অপরাধআইন ও অধিকারজাতীয়ঢাকা
পল্টনে বাসচাপা দিয়ে কৃষকের হত্যা, বাসচালককে গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩
রাজধানীর পল্টনে প্রতিযোগিতামূলকভাবে দুই বাসের রেষারেষিতে মো. জাহাঙ্গীর মোল্লা (৩৫) নামের একজন কৃষকের নির্মম মৃত্যুর ঘটনায় ঘাতক বাসচালক মো. আল-আমিনকে (৩২) গ্রেফতার করেছে র্যাব-৩। গ্রেফতার চালক আল আমিন ২০১২ সালে বলাকা বাসে ৪ বছর ধরে হেলপারের কাজে নিযুক্ত ছিল।
২০১৭ সাল থেকে লাইসেন্স ছাড়া মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক হিসেবে দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরিতে গাড়ি চালায়। র্যাব জানায়,গত ২ জুলাই সকালে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০) বাস নিয়ে রাজধানীর চিটাগাং রোড থেকে কামারপাড়ার উদ্দেশ্যে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলে আল আমিন। পরবর্তী স্টপেজে যে আগে পৌঁছাতে পারবে সে বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের তার বাসে নিতে পারবে, তাই পথিমধ্যে চালক গুলিস্তানে এসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকেন। এমতাবস্থায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক আল-আমিনের বাসটি অপর বাসকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে জাহাঙ্গীর মোল্লাকে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়।
সোমবার (৪ জুলাই) দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় নিহতের পরিবারের সদস্যরা সড়ক ও পরিবহন আইন ২০১৮ এর ১০৫ ধারায় পল্টন মডেল থানায় মামলা হয়। পল্টন মডেল থানাধীন বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ গেটের সামনে থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০) ঘাতক বাসটি জব্দ করা গেলেও ঘাতক গাড়িচালক পালিয়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে র্যাব ছায়া তদন্ত শুরু করে এবং জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে গোয়েন্দা নজরদারী বৃদ্ধি করে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-৩ এর আভিযানিক দল গতকাল রোববার রাতে মুন্সিগঞ্জ সদর থানা এলাকা থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের ঘাতক বাসচালক মো. আল-আমিনকে (৩২) গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতার আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে কর্মজীবনের শুরুতে গার্মেন্টস শ্রমিক হিসেবে পাঁচ বছর কাজ করেছে। ২০১২ সালে তার বড় ভাইয়ের মাধ্যমে বলাকা বাসে চার বছর ধরে হেলপারের কাজে নিযুক্ত ছিল।
২০১৭ সাল থেকে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক হিসেবে দৈনিক ৭০০-৮০০ টাকা মজুরিতে গাড়ি চালায়। গত শনিবার সকালে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের (ঢাকা মেট্রো-ব-১৪-৯৬৩০) বাস নিয়ে চিটাগাং রোড থেকে রাজধানীর কামারপাড়ার উদ্দেশ্যে চালিয়ে নিয়ে যাচ্ছিল। পরবর্তী স্টপেজে যে আগে পৌঁছাতে পারবে সে বাসের জন্য অপেক্ষারত যাত্রীদের তার বাসে নিতে পারবে, তাই পথিমধ্যে চালক গুলিস্তানে এসে বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালাতে থাকে। এমতাবস্থায় অসুস্থ প্রতিযোগিতার মধ্য দিয়ে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের চালক আল-আমিন কর্তৃক চালিত গাড়িটি অপর গাড়িটিকে ওভারটেক করার সময় নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে নিহত মো. জাহাঙ্গীর মোল্লাকে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়। এ ঘটনার পরপরই সে জনরোষের ভয়ে ঘটনাস্থল থেকে দ্রুত পালিয়ে যায়। আল আমিন অস্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। তার ড্রাইভিংয়ের উপর কোনো প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণ নেই। গাড়ির হেলপার হিসেবে চালকের কাছ থেকে সে ড্রাইভিং শিখেছে। ট্রাফিক নিয়মাবলী সম্পর্কে তার কোনো জ্ঞানও নেই। যাত্রী নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে চালক ড্রাইভিংয়ের প্রতি মনোযোগ হারিয়ে ফেলে, তখনই গাড়ি দুর্ঘটনায় পতিত হয় এবং নিরীহ পথচারীদের জীবন প্রদীপ নিভে যায়।
নিহতের আত্মীয়-স্বজনকে জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, বিদেশ যাত্রার জন্য জাহাঙ্গীর মোল্লা শ্যালকের মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য গত ১ জুলাই ভিকটিম ঢাকায় এসে চকবাজার তার ভাগিনার বাসায় ওঠেন। ঘটনার দিন ২ জুলাই মেডিকেল টেস্ট করানোর জন্য তারা আবদুল্লাহপুর যাওয়ার উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হন। ওইদিন সকালের দিকে নিহত তার শ্যালক, ভাগিনা ও ভায়রাকে নিয়ে গোলাপশাহ মাজার থেকে পায়ে হেঁটে ফকিরাপুল পানির ট্যাংকির সামনে যাওয়ার জন্য রাস্তা পার হচ্ছিলেন। একপর্যায়ে তার শ্যালক ও ভাগিনা রাস্তা পার হয়ে যান, তার ভায়রা রাস্তার অপর প্রান্তে আইল্যান্ডের উপরে ছিলেন এবং নিহত জাহাঙ্গীর তখন রাস্তার উপর ছিলেন। এসময় পথে মনজিল এক্সপ্রেস পরিবহনের দুইটি বাস প্রতিযোগিতামূলকভাবে দ্রুত গতিতে গাড়ি চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়লে একটি বাস ভিক্টিম জাহাঙ্গীর মোল্লাকে চাপা দিয়ে আইল্যান্ডের উপর উঠে যায়। এক প্রশ্নের জবাবে র্যাব-৩ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, যারা লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালায় তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।