রাজনীতি

বিনা বিচারে ১৬ বছর! অসুস্থ হুমায়ুন কবিরের মুক্তি চায় বিএনপি

দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে কারাবন্দি রয়েছেন কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির উপদেষ্টা এবং কুমারখালী পৌর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক হুমায়ুন কবির। দলীয় নেতাকর্মী ও পরিবারের দাবি—তাকে একটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। বর্তমানে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় কারাগারে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।

২০০৯ সালের ৭ মার্চ ঢাকার কাওলা এলাকায় সংঘটিত একটি হত্যা মামলায় ষড়যন্ত্রমূলকভাবে তাকে জড়ানো হয় বলে দাবি করেছে বিএনপি। তারা বলছে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনের প্রত্যক্ষ ইন্ধনে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে মামলাটি সাজানো হয়। ওই বছরের জুন মাসে আত্মসমর্পণের পর থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।

সম্প্রতি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাকে হাত-পায়ে ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে রাখা হয়, যা মানবাধিকারকর্মীদের মতে চরম অমানবিক ও নিন্দনীয়। অভিযোগ উঠেছে, চিকিৎসার সুযোগ থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতা ও অবহেলার কারণে তা বিলম্বিত হচ্ছে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক সৈয়দ মেহেদী হাসান রুমি বলেন,
“হুমায়ুন কবির একজন ত্যাগী, আদর্শবান রাজনৈতিক নেতা। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিনা দোষে কারাভোগের পাশাপাশি আজ তিনি চিকিৎসা বঞ্চিত। এটা শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নয়, এটা একজন মানুষকে ধ্বংস করে দেওয়ার চক্রান্ত। আমরা তার অবিলম্বে মুক্তি এবং উন্নত চিকিৎসার দাবি জানাই।”

এর পর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,
“চিকিৎসা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়া জেলা বিএনপির নেতা হুমায়ুন কবির কারাগারে অসুস্থ অবস্থায় আছেন। আমরা তার উন্নত চিকিৎসা ও দ্রুত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।”

কাশিমপুর কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার আল মামুন জানান,
“হুমায়ুন কবিরকে উন্নত চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। তবে এখন তাকে কারাগারের হাসপাতালে ফিরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার নিরাপত্তার স্বার্থে ডান্ডাবেড়ি পরানো হয়।”

বিএনপির কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মীর ইমরান হোসেন মিথুন বলেন,
“আমার রাজনৈতিক জীবনে যতবার কারাবরণ করেছি, সবার আগে পাশে পেয়েছি হুমায়ুন কবির ভাইকে। তিনি আমাদের অভিভাবকতুল্য। বিএনপির প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মী তার সহযোগিতা পেয়েছেন।”

হুমায়ুন কবিরের ভাই মানিক বলেন,
“আমার ভাই জেলে ভালো নেই। তার সঠিক চিকিৎসা হচ্ছে না। দীর্ঘদিন ধরে মিথ্যা মামলায় তাকে বন্দি রাখা হয়েছে। আমরা তার অবিলম্বে মুক্তি চাই।”

প্রসঙ্গত, জুলাই-আগস্টে বর্তমান সরকারের পতনের পর বহু আলোচিত মামলার আসামিরা জামিন ও মুক্তি পেলেও হুমায়ুন কবির এখনও একই মামলায় বন্দি রয়েছেন। দলীয় নেতারা প্রশ্ন তুলছেন, “যেখানে অন্যরা জামিন পাচ্ছেন, সেখানে হুমায়ুন কবির কেন পাচ্ছেন না?”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এখন সময় এসেছে প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে মামলাটির নিরপেক্ষ তদন্ত ও দ্রুত নিষ্পত্তি নিশ্চিত করার। মানবিক বিবেচনায় একজন গুরুতর অসুস্থ, প্রবীণ রাজনীতিবিদের জামিন প্রদান ও উন্নত চিকিৎসা এখন অত্যাবশ্যক।

সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close