এডভোকেট রকিব । আর আগ্রহী এসব সম্ভাব্য প্রার্থীরা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দলের মনোনয়ন পেতে দৌড়-ঝাঁপ শুরু করেছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।

তবে তারা সবাই বলছেন, দল যদি তাদের মনোনয়ন দেয়, তাহলেই তারা প্রার্থী হতে আগ্রহী। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে কেউ প্রার্থী হবেন না এমটাই জানাগেছে।

এদিকে গত (৪ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে জেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয়  মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করছেন। মনোনয়নপত্র বিতরণ আগামী ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে। এরপর ১০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় সরকার জনপ্রতিনিধি মনোনয়ন বোর্ডের যৌথসভায় ৬১ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হবে।

আওয়ামী লীগ সূত্র বলছে, স্থানীয় সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান জেলা পরিষদ নির্বাচনকে খুবই গুরুত্বসহকারে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমানে বেশির ভাগ জেলাতেই আওয়ামী লীগের লোকেরাই দায়িত্ব পালন করছে। তাদের মধ্যে যারা বিতর্কিত ও জনবিচ্ছিন্ন তাদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে না। তবে যারা ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়, পরিচ্ছন্ন ইমেজ রয়েছে, বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থী- তাদেরকেই মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ। দলীয় প্রধানের কাছে সেরকম তালিকা করাও আছে।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলী ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য আব্দুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগ সবসময়ই স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও জনপ্রিয় প্রার্থীদের মনোনয়ন দিয়ে থাকে। এজন্য আমাদের প্রার্থীরা বিজয়ীও হয়। এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না। আমরা গ্রহণযোগ্য প্রার্থীদেরই মনোনয়ন দেব।

আরও জানা গেছে, জেলা পরিষদ নির্বাচনে কাকে মনোনয়ন দেয়া হবে, তার একটি তালিকা আগে থেকেই প্রধানমন্ত্রীর কাছে জমা আছে। আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকরা স্ব স্ব দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগের জেলাগুলোর প্রার্থীদের একটি মূল্যায়ন তালিকা দলীয় সভাপতির কাছে আগেই জমা দিয়েছেন। সেই তালিকার পাশাপাশি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থারও একাধিক তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কাছে আছে। সেগুলো যাচাই-বাছাই করেই জনপ্রিয় ও বিজয়ী হয়ে আসার মতো প্রার্থীদেরকে মনোনয়ন দেয়া হবে।

ইতিমধ্যে জেলা পরিষদ নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে রাজধানীর ধানমন্ডি আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় থেকে দলীয়  মনোনয়ন ফরম ক্রয় করেছেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর আওয়ামীলীগের সভাপতি জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই, সহ- সভাপতি মিজানুর রহমান বাচ্চু, সাধারণ সম্পাদক এড. আবু হাসনাত মো. শহিদ বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি বাবু চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক এড. খোকন সাহা এবং নারায়ণগঞ্জ নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালের পিপি এড. রকিবুউদ্দিন আহমেদ।

এবিষয়ে জানতে চাইলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদের প্রশাসক বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল হাই বলেন, আমি দলের কাছে মনোনয়ন চাইবো। আমি আশাবাদী দল আমাকে মূল্যয়ান করবো। এর আগে আমি সৎ ও নিষ্ঠার সাথে এই জেলা পরিষদের প্রশাসক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি।  তিনি আরও বলেন, এখানে দলীয় প্রধান বঙ্গবন্ধুর কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। তিনি যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকে নিয়েই কাজ করবো। সে ক্ষেত্রে আমার তো কোন আপত্তি থাকবে না। আমি রাজনীতি করি, দলের যে কোন সিদ্ধান্ত মাথা পেতে মেনে নিতে হবে।

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের বর্তমান প্রশাসক ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি। ইনশাল্লাহ আমি আশাবাদী দল আমাকে আবারও মূল্যয়ান করবে।

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) এড. রকিবুদ্দিন আহমেদ বলেন, জেলা পরিষদ নির্বাচনে আমি দলীয় মনোনয়ন ফরম আজ সংগ্রহ করবো। আমি দীর্ঘদিন ধরেই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। আমি আশাবাদী দল আমাকে মনোনয়ন দিবে।

অন্যদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সাধারণ সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদেও রয়েছেন অনেক প্রার্থী। গত ২০১৬ সালে জেলা পরিষদ নির্বাচনে সাধারণ সদস্য ১৫জন এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ৫জন ছিলেন। কিন্তু এবার তা কমিয়ে করা হয়েছে ৫জন আর ২জন। ফলে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের একাধিক প্রার্থী প্রতিদ্বন্ধী করবে।  সুতরাং সাধারণ সদস্য এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে এবারও আওয়ামীলীগের প্রতিদ্ব›দ্বী হিসেবে আওয়ামী লীগে থাকছে।

সূত্রমতে, জেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোটার নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, কাউন্সিলরস, পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর , উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সহ মোট ভোটার সংখ্যা ৬১০।  আর জেলা পরিষদের একজন চেয়ারম্যান এবং ৫টি সদস্য ও ২টি সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে একটি কেন্দ্রে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

এবিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মতিয়ুর রহমান বলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক, জেলা পরিষদ নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করবেন এবং ভোট হবে ইভিএম-এ। নির্বাচনে জেলার মোট ভোটার সংখ্যা ৬১০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৪৬৬ আর মহিলা ভোটার রয়েছে ১৪৪টি।

প্রসঙ্গত: ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ তারিখ ১৫ সেপ্টেম্বর, মনোনয়ন বাছাই ১৮ সেপ্টেম্বর, বাছাইয়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে ১৯ থেকে ২১ সেপ্টেম্বর, আপিল নিষ্পত্তি ২২ থেকে ২৪ সেপ্টেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২৫ সেপ্টেম্বর, প্রতীক বরাদ্দ ২৬ সেপ্টেম্বর এবং ১৭ অক্টোবর ভোটগ্রহণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close