অপরাধআইন ও অধিকারনারায়ণগঞ্জসিদ্ধিরগঞ্জ

সিদ্ধিরগঞ্জে নূর হোসেনের ছোট ভাই সন্ত্রাসী জজ মিয়ার চাঁদাবাজির অভিযোগ

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে ১৫ আগস্ট শোক দিবস পালনের জন্য নারায়ণগঞ্জের সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেনের ছোট ভাই দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ নুরুজ্জামান ওরফে  জজ মিয়া বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। শিমরাইল ট্রাক প্রতিটি ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের ডেকে নিয়ে হুমকি দিয়ে ৫০ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলছেন। শোক দিবসকে পুঁজি করে পাঁচ শতাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের কাছ থেকে কোটি টাকা চাঁদাবাজির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন তিনি। এরই মধ্যে ঢাকা চট্টগ্রাম সড়কের শিমরাইল মোড়ে বিশাল আকৃতির একটি প্যান্ডেল করা হয়েছে যেখানে শোক দিবসের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

জজ মিয়ার সহযোগিরা ট্রান্সপোর্ট ব্যবসায়ীদের জজ মিয়ার অফিসে ডেকে নিয়ে বলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান সাহেবের নির্দেশ বড় করে ১৫ আগষ্ট শোক দিবস অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হবে। আর এজন্য ৩৬৫ ডেক বিরিয়ানির আয়োজন করা হবে। এ আয়োজনে খরচ করা হবে উত্তোলিত অর্থ থেকে।

জজ মিয়া আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন শিমরাইল শাখার সভাপতি। ওই ট্রাকচালক ইউনিয়নে দীর্ঘদিন সভাপতি ছিলেন সাত খুন মামলার মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি নূর হোসেন। 

 

গত ৫ আগস্ট থেকে শিমরাইল ট্রাক টার্মিনালের পাশে বিভিন্ন ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের জজ মিয়ার সহযোগীরা ফোন করে তার অফিসে (অন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়ন কার্যালয়) ডেকে নিয়ে ভয়-ভীতি ও হুমকি-ধমকি দিয়ে শোক দিবসের নামে এ চাঁদা উত্তোলন করছে।

শিমরাইল এলাকায় প্রায় পাঁচ শতাধিক ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি রয়েছে। ব্যবসায়ীরা আদমজী ইপিজেডসহ শিল্পাঞ্চলের শিল্প কারখানা পন্য চট্টগ্রাম পোর্টসহ বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করে আসছে। 

নারায়ণগঞ্জ জেলা ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক সমিতির সভাপতি মোঃ আব্দুর রশিদ জানান, ৮ আগষ্ট দুপুরে জজ মিয়ার সাঙ্গপাঙ্গরা ফোন করে আন্তঃজেলা মালিক সমিতির অফিসে যেতে বলেন। আমি তার অফিসে না যাওয়ায় বিপুল সংখ্যক লোকজন নিয়ে আমার অফিসে জজ মিয়া যায়। তখন আমার অফিসের বাইরে ১০-১৫ জন ছিল। ৪-৫ জনের সাথে জজ মিয়া আমার অফিসে প্রবেশ করেই বলেন, এখানে ব্যবসা করবেন না চলে যাবেন। এখানে ব্যবসা করতে হলে আমি যেভাবে বলব, সেভাবে আপনাকে চলতে হবে। কাল লোকজন ফোন করে আপনাকে ডেকেছিল আপনি আমার অফিসে কেন যাননি। এ ঘটনার পর সমগ্র ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিকদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।

সাধারণ ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির কয়েকজন মালিকের সাথে কথা হলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা বলেন, গত নাসিক নির্বাচনে নূর হোসেনের অপর ছোট ভাই নুরুদ্দিন মিয়া কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পরপরই আন্তঃজেলা ট্রাক চালক ইউনিয়নের কার্যালয়ের অফিস নির্মান করেন জজ মিয়া। এসময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় চাঁদাবাজির আশঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদ প্রকাশ করা হলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তারা আরও জানান, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামীলীগের দুই শীর্ষ নেতার শেল্টার এবং স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা থাকার কারণে সন্ত্রাসী জজ মিয়া প্রকাশ্যে চাঁদা দাবি করার সাহস দেখাচ্ছে।

 

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবুর রহমান বলেন, আমার কাছে এখনও কেউ এমন অভিযোগ নিয়ে আসেনি। তবে আমি শুনেছি নুরুজ্জামান ট্রান্সপোর্ট এজেন্সির মালিকদের কাছ থেকে ২০ হাজার, ৫০ হাজার এমন টাকা চেয়েছে। এ বিষয়ে জানতে আমি কয়েকবার তাকে ফোন করলেও সে আমার ফোন রিসিভ করেনি।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি হাজী ইয়াসিন মিয়া বলেন, আমার কাছে এমন কোন অভিযোগ আসেনি। বিষয়টি আমি জানি না।

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মশিউর রহমান বলেন, কয়েক জায়গায় এমন চাঁদা দাবীর ঘটনা ঘটেছে। তবে কেউ টাকা দেয়নি। আমরাও বিষয়টি শুনেছি এবং তাৎক্ষণিকভাবে আমাদের একটি টিম সেখানে পাঠাই। তবে এ বিষয়ে আমাদের কাছে এখন পর্যন্ত কেউ কোন অভিযোগ জানায়নি।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার নূর হোসেনের ভাই জজ মিয়ার সাথে মুঠোফোনে ০১৬৩৪৪৪৪৪৪৪ যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
Close