শ্রীমঙ্গল উপজেলা
টমটম চালক আবুল খায়েরের ক্লুলেস হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন গ্রেফতার-১

অন্তর মিয়া, শ্রীমঙ্গল থানা প্রতিনিধি:
শ্রীমঙ্গলে নির্মমভাবে আবুল খায়ের খুনের ২৪ ঘন্টার মধ্যে এক আসামীকে আজ (বুধবার) গ্রেফতার করেছে শ্রীমঙ্গল থানার চৌকস পুলিশ টিম। ভিকটিম মৃত আবুল খায়ের (২৮) পেশায় টমটম চালক। আবুল খায়ের শ্রীমঙ্গল শহরতলীর রামনগর এলাকায় প্রবাসী আব্দুল হান্নানের বাসায় থাকতেন। গত চার মাস আগে আবুল খায়েরের বাবা স্ট্রোকে মারা যান। এরপর থেকে আবুল খায়েরের পরিবারের নেমে আসে দুঃখ দুর্দশা। পাঁচ বছরের এক মেয়ে, দশ মাসের এক ছেলে এবং মা-বোন নিয়ে আবুল খায়েরের পক্ষে সংসার চালানো কষ্টসাধ্য ছিল। তার পরিবারের এ দুরবস্থা দেখে প্রবাসী হান্নান সিরাজী আবুল খায়ের এর জীবিকা নির্বাহ করে পরিবার চালানোর জন্য এক মাস আগে একটি মিনি টমটম কিনে দেন।সে প্রবাসী হান্নান সিরাজী এর নিকট হতে একটি মিনি টমটম (মিশুক) ভাড়া নিয়ে বিগত দেড় মাস যাবত জীবিকা নির্বাহ করে আসছিলো । প্রতিদিনের ন্যায় গত ১৪/১০/২০২৪ খ্রিঃ সকাল আনুমানিক ০৯.০০ ঘটিকায় মিনি টমটম নিয়ে ভিকটিম বাসার ভিতর হতে ভাড়ায় চালানোর জন্য এলাকার উদ্দেশ্যে বাহির হয়। ঐ দিন সে দুপুর বেলা খাবারের জন্য বাড়ীতে না এসে সাধারণ দিনের ন্যায় গাড়ী ভাড়ায় চালাতে থাকে। ভিকটিমের ভাই মোঃ আবুল বাশার রাত আনুমানিক ০৮.০০/০৮.৩০ ঘটিকায় ভিকটিমকে দক্ষিণ মুসলিমবাগ জাকিরের চা দোকানের সামনে গাড়ী নিয়ে দাড়ানো অবস্থায় দেখিতে পায়। ভিকটিম রাতে বাসায় না আসায় ভিকটিমের বোন ইয়াছমিন ভিকটিম আবুল খায়েরকে একাধিকবার ফোন দিলে মোবাইল বন্ধ পায়। গত ১৫/১০/২০২৪ খ্রিঃ সকাল আনুমানিক ০৯.০০ ঘটিকায় শ্রীমঙ্গল থানাধীন ০৮নং কালীঘাট ইউপির অন্তর্গত কালীঘাট চা বাগানের ভিতর ১২নম্বর সেকশনের কাঁচা রাস্তার পাশে চা বাগানের সামান্য ভিতর লাশ পাওয়ার সংবাদ পাইয়া ভিকটিমের স্ত্রীসহ পরিবারের. লোকজন আসিয়া ভিকটিমের মৃতদেহ সনাক্ত করেন। অজ্ঞাতনামা আসামীগন ভিকটিমের হাতে, বুকে, মুখে, গলায় চাকু দিয়া একাধিক ঘাই মেরে রক্তাক্ত করে হত্যা করে পরে লাশ গুম করার জন্য উক্ত স্থানে ফেলে রাখে। ঘটনার পর পরই নৃশংস হত্যা কান্ডের সহিত জড়িত অজ্ঞাতনামা আসামীদের গ্রেফতারে শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশের একাধিক চৌকস টিম কাজ শুরু করে। মৌলভীবাজার জেলা পুলিশের অভিভাবক পুলিশ সুপার ও সহকারী পুলিশ সুপার শ্রীমঙ্গল সার্কেলের সার্বিক দিক নির্দেশনায় অফিসার ইনচার্জ শ্রীমঙ্গল থানা, জনাব মোঃ আমিনুল ইসলামের নেতৃত্বে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই(নিঃ)তৌকির আহমেদ তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আসামী ১।রুবেল আহমেদ সাগর জসিম (৩০)কে সনাক্ত করে তাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য গত ১৫/১০/২০২৪ খ্রিঃ বিকাল ১৬.৩০ ঘটিকার সময় থানায় নিয়ে এসে খুনের ঘটনার বিষয়ে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করেন। পরবর্তীতে ঘটনার বিষয়ে ভিকটিমের স্ত্রী বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়ের করলে আসামীকে আরও ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে ঘটনার কথা স্বীকারোক্তি নিলে জানায় যে, সে সহ তার সঙ্গীয় আরও ৩/৪ জন আসামী মিলে গত ১৪/১০/২০২৪ খ্রিঃ রাত্র আনুমানিক ০৯.০০ ঘটিকার সময় ভিকটিমকে মিনি টমটমসহ কালিঘাট চা বাগানে নিয়ে যায় এবং ভিকটিমের মিনি টমটম(মিশুক) নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে ভিকটিম আসামীদের বাঁধা দেওয়ায় সকল আসামীগন একত্রে ধারালো চাকু দিয়া ভিকটিমের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করতে থাকে।আসামীদের ধারালো চাকুর আঘাতে একপর্যায়ে রক্তক্ষরন হলে ভিকটিম মৃত্যু বরণ করেন।ভিকটিম মৃত্যু হলে আসামীগন ভিকটিমের অটোরিক্সা নিয়া চলে যায়। আসামীগন ভিকটিমের পরিচিত হওয়ায় এবং অটোরিক্সা ছিনতাই করার সময় ভিকটিম আসামীদের চিনতে পারায় আসামীগন ভিকটিমকে হত্যা করেছে বলে জানায়।উক্ত বিষয়ে শ্রীমঙ্গল থানা অফিসার ইনচার্জ জনাব আমিনুল ইসলাম সাহেবের সার্বিক সহায়তায় আসামীকে সাথে নিয়ে পুলিশের চৌকস টিম ১৬/১০/২০২৪ খ্রিঃ রাত ০৪:০০ ঘটিকার সময় আসামীর বসত ঘরে অভিযান করে। আসামীর সনাক্ত মতে ঘটনার সময় আসামীর পড়নে থাকা ১। একটি ধূসর রংয়ের কাপড়ের ফরমাল প্যান্ট, যার সামনের ডান অংশে রক্তের দাগ ছিলো ২। একটি বেগুনী রংয়ের গোলগলা গেঞ্জি, যার কলারের পিছনের অংশ ছেড়া উদ্ধার করে জব্দ করা হয়। এ বিষয়ে মামলার ঘটনায় জড়িত অপরাপর আসামীদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান পরিচালনা অব্যাহত আছে বলে জানা যায়।