চট্টগ্রাম বিভাগসারাদেশ
নোয়াখালীতে অন্ধ স্বামীকে হত্যার দায়ে স্ত্রীর মৃত্যুদণ্ড, শ্বশুর-শাশুড়ির যাবজ্জীবন কারাদন্ড
নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ উপজেলার নরোত্তমপুর ইউনিয়নে দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শহিদ উল্যা হত্যার ঘটনায় তার স্ত্রী বিবি কুলসুমকে মৃত্যুদণ্ড, শ্বশুর আবুল হোসেন ও শাশুড়ি লিলি বেগমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সাথে আবুল হোসেন ও লিলি বেগমকে ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকালে নোয়াখালী দায়রা জজ আদালতের বিজ্ঞ বিচারক সালেহ উদ্দিন আহমদ এ রায় প্রদান করেন। দণ্ডপ্রাপ্তরা হচ্ছেন, নিহত শহিদের স্ত্রী বিবি কুলসুম, শ্বশুর শহিদ উল্যা ও শাশুড়ি লিলি বেগম। তারা সবাই বেগমগঞ্জ উপজেলার মধ্য নরোত্তমপুর গ্রামের ওয়াহেদ আলী সর্দার বাড়ির বাসিন্দা। আদালত সূত্রে জানা যায়, শহিদ উল্যা ১৩ বছর বয়সে দৃষ্টি শক্তি হারিয়ে অন্ধ হয়ে যান। সবকিছু জেনে বিবি কুলসুম শহিদকে বিয়ে করেন। শহিদের বাবা-মা ঢাকায় থাকতেন। তাদের ঢাকায় ৫ তলা দালান ছিল। নিহতের প্রবাসী ভাইরা প্রায় সময় তার জন্য টাকা পাঠাতো। কুলসুম ও তার মা-বাবা মিলে ওই টাকা এবং ঢাকার ফ্ল্যাটবাড়ি আত্মসাতের জন্যই শহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করে। এর সূত্র ধরে গত ২০১৮ সালের ৩ মে শহিদ উল্যার স্ত্রী কুলসুম তাকে নাস্তা করার কথা বলে ঘরে ডেকে এনে তার গায়ে গরম তেল ঢেলে দিয়ে পালিয়ে যায়।
তার আগে, কৌশলে বাড়ির সকল মূল্যবান আসবাবপত্র ও সন্তানদের তার বাবার বাড়িতে রেখে আসে কুলসুম। পরে শহিদের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, পরে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিয়ে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ১২ মে মারা যান শহিদ উল্যা।
শহিদের বাবা-মা বৃদ্ধ হওয়ায় তারা ঢাকায় থাকতেন। তার ভাইরাও থাকতেন দেশের বাহিরে। তাই এ ঘটনায় শহিদের ভগ্নীপতি সাহেব উল্যাহ বাদি হয়ে নিহতের স্ত্রী বিবি কুলসুম, শ্বশুর আবুল হোসেন ও শাশুড়ি লিলি বেগমকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। দীর্ঘ শুনানি শেষে মঙ্গলবার আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে রায় প্রদান করেন। রাষ্ট্রপক্ষে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. গুলজার আহমেদ জুয়েল এবং আসামি পক্ষে অ্যাড. মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, অ্যাড. আবদুর রহমান ও অ্যাড. স্বপন চন্দ্র পাল মামলা পরিচালনা করেন।
অ্যাড. গুলজার আহমেদ জুয়েল জানান, দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত মঙ্গলবার মামলার প্রধান আসামি ও নিহতের স্ত্রী বিবি কুলসুম বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ড এবং শ্বশুর ও শাশুড়ির যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দেন। রায়ের সময় আসামি আবুল হোসেন আদালতে উপস্থিত ছিলেন। তবে মামলার প্রধান আসামি বিবি কুলসুম ও শাশুড়ি লিলি বেগম পলাতক রয়েছে।